ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোবাইল ফোন শিল্পে অপরিবর্তিত থাকছে আমদানি শুল্ক

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ২২ জুন ২০১৯

মোবাইল ফোন শিল্পে অপরিবর্তিত থাকছে আমদানি শুল্ক

দেশে মোবাইল ফোনের উৎপাদন বাড়াতে এবং শিল্পের বিকাশে আসন্ন বাজেটে তেমন কোন চমক থাকছে না। মোবাইল ফোনের আমদানি শুল্ক বাড়ানোর কথা শোনা গেলেও আপাতত তা বাড়ানো সম্ভাবনা কম। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানিয়েছেন, দেশে মোবাইল ফোনের উৎপাদন ও বাজার সম্প্রসারণে উৎসাহ দিতে আগ্রহী সরকার। তাই এ বিষয়ে শুল্ক কর নির্ধারণে সরকার যে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছিল আসন্ন বাজেটে তা-ই অপরিবর্তিত রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোবাইল ফোন আমদানিতে বর্তমানে ৩২ শতাংশ শুল্ক ও কর দিতে হয়। অন্যদিকে দেশে তৈরি মোবাইল ফোনের কর বর্তমানে ১৪ শতাংশ। জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘মোবাইল ফোন আমদানিতে নতুন কোন করারোপের বিষয় থাকছে না বলেই ধরে নিতে পারি। আমি এ বিষয়ে কোন প্রস্তাবনা দেইনি।’ তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন, ‘মোবাইল আমদানি ও দেশে তৈরি মোবাইলের মধ্যে শুল্ক ও অন্যান্য করসহ পার্থক্য হলো ১৪ থেকে ১৫ শতাংশের মতো। দেশীয় উৎপাদকদের জন্য এই পার্থক্যই পর্যাপ্ত। এ থেকেই তারা মুনাফা করতে পারেন। ফলে আমদানিতে আরও শুল্ক বাড়ানো আপাতত প্রয়োজন বলে আমি মনে করছি না।’ মন্ত্রী বলেন, ‘২০২০ সালের মধ্যে দেশের মোট প্রয়োজনের ৮০ শতাংশ মোবাইল যদি দেশে তৈরি হয়, সেটাই হবে বড় এ্যাচিভমেন্ট। আমদানি শুল্ক বাড়ানোর বদলে বরং অবৈধ পথে মোবাইল ফোন আসা বন্ধের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি। গ্রে মার্কেটে (অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করা মোবাইল) যে পরিমাণে মোবাইল প্রবেশ করছে তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী। তার প্রত্যাশা, আমাদের আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) ডাটাবেজ তৈরি হয়ে গেলেই গ্রে মার্কেটে মোবাইল ফোন আসা কমে যাবে। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের এই জুন মাসের মধ্যেই আইএমইআই ডাটাবেজ তৈরির কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘চাপ না দিলে কোন কাজ হয় না। দেখা যাক জুনের শেষ নাগাদ ডাটাবেজ তৈরির কাজ কোন পর্যায়ে পৌঁছে। ডাটাবেজ তৈরির কাজ শেষ হলে অবৈধভাবে দেশে ফোন প্রবেশ করতে পারবে না। তখন ক্রেতাদের বৈধ ফোনই কিনতে হবে। তখন কম দামে ফোন কিনতে হলে দেশে উৎপাদিত পণ্যই কিনতে হবে।’ প্রসঙ্গত, দেশের বর্তমান মোবাইল ফোন মার্কেটের আকার ৩ কোটি। এর মধ্যে বর্তমানে দেশে তৈরি হচ্ছে ৬৬ লাখ। মাসের হিসেবে প্রতি মাসে সাড়ে ৫ লাখ সেট। অবশিষ্ট সেট প্রতি বছর আমদানি করতে হয়। জানা গেছে, দেশে এখন পাঁচটি মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সেট তৈরি করছে। দুটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনের অপেক্ষায়। মোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্যামসাং প্রতি মাসে তৈরি করছে দেড় লাখ, ট্রানশান বাংলাদেশ তৈরি করছে ২ লাখ আইটেল মোবাইল, সিম্ফোনি তৈরি করছে এক লাখ ও ওয়ালটন তৈরি করছে ৬০ হাজার পিস মোবাইল সেট। এর বাইরে দেশে ফাইভ স্টার নামেও মোবাইল ফোন তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) যুগ্ম সম্পাদক মেসবাহ উদ্দিন বলেন, আমরা চাই দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদন কারখানা ভায়াবল করতে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হোক। সুবিধা বাড়ানো না হলে এই শিল্পের প্রসার হবে না। তিনি আরও জানান, কারখানা স্থাপনের অনুমতি দেয়ার সময় (দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদন কারখানা চালুর অনুমোদন) কয়েকটি শর্ত দেয়া হয়। সেই শর্তের মধ্যে একটি ছিল কারখানা চালুর ১৫ মাসের মধ্যে পিসিবি উৎপাদন করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে পিসিবি উৎপাদনের ব্যর্থ হলে সিবিউ (কমার্শিয়াল বিজনেস ইউনিট) আরোপ করা হবে। জানা গেছে, সিবিউ বর্তমানে শূন্য শতাংশ হলেও শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত হবে মোবাইল ফোনে। মেসবাহ উদ্দিন বলেন, এরই মধ্যে ৯ মাস সময় পেরিয়ে গেছে। আসছে অক্টোবরের মধ্যে পিসিবি উৎপাদনে যাওয়ার কথা সবার। ব্যর্থ হলে কী হবে সেটা নিয়েই উৎপাদকরা শঙ্কিত। বিএমপিআইএ’র এই যুগ্ম সম্পাদক আরও জানান, দেশে মোবাইল তৈরির কারখানাগুলো সরকারের দেয়া অনেক সুবিধা ভোগ করছে। কিন্তু শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে যদি এখনই শাস্তি আরোপ হয় তাহলে এ শিল্পের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। অনেক ধরনের কর, চার্জ আরোপ করা হবে, যা দেশে তৈরি ফোনের দাম বাড়িয়ে দেবে।
×