ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

অনন্য উচ্চতায় অলরাউন্ডার সাকিব

প্রকাশিত: ১০:২৬, ২৫ জুন ২০১৯

অনন্য উচ্চতায় অলরাউন্ডার সাকিব

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বিশ্বসেরা ওয়ানডে অলরাউন্ডার, ব্যাটে-বলে সাকিব আল হাসান দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ দলকে অনেক কিছু উপহার দিয়েছেন। তবে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবেই কীর্তিতে নিজের ব্যাটিংয়ের চেয়ে এগিয়ে তিনি। কিন্তু এবার ক্যারিয়ার চতুর্থ বিশ্বকাপ ব্যাটসম্যান সাকিবের জন্য উদার হয়ে এসেছে। আগের ৩ বিশ্বকাপে ২১ ম্যাচ খেলে মাত্র ৫৪০ রান করা সাকিব চলতি আসরে ৬ ম্যাচেই করেছেন ৪৭৬ রান। এই মুহূর্তে চলমান বিশ্বকাপে সর্বাধিক রান সংগ্রাহক তিনি। সোমবার সাউদাম্পটনের রোজ বোলে তিনি অবিস্মরণীয় এক কীর্তি গড়েছেন। ১৯তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১ হাজার রান পূর্ণ করেছেন বিশ্বকাপের ইতিহাসে। ৬৯ বলে ৫১ রান করে বিশ্বকাপের ২৭ ম্যাচে এখন সাকিবের রান ১০১৬। ফলে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন উইন্ডিজ কিংবদন্তি স্যার ভিভ রিচার্ডস (১০১৩), ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী (১০০৬) ও অস্ট্রেলিয়ার মার্ক ওয়াহদের (১০০৪)। এছাড়া বিশ্বকাপে ১০০০ রানের পাশাপাশি ২৮ উইকেট নিয়ে ইতোমধ্যেই সেরা অলরাউন্ডার হয়ে গেছেন তিনি। আগের ৩ বিশ্বকাপে সাকিব ২১ ম্যাচ খেলে ৫৪০ রান করেছিলেন। ছিল ৫ অর্ধশতক। এবার তিনি ৬ ম্যাচে ৩ অর্ধশতক ও ২ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নিজেকেই ছাড়িয়ে যান। আর এক বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা ব্যাটিং নৈপুণ্যের নিদর্শনও গড়ে ফেলেছেন। নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন তিনি ক্রমেই। রোজ বোলে আফগানদের বিপক্ষে তিনি ব্যাটিংয়ে নামার আগে ৫ ম্যাচে ৪২৫ রান নিয়ে দুই নম্বরে ছিলেন আসরে সর্বাধিক রান সংগ্রাহকের তালিকায়। ওপরে চলে গিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার। তার রান ৬ ম্যাচে ৪৪৭। তাকে পেছনে ফেলে আবার এগিয়ে যেতে সাকিবের মাত্র ২৩ রান প্রয়োজন ছিল। বেশ সাবধানেই শুরু করেন তিনি। মূলত মেরে খেলার দিকে মনোযোগ থাকলেও এদিন নিজেকে নিবৃত রেখেছিলেন। ব্যক্তিগত ৫ রানের সময় মোহাম্মদ নবিকে চার হাঁকিয়েছিলেন। এরপর সাকিবকে আর বাউন্ডারি হাঁকানোর দিকে কোন মনোযোগ দিতে দেখা যায়নি। এতটাই নিয়ন্ত্রিত ব্যাটিং করেছেন তিনি মূলত রোজ বোলের ধীরগতির উইকেটে ৩ ভয়ানক আফগান স্পিনারের জন্য। এতে করে দ্রুতই চলতি বিশ্বকাপে সর্বাধিক রান সংগ্রাহক হয়ে যান সাকিব। তবে ব্যক্তিগত ২৬ রানের সময় ইনিংসের ১৮তম ওভারে রশীদ খানের করা প্রথম বলেই তাকে এলবিডব্লিউ দেন আম্পায়ার। সে যাত্রা রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান সাকিব। আর এগিয়ে যেতে থাকেন এক/দুই রান করে নিয়ে। সতর্কভাবে ব্যাটিং করেই চলতি বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় অর্ধশতক পেয়ে যান সাকিব। মাত্র একটি বাউন্ডারি হাঁকালেও ৬৬ বলেই তিনি তা পেয়ে যান। তবে এরপরই সাজঘরে