ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাল্যবিয়ে ॥ অকালে প্রাণ হারাল কুলসুম

প্রকাশিত: ১১:২৮, ১৫ জুন ২০১৯

 বাল্যবিয়ে ॥ অকালে প্রাণ হারাল কুলসুম

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ১৪ জুন ॥ সাপাহারে বাল্যবিয়ের কুপ্রভাবে অকালে প্রাণ হারাল কুলসুম। বাল্যবিয়ের গ্লানি নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে যেতে হলো তাকে। ঘটনাটি এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। জানা গেছে, সাপাহার উপজেলার পাতাড়ী ইউনিয়নের পাতাড়ী গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও রেহেনা খাতুনের মেয়ে কুলসুম। শিশুকাল থেকে সে স্থানীয় বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে আসছিল এবং এলাকায় অবস্থিত বে-সরকারী সংস্থা বিডিও, বিএসডিওর শিশু বিকাশ কেন্দ্রের স্পন্সর শিশু সদস্যও ছিল কুলসুম। যে সময় শিশুটি ৫ম শ্রেণীতে লেখা পড়ায় মগ্ন ঠিক সে সময় সুন্দরী হওয়ার কারণে দরিদ্র পরিবারের ওই শিশুটির ওপর নজর পড়ে পার্শ্ববর্তী তিলনী গ্রামের উকিল ম-লের ছেলে আব্দুল করিমের (২৫)। সে ঢাকায় চাকরি করার সুবাদে বিয়ের প্রস্তাব দেয় কুলসুমের মা-বাবার কাছে। শিক্ষিত ও চাকরিজীবী জামাই দেখে কুলসুমের মা-বাবাও রাজি হয়ে যায় এ বিয়েতে। যেই কথা সেই কাজ। শিশু কুলসুমের অমতেই বিয়ের দিনক্ষণ নির্ধারণ হয়। এসময় বিয়েতে অনেক বাদ সেধেছিল এনজিও সংস্থা বিডিও, বিএসডিও। তাদের বিকাশ কেন্দ্রের স্পন্সর শিশু সদস্য হওয়ার কারণে তারা কিছুতে এ বিয়ে হতে দেবে না বলে তার মা’বাবাকে সাফ জানিয়ে দেয়। দরিদ্র বাবা রফিকুল কারো কোন কথার তোয়াক্কা না করে বিয়ের পর মেয়ের পিরিয়ড চালু না হওয়া পর্যন্ত মেয়ে তার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করবে শর্তে ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী কুলসুমের বিয়ে দেয়া হয় ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারিতে। শর্ত মোতাবেক বিয়ের পর কুলসুম থেকে যায় তার বাবার বাড়িতে। কিন্তু শিক্ষিত চাকরিজীবী জামাই আব্দুল করিম বিয়ের পর কিছুতেই তার স্ত্রীকে ছেড়ে থাকতে পারবে না বলে কুলসুমকে তার চাকরিস্থল ঢাকায় নিয়ে যেতে উঠে পড়ে লাগে। জামাইয়ের জেদ ও ইচ্ছা মেটাতে বাবা রফিকুল পাঠিয়ে দেয় তার মেয়ে কুলসুমকে তার স্বামীর কাছে। সেখানে জামাই তার স্ত্রীর পিরিয়ড চালু না হওয়ায় অপ্রাপ্ত বয়সে তার পিরিয়ড চালু হওয়ার জন্য তাকে বিভিন্ন ধরনের হরমোন জাতীয় ওষুধ খাওয়াতে থাকে। এমনি অবস্থায় এক সময় কুলসুমের পিরিয়ড চালু হয়ে যায় এবং গর্ভে সন্তান ধারণ করে। শিশু কুলসুমের পেটের বাচ্চার বয়স যখন ৭ মাস ঠিক তখনই জামাই তার বউকে নিয়ে ঈদ-উল-ফিতর খেতে চলে আসে তার তিলনী গ্রামের বাড়িতে। ঈদের পর দিন সে তার স্ত্রী কুলসুমকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাতাড়ী গ্রাম থেকেও বেড়িয়ে যায়। এর পর স্বামী ও শ্বশুরের বাড়িতে ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ে কুলসুম । অবশেষে বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) কুলসুম পেটের ব্যথায় কাতর হয়ে পড়লে এক সময় তার পেট থেকে ৭ মাসের গর্ভপাত ঘটে এবং তার গোপনাঙ্গ দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এর পর লোকজন তাকে হাসপাতালে নেয়ার কথা বললে গর্ভপাতের পর মেয়েদের এরকম রক্তপাত হয়েই থাকে বলে জানিয়ে দেয় কুলসুমের শাশুড়ি মেজলা বেগম।
×