ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডিআইজি মিজান যে কোন সময় গ্রেফতার

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ১৮ জুন ২০১৯

 ডিআইজি মিজান  যে কোন সময়  গ্রেফতার

শংকর কুমার দে ॥ গোয়েন্দা নজরদারিতে আছেন পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমান। খুব শীঘ্রই গ্রেফতার হতে যাচ্ছেন তিনি। প্রভাবশীল এই পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের আগের প্রস্তুতি পর্ব চলছে। এ জন্য নেয়া হচ্ছে আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া। ইতোমধ্যেই তার গতিবিধির ওপর শুরু করা হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। দুদক কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ার কথা স্বীকার করার পরও তাকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না তা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছে সর্বোচ্চ আদালত। সর্বোচ্চ আদালতের উষ্মা প্রকাশের পর ডিআইজি মিজানকে গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টিও তদন্ত করছে দুর্নীতি তদন্ত কমিশন (দুদক) প্রায় দেড় বছর আগে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ সদর দফতর। সেই তদন্তের আলোকেও তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারের আইনানুগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ সদর দফতরের উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে। তদন্ত প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক এক নারীকে বিয়ে, বিয়ে গোপন রেখে নির্যাতন করাসহ নানা ধরনের অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের তদন্ত কমিটি। প্রায় দেড় বছর আগের তদন্ত প্রতিবেদনটি পুলিশ সদর দফতর হয়ে পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। তদন্ত প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করার বিষয়টি এখন সামনে এসেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করার বিষয়টি সামনে আসার কারণ হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশনের এক কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়েছে বলে নিজেই স্বীকার করেছেন ডিআইজি মিজান। নিজেই ঘুষ দেয়ার কথা স্বীকার করার পর এ বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার বিষয়টি নজরে আসে সর্বোচ্চ আদালতের। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না পুলিশ সদর দফতর। এ জন্য পুলিশ সদর দফতর থেকে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে তার তদন্ত শেষে প্রতিবেদনটি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। তদন্ত প্রতিবেদনে ডিআইজি মিজানকে সহায়তা করার প্রমাণ মিলেছে তার গাড়িচালক এবং অর্ডারলির বিরুদ্ধেও। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে সরকারী চাকরিতে দায়িত্বরত অবস্থায় অসদাচরণ করার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে ডিআইজি মিজানের কর্মকা-কে ‘অসদাচরণ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এখন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তার বিষয়টি এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারে থাকায় এতদিন পুলিশ সদর দফতর তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। অবৈধ সম্পদ অর্জন, জোরপূর্বক বিয়ে ও ক্ষমতার অব্যবহারসহ নানা ঘটনায় আলোচিত পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে দেড় বছর আগে করা অভিযোগের তদন্তে প্রমাণ পাওয়ার পরও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করার বিষয়টি এখন আবার সামনে চলে এসেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক কর্মকর্তা এক নারী অভিযোগ করেন, গত জুলাইয়ে বাসা থেকে তাকে কৌশলে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা মিজান। পরে বেইলি রোডের মিজানের বাসায় নিয়ে তিনদিন তাকে আটকে রাখা হয়। আটকে রাখার পর বগুড়া থেকে তার মাকে ১৭ জুলাই ডেকে আনা হয় এবং ৫০ লাখ টাকা কাবিননামায় মিজানকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়। পরে লালমাটিয়ার একটি ভাড়া বাড়িতে একসঙ্গে বসবাস করেন ডিআইজি মিজান। নিজের ফেসবুকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে একটি ছবি শেয়ারের পর ওই নারীর ওপর ক্ষেপে যান মিজান। ছবি শেয়ারের ঘটনা ক্ষেপে গিয়ে তার বিরুদ্ধে বাড়ি ভাংচুরের একটি মামলা করেন। সে মামলায় তাকে গত ১২ ডিসেম্বর কারাগারে পাঠানো হয়। ওই মামলায় জামিন পাওয়ার পর মিথ্যা কাবিননামা তৈরির অভিযোগে আরেকটি মামলায় তাকে আটক দেখানো হয়। দুই মামলাতেই জামিনের পর ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তোলেন ওই নারী। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৯ জানুয়ারি ডিএমপি থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দফতরে যুক্ত করা হয় মিজানুর রহমানকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় বছর আগের পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও বিষয়টি যখন ধামাচাপার পর্যায়ে ছিল তখনই তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের আরেকটি অভিযোগের ঘুষ প্রদানের বিষয়টি সামনে চলে আসে। এক নারীকে জোর করে বিয়ে ও নির্যাতনের অভিযোগের ঘটনায় তদন্তের পর্যায়ে চলে আসে ডিআইজি মিজানের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি। অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি তদন্ত করছে দুদক। ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন দুদকের পরিচালক এনামুল বাছির। তদন্ত চলাকালে দুদক পরিচালক এনামুল বাছিরের সঙ্গে সম্প্রতি ঘুষ লেনদেনের তথ্য ফাঁস করে আবারও আলোচনায় আসেন ডিআইজি মিজান। যেহেতু মিজান নিজেই বলেছেন তিনি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন সেটা সত্য-মিথ্যা যাই হোক; এটা একটা ফৌজদারি অপরাধ। এই অপরাধের কারণে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে গত ১৬ জুন দুদক তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে ঘুষ লেনদেনের কথা স্বীকার করার পরও পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে দুর্নীতি দমন কমিশন কেন গ্রেফতার করতে পারছে না, তা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছে সর্বোচ্চ আদালত। আদালতে শুনানিকালে আদালত দুদকের আইনজীবীর প্রতি প্রশ্ন তোলে, ডিআইজি মিজান কি দুদকের চাইতে বড়? তাকে তো আপনি এ্যারেস্ট করতে পারছেন না। এই মামলায় তাকে কেন এ্যারেস্ট করছেন না? দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ একই সঙ্গে বলেছেন, ঘুষ দেয়াও ফৌজদারি অপরাধের মধ্যে পড়ে। দুদক কর্মকর্তাকে ডিআইজি মিজান দুদক কর্মকর্তা বাছিরকে ঘুষ দিয়েছেন বলে দাবি করার পর বাছিরকেও সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। তবে দুদক চেয়ারম্যান অবশ্য ঘুষ লেনদেনের কারণে দুদক কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথাটি না বলে তথ্য পাচার করার কথা বলেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ডিআইজি মিজানকে খুব শীঘ্রই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তিনি কিভাবে ঘুষ দিয়েছেন, ঘুষের টাকা কোথায় পেয়েছেন সেটারও তদন্ত হবে। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার পর তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
×