ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্রে ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিল জাইকা

প্রকাশিত: ১০:১৪, ১ জুলাই ২০১৯

  মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্রে ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিল জাইকা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুতকেন্দ্রে আরও প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা (১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণ দিল জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। রবিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বিষয়ে একটি ঋণচুক্তি সই হয়েছে। ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকার এই প্রকল্পে মোট ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা পর্যায়ক্রমিক ঋণ সহায়তা হিসেবে দেবে জাপান। চুক্তিতে সই করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদ ও জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) চিফ রিপ্রেজেনটেটিভ হিতোয়েশি হিরাতা। বিনিময় নোট স্বাক্ষর করেন মনোয়ার আহমেদ ও জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোয়েশি ইজুমি। দেশের অন্যতম ব্যয়বহুল প্রকল্প ‘মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল-ফিয়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট (ভি)’-এ ওডিএ লোন প্যাকেজের আওতায় বাংলাদেশকে সহজ শর্তে এ ঋণ দিল জাইকা। এ ঋণের বার্ষিক সুদের হার নির্মাণকাজের জন্য দশমিক ৯ শতাংশ এবং পরামর্শক সেবার জন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। ১০ বছর গ্রেস দিয়ে ৩০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে এ ঋণ শোধ করতে হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে জানানো হয়, মহেশখালীর মাতারবাড়িতে ১২০০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল-ফায়ার্ড পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন কাজ চলছে। প্রকল্পটি ২০১৪ সালের আগস্টে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ প্রকল্পে মোট খরচ হবে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকা দেবে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি তিন লাখ টাকা। পর্যায়ক্রমে এ টাকা দেবে জাইকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ‘কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড’ (সিপিজিসিবিএল)। দু’টি ইউনিট থেকে ৬০০ করে মোট ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হবে মাতারবাড়ি কেন্দ্রে। বিদ্যুতকেন্দ্রটি সম্পূর্ণভাবে আমদানিকৃত কয়লার ওপর নির্ভরশীল। প্রকল্পের আওতায় ৪ হাজার ৭০০ কেজি স্ট্যান্ডার্ডের প্রয়োজনীয় পরিমাণ কয়লা আমদানি করা হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পে প্রতি টন কয়লার দাম ১০ হাজার ২৫৫ টাকা ৫০ পয়সা ধরা হয়েছে। দু’টি বিদ্যুতকেন্দ্রে কুলিং এবং স্টিম জেনারেশনের জন্য সমুদ্রের সারফেস ওয়াটার ব্যবহার করা হবে। জাইকার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার প্রাথমিক কথা হয় ২০২০ সালে। এখন নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। অনুষ্ঠানে মনোয়ার আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জাপান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিদ্যুত উৎপাদন ও কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় দুইটি বিষয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে প্রকল্পগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ মনিটরিংয়ের কারণে জাপানি প্রকল্পগুলো নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শেষ হবে বলে জানান মনোয়ার আহমেদ। হিরোয়েশি ইজুমি বলেন, আধুনিক বাংলাদেশ গঠনে প্রকল্পগুলো ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ এখন ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। দেশটির অবকাঠামো ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সহায়তা দিতে পেরে জাপান গর্বিত। বাংলাদেশের প্রতি আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। হিতোয়েশি হিরাতা বলেন, মাতারবাড়ি এলাকায় বিদ্যুত শিল্প গড়ে উঠছে। সেগুলোতে সহায়তা দিচ্ছে জাইকা। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে একদিকে যেমন বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ হবে, অন্যদিকে দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠবে। মাতারবাড়ি প্রকল্পের পরিচালক এন এম ওবায়দুল্লা জানান, চলতি জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ শতাংশ। তবে মে মাস পর্যন্ত প্রকল্পের ১৯ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। ইতোপূর্বে ৩৫তম, ৩৭তম, ৩৮তম ও ৩৯তম ইয়েন লোন প্যাকেজের আওতায় যথাক্রমে ৪১ হাজার ৪৯৮ মিলিয়ন, ৩৭ হাজার ৮২১ মিলিয়ন ১০ হাজার ৭৪৫ মিলিয়ন ও ৬৭ হাজার ৩১১ মিলিয়ন ইয়েনের ঋণচুক্তি সই হয়েছে। বর্তমান প্যাকেজসহ প্রকল্পের জন্য মোট ৩ লাখ ৫০২ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েনের ঋণচুক্তি হয়েছে। এছাড়াও আরও দু’টি প্রকল্পের আলাদা আলাদা ঋণ চুক্তি সই হয়েছে। এর মধ্যে ‘দ্য প্রজেক্ট ফর দ্য ডেনসিফিকেশন অব গ্লোবাল নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম কন্টিনিয়াসলি অপারেটিং রিফারেন্স স্টেশন নেটওয়ার্ক এ্যান্ড দ্য মর্ডানাইজেশন অব টাইডাল স্টেশনস ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় ৯৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকার ঋণ চুক্তি সই হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে নির্ভুল জরিপ এবং ম্যাপিংয়ের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করা হবে। প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০১৯ থেকে ডিসেম্বর ২০২০ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। আর ‘দ্য প্রজেক্ট ফর হিউম্যান রিসোর্স ডেভলপমেন্ট স্কলারশিপ’ প্রকল্পের আওতায় হয়েছে ৮৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকার ঋণ চুক্তি। প্রকল্পটি ২০০১ সালে শুরু হয়েছে, চলবে ২০২০ সাল পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় বিসিএস ক্যাডার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের জাপানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বৎসর মেয়াদী মাস্টার্স কোর্সের জন্য বৃত্তি দেয়া হবে। এ পর্যন্ত ২৯৩ জন সরকারী কর্মকর্তা জাপানে বিভিন্ন কোর্সে মাস্টার্স প্রোগ্রাম সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ৬০ জন অধ্যায়নরত এবং ৩০ জন কর্মকর্তা সর্বশেষ ব্যাচে জাপানে অধ্যায়নের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। সব মিলিয়ে তিনটি প্রকল্পে জাইকার সঙ্গে মোট ১১ হাজার ১৭৮ কোটি ৯ লাখ টাকার ঋণ চুক্তি সই হয়েছে। চুক্তি অনুষ্ঠানে বলা হয়েছে, দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী দেশ জাপান। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত জাপান সরকার বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য সহায়তা দিয়েছে। চলতি অর্থবছরে জাপান সরকার ৪০তম ওডিএ লোন প্যাকেজভুক্ত পাঁচ প্রকল্পের জন্য মোট ২৭৫ বিলিয়ন ৭৮৬ মিলিয়ন ইয়েন (আনুমানিক ২১ হাজার ২০০ কোটি টাকা) ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পাঁচ প্রকল্পের মধ্যে মাতারবাড়ি পোর্ট ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট, ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট (মেট্রোরেল), ফরেইন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোমোশন প্রজেক্ট ও এনার্জি এফিশিয়েন্সি এ্যান্ড কনভারশন প্রোমোশন ফিন্যান্সিং এই চারটি প্রকল্পের জন্য মোট ১৩২ বিলিয়ন ৬৫৯ মিলিয়ন ইয়েন ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ।
×