ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন

প্রকাশিত: ১০:০০, ২৮ জুলাই ২০১৯

 খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ, যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে জানিয়ে দ্রুত তার মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শনিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। অপর এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোসেন বলেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশে খালেদা জিয়াকে বন্দী রাখা হয়েছে। আরেক অনুষ্ঠানে স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। খালেদা জিয়া এখন একদমই হাঁটতে পারছেন না জানিয়ে রিজভী বলেন, চরম অবনতি হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ শারীরিক অবস্থা নিয়ে তার পরিবার, আমরা ও দেশবাসী সবাই উদ্বিগ্ন। তাকে জেলে রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। তাই তাকে দ্রুত মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার সুযোগ দেয়ার জন্য সরকারের কাছে জোরালো দাবি জানাচ্ছি। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, অনেক হয়েছে, এবার থামুন। প্রতিহিংসাপরায়ণতার রাজনীতি বন্ধ করুন। রিজভী বলেন, গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া সাজানো মামলার রায়ে কারাগারে যাওয়ার সময় সুস্থ-সবল অবস্থায় হেঁটে গেছেন। এখন তিনি হুইলচেয়ার ছাড়া চলাফেরা করতে পারছেন না। ইনসুলিন নেয়ার পরও তার ডায়াবেটিস কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এটা অব্যাহত থাকলে যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। রিজভী অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়া জেলে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে। রিজভী বলেন, মরণঘাতী ডেঙ্গু জ্বর মহামারী আকারে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু সরকার ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ ধামাচাপা দিতে সরকারী যন্ত্রকে ব্যবহার করছে যথেচ্ছভাবে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা এরই মধ্যে সাড়ে তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকার হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু রোগীর ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। কোন হাসপাতালেই বেড খালি নেই। কয়েকটি বেসরকারী হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগী ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছে। সরকারী হাসপাতাল থেকেও অনেক রোগীকে ফেরত দেয়া হচ্ছে। অথচ স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে সারা দেশে নাকি মাত্র ৯ হাজার ৬৫৭ জন মশাবাহিত রোগে অসুস্থ হয়েছে। রিজভী বলেন, মশা নিধনের কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)-এর গবেষণায় যে ওষুধ অকার্যকর বলে প্রমাণিত সেগুলো দিয়েই চলছে ঢাকার দুই সিটির মশক নিধন কার্যক্রম। আর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থ মন্ত্রী-মেয়ররা হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রীর মতো প্রলাপ বকছেন। তথ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, গলাকাটার গুজবে জড়িত সন্দেহে যাদেরকে আটক করা হয়েছে তার ৭০ ভাগ বিএনপির নেতাকর্মী। আর পুলিশ বলছে, গুজবটি দুবাই থেকে ছড়ানো হচ্ছে, তারা বেশকিছু ফেসবুক আইডি বন্ধ করে দিয়েছে। তাহলে বিএনপি নেতাকর্মীরা কিভাবে এর সঙ্গে জড়িত হলো। এরা জলজ্যান্ত মিথ্যা কথা বলছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা নাজমুল হক নান্নু, সহদফতর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ। রাজনৈতিক উদ্দেশে খালেদাকে বন্দী রাখা হয়েছে- ড. মোশাররফ ॥ রাজনৈতিক উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বন্দী রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে জিয়া পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ড. মোশাররফ বলেন, খালেদা জিয়া দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন করেছেন। তাই প্রধানমন্ত্রী ভাল করে জানেন, যেদিন খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে আসবেন সেদিন দেশে আওয়ামী লীগের অস্থিত্ব থাকবে না। খালেদা জিয়ার মুক্তি বিএনপির এক নম্বর টার্গেট মন্তব্য করে তিনি বলেন, তবে এই সরকার খালেদা জিয়াকে এমনিতেই ছেড়ে দেবে না। আন্দোলন করেই আমাদের খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। বাংলাদেশকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে অভিযোগ করে ড. মোশাররফ বলেন, ভূরাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ একটি স্পর্শকাতর এলাকায় অবস্থিত। তাই এ দেশের প্রতি অনেক দেশের নজর, কুনজর বা সুনজর আছে। এখানে অনেক দেশ জড়িত। তবে ষড়যন্ত্রের পথ সৃষ্টি করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। ড. মোশাররফ বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে প্রিয়া সাহার বক্তব্যের পেছনেও ষড়যন্ত্র আছে। এই ষড়যন্ত্রের পেছনে সরকারেরও হাত থাকতে পারে। ড. মোশাররফ বলেন, রোহিঙ্গা একটা বিশাল সমস্যা। এটা অতীতে জিয়াউর রহমানের সময়ও হয়েছিল। তখন নিজের সুচিন্তিত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও বৈদেশিক নীতিতে জিয়াউর রহমান যুদ্ধ ছাড়াই সমঝোতা করে তখন যে রোহিঙ্গারা এসেছিল, তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু আজকের সরকার কোথাও কোন পাত্তা পাচ্ছে না। আমি বলতে চাই , এ বিষয়ে সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী ব্যর্থ হয়েছেন। জিয়া পরিষদের সভাপতি কবির মুরাদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডাঃ আব্দুল কুদ্দুস, মহাসচিব প্রফেসর ড. মোঃ এমতাজ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। খালেদাকে তিলে তিলে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে- সেলিমা ॥ কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ‘খালেদা জিয়া মুক্তি আইনজীবী আন্দোলন’ নামক একটি সংগঠন আয়োজিত এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন। সেলিমা রহমান বলেন, খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে। তাকে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তাই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আন্দোলনের জন্য সকলকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে, এ সরকারকে ক্ষমতা থেকে টেনেহিঁঁচড়ে নামাতে হবে। সেলিমা রহমান বলেন, বর্তমান সরকার যা খুশি তাই করছে অভিযোগ করে সেলিমা রহমান বলেন, তাদের কোন জবাবদিহিতা নেই। জবাবদিহিতা থাকবেই বা কেন? তারা তো জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেনি। ন্যায়বিচারের জন্য আদালত ছেড়ে যখন আইনজীবীদের রাস্তায় নেমে আসতে হয় তখন একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। আদালতে যদি সঠিকভাবে বিচার করা হতো তাহলে আইনজীবীদের রাস্তায় নামতে হতো না। আজকে আদালত স্বাধীন না হওয়ায় সেখানে সঠিক বিচার হয়না বলেই আইনজীবীরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে। মানববন্ধনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঈদের পরে ঢাকায় আইনজীবীদের মহাসমাবেশ করা হবে। তিনি বলেন, আজকে দেশের বিচার বিভাগ সরকারের দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হয়। তবে বিচার বিভাগ তার স্বাধীনতা হারিয়েছে বহু আগেই। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, দলের নেতা ইকবাল হাসান, আবেদ রাজা প্রমুখ। বিএনপি নেতাদের নামে নামে নতুন নতুন মামলা হয় -ফখরুল ॥ দেশব্যাপী প্রতিদিনই বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের নামে নতুন নতুন মামলা ও গ্রেফতার করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার এক বিবৃতিতে তিনি এ অভিযোগ করেন। বিবৃতিতে ফখরুল বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর হালিশহর থানা বিএনপির সভাপতি মোশাররফ হোসেন ডিপটি সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বলেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রািতবাদ জানিয়ে অবিলম্বে মোশাররফ হোসেন ডিপটির মুক্তি দাবি করছি।
×