ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাসপোর্ট ছাড়াই পাইলট কাতারে

প্রকাশিত: ১০:৩২, ৯ জুন ২০১৯

পাসপোর্ট ছাড়াই পাইলট কাতারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাসপোর্ট ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাইলট ফজল মাহমুদের কাতারে আনতে যাওয়ার ঘটনায় এবার এক পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাসপোর্ট না দেখেই পাইলটকে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন মোহাম্মদ কামরুজ্জামান নামের ইমিগ্রেশন পুলিশের ওই কর্মকর্তা। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে এই পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হলো। বার বারই প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটে নানা ঝামেলা হওয়ার প্রকৃত কারণ জানতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা। এর পেছনে বিশেষ কোন রহস্য আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গত বুধবার রাতে বিদেশে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে আনতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বোয়িং ৭৮৭ মডেলের একটি বিশেষ ড্রিমলাইনার বিমান নিয়ে পাইলট ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ কাতারের দোহা বিমানবন্দরে পৌঁছান। ইমিগ্রেশন কাউন্টারে যাওয়ার পর পাইলট ফজল মাহমুদ বুঝতে পারেন তার ব্যাগে পাসপোর্ট নেই। পাসপোর্ট না থাকার কারণে তিনি বাইরে যেতে পারেননি। তিনি ট্রানজিট হোটেল অরিজ এয়ারপোর্টে যান। তিনি দ্রুত ঢাকায় যোগাযোগ করেন। তার পাসপোর্ট অপারেশন রুমের লকারে বলে তিনি জানান। এমন ঘটনায় রীতিমতো হৈ চৈ পড়ে যায়। বৃহস্পতিবার সেই পাসপোর্ট বিশেষ ব্যবস্থায় কাতারে পৌঁছানো হয়। এমন ঘটনার পর বৈসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিবের নির্দেশে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলট ফজল মাহমুদকে ভিভিআইপি ফ্লাইট থেকে প্রত্যাহার করা হয়। ফজল মাহমুদের পরিবর্তে ক্যাপ্টেন আমিনুল ইসলাম পাইলটের দায়িত্ব পালন করেন। এ ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছে। এ ঘটনার তদন্তে ইমিগ্রেশন পুলিশের দায়িত্বরত কর্মকর্তার গাফিলতির বিষয়টি বেরিয়ে আসে। শনিবার তদন্তের ধারাবাহিকতায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পাসপোর্ট না দেখেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলট ফজল মাহমুদকে কাতারে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। কোন অসৎ উদ্দেশ্যে ওই পুলিশ কর্মকর্তা পাইলটকে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন কিনা সে বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত আছে। বিমানবন্দরের পুলিশের ইমিগ্রেশন বিভাগের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ ইসমাইল হোসেন জানান, পাইলট ফজল মাহমুদের কাছে ইমিগ্রেশন পুলিশের কর্মকর্তা এসআই কামরুজ্জামান পাসপোর্ট চেয়েছিলেন। ব্যাগে পাসপোর্ট আছে বলে পাইলট পুলিশ কর্মকর্তাকে জানিয়েছিলেন। পাইলটরা সব সময় যাতায়াত করার কারণে এবং ফজল মাহমুদ সিনিয়র পাইলট হওয়ায় তাকে সব পুলিশ কর্মকর্তারাই চেনেন। এজন্য পুলিশ কর্মকর্তা পাইলটের কথায় বিশ্বাস করে তার পাসপোর্ট আর স্বচক্ষে দেখেননি। পাইলটকে স্বাভাবিকভাবেই যাওয়ার অনুমতি দেন। এক্ষেত্রে পাইলট এবং পুলিশ কর্মকর্তার দু’জনেরই দায়িত্বে গাফিলতি থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। পাইলটের দায়িত্ব ছিল পুলিশ কর্মকর্তাকে পাসপোর্ট দেখানো। আর পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্ব ছিল পাসপোর্ট দেখে পাইলটকে যাওয়ার অনুমতি দেয়া। দায়িত্বে অবহেলার দায়ে ইমিগ্রেশন পুলিশের এসআই কামরুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই বিষয়টি সম্পর্কে পুলিশ সদর দফতরে রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। এদিকে শনিবার দুপুরে র‌্যাব সদর দফতর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বলেছেন, প্রাথমিক তদন্তে পাইলট ভুল করে পাসপোর্ট নেননি বলে জানা গেছে। তবে সেই ভুল পরিকল্পিত না ইচ্ছেকৃত না অনিচ্ছাকৃত তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে বিমানবন্দরে দুই-তিন জায়গায় চেক হওয়ার পরেও পাইলটের পাসপোর্ট ছাড়াই বিদেশ যাওয়ার ঘটনা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর যেহেতু ওই বিমানে আসার কথা ছিল, এজন্য পাইলটের আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল। পাইলটের এ ধরনের ভুল করা উচিত হয়নি। আর ইমিগ্রেশন পুলিশেরও এমন ভুল করা উচিত হয়নি। ইমিগ্রেশন পুলিশের দায়িত্ব ছিল পাইলটের পাসপোর্ট স্বচক্ষে দেখে তাকে যেতে দেয়া। ইমিগ্রেশন পুলিশের দায়িত্বরত ওই কর্মকর্তার গাফিলতির বিষয়টি স্পষ্ট। এজন্য ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে গভীর তদন্ত চলছে।
×