ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থ মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হচ্ছে বিদ্যুত বিভাগ

প্রকাশিত: ১০:২৫, ২৯ জুন ২০১৯

 অর্থ মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হচ্ছে বিদ্যুত বিভাগ

রশিদ মামুন ॥ সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভার কাছ থেকে ২৩৭ কোটি টাকা বকেয়া বিদ্যুত বিল আদায়ে ব্যর্থ হয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হচ্ছে বিদ্যুত বিভাগ। বিপুল পরিমাণ অর্থ বকেয়া থাকায় বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে শীঘ্রই চিঠি দেয়া হবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র বলছে, চাইলেও সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ হবে বিবেচনা করে সিটি কর্পোরেশন এবং পৌর এলাকায় বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয় না। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছন্ন করে দিয়েও বিল আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই সাধারণ জনগণের অসুবিধা হবে বিবেচনা করে আবার সেই সংযোগ জুড়ে দেয়া হয়। এতে বকেয়া বিল আর আদায় হয় না। বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুত বিল আদায়ে প্রত্যেকটি কোম্পানিতে লক্ষ্য বেঁধে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারী প্রতিষ্ঠানই বিদ্যুত বিল সময়মতো পরিশোধ করে না। এক্ষেত্রে চাপ দেয়ার পাশাপাশি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক বার বার অনুরোধ করার পরও বিল আদায় হয় না। তাই শেষমেশ অর্থমন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পিডিবির দেয়া এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে দেশের চারটি সিটি কর্পোরেশন এবং ৫১টি পৌরসভার কাছে এই বিল বকেয়া রয়েছে। মোট বকেয়া বিলের পরিমাণ ২৩৭ কোটি ৫৬ লাখ ৩১ হাজার ২৬৭ টাকা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় কোন একজন মেয়র তার মেয়াদ অতিক্রম করার শেষে কিছু বিল বকেয়া রেখে যান। নতুন মেয়র দায়িত্ব নিয়ে আর আগের মেয়রের বকেয়া বিলের দায় নিতে চান না। এতে করে ওই বিল বকেয়াই থেকে যায়। সিটি কর্পোরেশন এবং পৌর এলাকায় রাস্তার বাতি জ্বালতে এই বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। ফলে চাইলেই যখন তখন বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যায় না। আবার বিল না দিলে অনন্তকাল বাকিতেও বিদ্যুত দেয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) একক ক্রেতা হিসেবে সব বিদ্যুত কেন্দ্রের কাছ থেকে বিদ্যুত কিনে থাকে। আবার বাল্ক বিক্রেতা হিসেবে পিডিবিই সব বিতরণকারীর কাছে বিক্রি করে থাকে। এখন কোন কোন বড় ক্রেতা বিদ্যুত বিল পরিশোধ না করলেও পিডিবিকে বিদ্যুত ক্রয়ের অর্থ সময় মতো পরিশোধ করতে হয়। যাতে পিডিবির ওপর আর্থিক চাপ বাড়ে। পিডিবির একজন কর্মকর্তা জানান, প্রতি বছর যখন বাজেট দেয়া হয় তখন আলাদা করে বিদ্যুত বিলের জন্য বরাদ্দ থাকে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভা সেই অর্থ বিদ্যুত বিল দেয়ার বদলে অন্যখাতে খরচ করে ফেলে। বারবার তাদের কাছে পাওনা চেয়ে দেনদরবার করলেও বিল পরিশোধ করে না। বিদ্যুত বিভাগ মনে করছে অর্থমন্ত্রণালয় যে বাৎসরিক বাজেট প্রণয়ন করে সেখান থেকে বিদ্যুত বিলের অর্থ পিডিবিকে পরিশোধ করে বাকি অর্থ স্থানীয় সরকার বিভাগকে দেয়া যেতে পারে। এতেই বকেয়া বিল আদায় সম্ভব। তা না করা হলে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় সম্ভব না। বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, সরকার বিদ্যুত বিল আদায়ের একটি লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছে। ওই লক্ষ্য আদায় করতে গিয়ে কোন প্রতিষ্ঠান ২/৩ মাসের বকেয়া রাখলেও তাদের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। ব্যবহারকারীরা বিদ্যুত বিচ্ছন্ন হওয়ার আতঙ্কে সময় মতো বিল পরিশোধ করছেন। বিল পরিশোধ এবং অন্য সব অনিয়ম দূর করতে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান পৃথক সেল গঠন করেছে। কিন্তু এসব করেও সরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বকেয়া আদায় করা যাচ্ছে না। বলা হচ্ছে সরকারী যত প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদ্যুত বিল বকেয়া রয়েছে তারমধ্যে এক নম্বর বিল খেলাপীর তালিকায় রয়েছে পৌরসভা। বকেয়া আদায় না করতে পারলে কর্মকর্তাদের ভর্ৎসনাও করা হয় মাসিক সমন্বয় সভাগুলোতে।
×