ফিরেছেন। ৬৯ বলে ৫১ রান তুলে আউট হয়ে যান মুজিব উর রহমানের অফস্পিনে এলবি হয়ে। ৫১ রানে সাকিব আউট হয়ে যাওয়াতে একই দিনে বড় একটি অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন অল্পের জন্য। আর ২৪ রান করতে পারলেই বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক আসরে ৫০০ রান করার গৌরব অর্জন করতেন। এখন পর্যন্ত সেটি মাত্র ৮ ব্যাটসম্যান করতে পেরেছেন এর আগে। তবে সেই সুযোগটা এখনও আছে সাকিবের। বাকি আছে আরও দুই ম্যাচ। যে ফর্মে আছেন তাতে করে সেটি অসম্ভব নয়। ৬ ম্যাচে তার রান- ৭৫, ৬৪, ১২১, ১২৪*, ৪১ ও ৫১। এই ম্যাচে ৫১ রান করার ফলে বিশ্বকাপে সর্বমোট রান এখন তার ১০১৬। বিশ্বের ১৯তম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই মর্যাদার মঞ্চে ১ হাজার রান পূর্ণ করেন সাকিব। আর ছাড়িয়ে যান এ তালিকায় থাকা অস্ট্রেলিয়ার সাবেক তারকা মার্ক ওয়াহ (২২ ম্যাচে ১০০৪), গাঙ্গুলী (২১ ম্যাচে ১০০৬) ও স্যার ভিভ রিচর্ডসদের (২৩ ম্যাচে ১০১৩)। এই মুহূর্তে সাকিব ১৬ নম্বরে বিশ্বকাপের ইতিহাসে রান সংগ্রহের তালিকায়। তার খুব কাছাকাছি আছেন শ্রীলঙ্কার সাবেক তারকা অরবিন্দ ডি সিলভা (৩৫ ম্যাচে ১০৬৪), দক্ষিণ আফ্রিকার হার্শেল গিবস (২৫ ম্যাচে ১০৬৭), নিউজিল্যান্ডের স্টিফেন ফ্লেমিং (৩৩ ম্যাচে ১০৭৫), পাকিস্তানের জাভেদ মিঁয়াদাদ (৩৩ ম্যাচে ১০৮৩) ও অস্ট্রেলিয়ার এডাম গিলক্রিস্ট (৩১ ম্যাচে ১০৮৫), শ্রীলঙ্কার মাহেলা জয়াবর্ধনে (৪০ ম্যাচে ১১০০)। এই অর্জনগুলো টানা রানের মধ্যে থাকার কারণেই হয়েছে। আর দুই ম্যাচে এই কিংবদন্তিদেরও পেছনে ফেলে দারুণ এক উচ্চতায় ওঠার সুযোগ সাকিবের। অথচ বিশ্বকাপে শতকের দেখা পেতে তার ২৪ ইনিংস লেগেছে। পরের ম্যাচেও সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। সার্বিকভাবে বিশ্বকাপ ব্যাটিংয়ে দেশের সেরা এখন সাকিব। তিনি এখন পর্যন্ত ২৭ ম্যাচে ৪৪.১৭ গড়ে ১০১৬ রান করেছেন। শচীন টেন্ডুলকর সর্বাধিক ২২৭৮ রান করেছেন বিশ্বকাপে ৪৫ ম্যাচ খেলে। এছাড়া কোন ব্যাটসম্যানেরই আর ২০০০ রান নেই বিশ্বকাপে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অস্ট্রেলিয়ার সাবেক বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক রিকি পন্টিং ৪৬ ম্যাচে ১৭৪৩ রান করেছেন, তৃতীয় অবস্থানে থাকা শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা ৩৭ ম্যাচে ১৫৩২ এবং চতুর্থ স্থানে থাকা উইন্ডিজ গ্রেট ব্রায়ান লারা ৩৪ ম্যাচে ১২২৫ ও পঞ্চম অবস্থানে প্রোটিয়া তারকা এবি ডি ভিলিয়ার্স ২৩ ম্যাচে ১২০৭ রান করেছেন। বিশ্বকাপে ১ হাজার রান পূর্ণ করার পাশাপাশি ২৮ উইকেটও ঝুলিতে আছে সাকিবের। যা কোন অলরাউন্ডার হিসেবে সেরা নৈপুণ্য। এখন পর্যন্ত ১ হাজার রানের পাশাপাশি উইকেট নেয়ার দিক থেকে বিশ্বকাপে সর্বকালের সেরা সাকিব। শুধুমাত্র তার কাছাকাছি আছেন শ্রীলঙ্কার সাবেক তারকা সনাথ জয়াসুরিয়া। তিনি বিশ্বকাপে ৩৮ ম্যাচ খেলে ১১৬৫ রান করেছেন এবং ২৭ উইকেট নিয়েছেন। আর কোন ক্রিকেটারের এক হাজার রানের পাশাপাশি এত উইকেট নেই বিশ্বকাপে। এখন রানের দিক থেকেও জয়সুরিয়াকে পেছনে ফেলে বিশ্বকাপে ব্যাটে-বলে সবাইকে ছাড়িয়ে অনন্য এক রেকর্ড গড়ার অপেক্ষা সাকিবের।
×