ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

গ্যাসের দাম বাড়ল ॥ আজ থেকে কার্যকর

প্রকাশিত: ১০:০২, ১ জুলাই ২০১৯

 গ্যাসের দাম বাড়ল ॥ আজ থেকে কার্যকর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ঘাটতি মেটাতে ৩২ দশমিক ৮ ভাগ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। রবিবার বিকেলে কাওরান বাজারে কমিশন কার্যালয়ে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হয়। আজ অর্থবছরের প্রথম দিন থেকেই গ্যাসের বাড়তি দর গুনতে হবে। এলএনজি আমদানির ফলে জ্বালানি আমদানি খাতে মোট ১৮ হাজার ২৭০ কোটি টাকার ঘাটতি তৈরি হবে। এই ঘাটতি মেটাতে ভোক্তার পকেট থেকে ১০ হাজার ৫৮০ কোাট টাকা তোলা হবে। অন্যদিকে সরকার সাত হাজার ৬৯০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেবে। এবার ক্ষুদ্র এবং কুটিরশিল্প ছাড়া অন্য সব গ্রাহক শ্রেণীর জন্য গ্যাসের দাম বাড়বে। বাড়তি চাপ সৃষ্টি হবে এই বিবেচনায় এর আগে বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাসের দাম বাড়ানো হতো না। এবার সেখানেও হাত দিয়েছে কমিশন। এবার বিদ্যুত উৎপাদনে ৪১ ভাগ গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। যদিও কমিশন মনে করছে বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাসের দাম বাড়লেও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রয়োজন নাও হতে পারে। প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বৃদ্ধির শুনানিতে কোম্পানিগুলোর তরফ থেকে বলা হয়, তারা গ্যাস বিক্রি করে লাভ করছে। তবে এলএনজি ক্রয়ে বাড়তি দর দিতে হলে তারা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে। এই ঘাটতি মেটাতে হলে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। ভোক্তা পর্যায়ে ১০২ ভাগ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছিল কমিশন। দাম বৃদ্ধির ওই শুনানিতে প্রতিদিন ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ বিবেচনায় দাম বৃদ্ধির সুপারিশ করে কমিশন গঠিত মূল্যায়ন কমিটি। তবে শেষ পর্যন্ত কমিশন প্রতিদিন গড়ে ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি বিবেচনা করে এই দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিল। দেশে এখন এক্সিলারেট এনার্জি এবং সামিট এলএনজির দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে। প্রতিদিন ওই টার্মিনাল দুটি এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তর করতে পারে। তবে সারা বছরের গড় করলে কমিশন মনে করছে ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুটই সরবরাহ থাকবে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় এলএনজি আমদানির জন্য ১৮ হাজার ২৭০ কোটি টাকার ঘাটতি তৈরি হবে। এই ঘাটতি মেটাতে ভোক্তার পকেট থেকে ১০ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা তোলা হবে। অন্যদিকে সরকার সাত হাজার ৬৯০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেবে। সংবাদ সম্মেলনে জাননো হয়, সরাসারি ভোক্তার কাছ থেকে দাম বাড়িয়ে আট হাজার ১৬০ কোটি টাকা দাম বৃদ্ধি করে তোলা হবে। অন্যদিকে বাকি দুই হাজার ৪২০ কোটি টাকা জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে সংস্থান করা হবে। গ্যাসের বিলের সঙ্গে ভোক্তা জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল এবং গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের অর্থ প্রদান করে। এর মধ্যে জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিলের অর্থ সরকার এলএনজি আমদানিতে বিনিয়োগ করছে। এবার বাজেটে সাত হাজার ৬৯০ কোটি টাকা এলএনজি আমদানিতে ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। যদিও এলএনজি আমদানি পর্যায়ে ১৫ ভাগ ভ্যাট এবং দুই ভাগ অগ্রিম পরিশোধযোগ্য উৎসে কর রয়েছে। জ্বালনি বিভাগ এলএনজি আমদানির ওপর থেকে এসব কর প্রত্যাহার করতে বললেও অর্থ বিভাগ তা আমলে নেয়নি। