ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিটিআরসি সিদ্ধান্ত না বদলালে আদালতে যাবে গ্রামীণফোন

প্রকাশিত: ১০:২৫, ৮ জুলাই ২০১৯

  বিটিআরসি সিদ্ধান্ত না বদলালে আদালতে যাবে গ্রামীণফোন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অমীমাংসিত পাওনা আদায়ে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ সীমিত করা বেআইনী ও অযৌক্তিক বলেছে গ্রামীণফোন। ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেয়ার বিটিআরসির সিদ্ধান্তের কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিটিআরসি’র এ সিদ্ধান্ত গ্রাহক, স্থানীয় ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও আইআইজি অপারেটরদের জন্য বাড়তি ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রামীণফোন প্রস্তাব করেছে, সালিশের (আরবিট্রেশন) মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য। যদি বিটিআরসি তা না করে তাহলে তারা বিটিআরসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাবে। রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল ফোলি এ কথা বলেছেন। এদিকে বিটিআরসি তাদের সিদ্ধান্তে অনড় অবস্থানে রয়েছে। বিটিআরসির চেয়ারম্যান জহুরুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, আইন অনুযায়ী এ বিষয়ে সালিশের (আরবিট্রেশন) কোন সুযোগ নেই। পাওনা আদায় না হওয়া পর্যন্ত ব্যান্ডইউথ সীমিতই থাকবে। যে দেশে তারা ব্যবসা করছেন সেই দেশের আইন না মানলে কাউকে বাড়তি সুযোগ দেয়া হবে না। গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং আরেক মোবাইল ফোন অপারেটর রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে তাদের। এটা সরকারের টাকা। সরকারকে এই টাকা পরিশোধ করতে হবে। কয়েক দফা সময় দেয়ার পরও তারা টাকা পরিশোধ করেনি। এ কারণে গত ৪ জুলাই গ্রামীণফোনের ব্যান্ডইউথ ক্যাপাসিটি ৩০ শতাংশ এবং রবির ১৫ শতাংশ সীমিত করতে ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বিটিআরসি। গ্রামীণফোন বিটিআরসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হোটেল সোনারগাঁয়ে এক সংবাদ করেছে। সংবাদ সম্মেলনে মাইকেল ফোলি ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ৩০ শতাংশ কমিয়ে দিতে সম্প্রতি আইআইজি অপারেটরদের বিটিআরসির নির্দেশের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি। বিটিআরসির নির্দেশে সরাসরি গ্রামীণফোনকে দেয়া না হলেও বিটিআরসি সরাসরি বলছে, অমীমাংসিত অডিট পাওনা আদায় না হওয়া পর্যন্ত ব্যান্ডইউথ সীমিত থাকবে। বিটিআরসির নির্দেশটি এমনভাবে করা হয়েছে যার ফলে নেটওয়ার্কের অধীনে থাকা গ্রাহকদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মূলত গ্রামীণফোনের ওপর চাপ তৈরি করার জন্যই বিটিআরসি এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ নির্দেশের ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে স্থানীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও সংশ্লিষ্ট আইআইজি অপারেটরদের ওপর। কারণ এই নির্দেশের ফলে রাজস্ব আয় কমার পাশাপাশি ব্যবসায়িক সুযোগ হারাবে প্রতিষ্ঠানগুলো, যদিও পুরো বিষয়টির ওপর তাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণফোনের সিইও বলেন, অমীমাংসিত অডিট পাওনা আদায়ের জন্য চাপ তৈরি করতে নিয়ন্ত্রণ কমিশন কর্তৃক আইআইজি অপারেটরদের দেয়া এমন নির্দেশকে অনাকাক্সিক্ষত বলে আখ্যায়িত করেছেন। অপারেটরটি বিশ্বাস করে এমন পদক্ষেপ সম্পূর্ণ বেআইনী। এমন অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা আদালতের শরণাপন্ন হবেন। সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল ফোলি বলেন, এ নির্দেশ বাংলাদেশের মানুষ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে। আমরা বিটিআরসি’কে এ নির্দেশ তুলে নেয়ার চিঠি দিয়ে অনুরোধ করছি। একই সঙ্গে সালিশ আইন ২০০১’র অধীনে অমীমাংসিত অডিট দাবির নিষ্পত্তিতে সহযোগিতার অনুরোধ করছি। এর আগে অমীমাংসিত অডিট দাবির গঠনমূলক নিষ্পত্তির জন্য গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে বিটিআরসিকে একটি সালিশ নোটিস পাঠানো হয়েছে। নোটিসের বিষয়ে এখন পর্যন্ত নীরব ভূমিকা পালন করছে বিটিআরসি। গ্রামীণফোন প্রতিনিয়তই বলে আসছে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক জরুরী যাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হবে অভিন্ন। এখানে স্পষ্ট নীতিমালা ও কাঠামো প্রয়োজন যা হবে নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং বাংলাদেশের আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। গ্রামীণফোন সবসময়ই আইন মেনে চলে (কমপ্লায়েন্ট) উল্লেখ করে মাইকেল ফোলি আরও বলেন, ২০১৫ সাল থেকেই জিপি দেশের সবচেয়ে বড় কর্পোরেট করদাতা হিসেবে স্বীকৃত। এদিকে সংবাদ সম্মেলনের আগেই গ্রামীনফোনের সব গ্রাহককে ইন্টারনেট সুবিধার কথা জানিয়ে এসএমএস পাঠানো হয়েছে। এসএমএসয়ে গ্রামীণফোন লিখেছে, ‘গ্রামীণফোনের ব্যান্ডউইথ কমাতে সরবরাহকারীদের নির্দেশ দিয়েছে বিটিআরসি। এতে ইন্টারনেট সেবা কিছুটা বিঘ্নিত হতে পারে। এ সমস্যার জন্য আমরা দুঃখিত। সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করতে বিটিআরসিকে অনুরোধ করেছি’। বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, গ্রামীণফোন ও রবির কাছে যে টাকা সরকারের পাওনা রয়েছে তা পরিশোধ করেই ব্যান্ডউইথ ফেরত নিতে হবে। সরকারের আইন না মেনে ব্যবসা করে দেশের টাকা বিদেশ চলে যাবে তা হতে দেয়া হবে। বিটিআরসির বক্তব্য স্পষ্ট সরকারের টাকা আগে পরিশোধ করতে হবে। বিটিআরসির চেয়ারম্যান রবিবার এমন ঘোষণা দিয়েছেন।
×