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম জানান, ভোক্তার জন্য সুখবর এতটুকুই তারা আগে গ্যাস পেত না এখন তারা গ্যাস পাবে। তবে শিল্প গ্রাহক দাম দিলেও সঠিক গ্যাস পাচ্ছেন না এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান বলেন, আমরা এজন্য মিনিমাম চার্জ তুলে দিচ্ছি। একই সঙ্গে সব শিল্প গ্রাহক ইভিসি মিটার যেন পায় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সাধারণত জ্বালানির দাম বৃদ্ধিতে বিদ্যুতের দামও বৃদ্ধি পায়। দেশের এখন ৫৭ দশমিক ৪৩ ভাগ বিদ্যুত গ্যাসে উৎপাদন হয়। গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। তবে বিইআরসি মনে করছে বেশি পরিমাণ গ্যাস পেলে পিডিবি গ্যাস চালিত কেন্দ্রগুলো থেকে বেশি বিদ্যুত উৎপাদন করবে। অন্যদিকে তখন তরল জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদন কমে যাবে। সারা বছরের গড় হিসেব করলে এতে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাড়বে না। জানতে চাইলে কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, এখানে তারা সমন্বয় করে নিলে আমাদের আর দাম বৃদ্ধির প্রয়োজন নাও হতে পারে। তবে তারা যদি মূল্য সমন্বয়ের প্রস্তাব দেয় তাহলে কমিশন সেই আবেদন বিবেচনা করবে। প্রসঙ্গত দেশের মোট বিদ্যুত কেন্দ্রর ৩২ দশমিক ১২ ভাগ তেল চালিত। দেশে তেল চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রন নীট উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে পাঁচ হাজার ৭১৪ মেগাওয়াট অন্যদিকে গ্যাস চালিত কেন্দ্রর উৎপাদন ক্ষমতা ১০ হাজার ২১২ মেগাওয়াট। সর্বশেষ হিসেব বলছে দেশে মোট বিদ্যুত কেন্দ্রর উৎপাদন ক্ষমতা ১৭ হাজার ৭৮৬ মেগাওয়াট (আমাদানি এবং ক্যাপটিভ বিদ্যুত কেন্দ্র ছাড়া) কমিশন কতদিনের জন্য দাম বৃদ্ধি করছে বা কতদিনের মধ্যে আর দাম বাড়বে না এমন ঘোষণা দেয়া সম্ভব নয় জানিয়ে কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, আমরা সবশেষ ২০১৭ সালে দাম বৃদ্ধি করেছি। এখন ২০১৯ সালে দাম বৃদ্ধি করছি। আর কমিশনের আইনগত কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কমিশন চাইলেই দাম বাড়াতে কমাতে পারে না। কমিশনে এরপর কোন পরিস্থিতিতে দাম বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে বিতরণ কোম্পানিগুলো যখন আসবে তখনই দাম বৃদ্ধি করা হবে। কমিশন বলছে, শুধুমাত্র ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বাড়ছে না। তাদের প্রতিঘনমিটার গ্যাসের দাম ১৭ দশমিক ৪ টাকাই থাকছে। এখন যে ন্যূনতম চার্জ রয়েছে তা প্রত্যাহার করেছে কমিশন। আদেশে কমিশন ভারছে আবাসিক বাদে অন্য গ্রাহকদের ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটার মাসিক অনুমোদিত লোডের বিপরীতে শূন্য দশমিক ১০ টাকা হারে ডিমান্ড চার্জ আরোপ করেছে কমিশন। সিএনজির দামের ক্ষেত্রে যে দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে তার মধ্যে ফিড গ্যাসের মূল্যহার ৩৫ টাকা এবং অপারেটর মার্জিন ৮ টাকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে কমিশন জানায়। দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়ার সময় কমিশনের অপর তিন সদস্য রহমান মুরশেদ, মাহমুদউল হক ভূইয়া এবং মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তবে দেশের বাইরে থাকায় কমিশনের সদস্য (গ্যাস) আব্দুল আজিজ খান উপস্থিত ছিলেন না।
×