ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক ও পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা নেই ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ৪ জুন ২০১৯

 সড়ক ও পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা নেই ॥ কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাসমালিকেরা লোভী মন্তব্য করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাসমালিকদের লোভ-লালসার সীমা বহু দূর চলে গেছে। তাদের লোভ-লালসা মানসিক প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। বাসে যেন অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া না হয়, সে জন্য টার্মিনালে ঘুরেছি। বাসমালিকেরা বোঝাতে চেয়েছেন, যাওয়ার সময় যাত্রী থাকলেও আসার সময় খালি আসতে হয়। আমি বাসমালিকদের বলেছি, সারাবছরই তো ব্যবসা করেছেন, ঈদের সময় মুনাফার ক্ষেত্রে একটু সংযমী হন। বাসমালিকদের লোভ নিয়ন্ত্রণে কাজ করা হচ্ছে। সোমবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশে শৃঙ্খলার অভাব। পরিবহন ও সড়ক উভয় ক্ষেত্রেই কোথাও শৃঙ্খলা নেই। এটি ফেরাতে পারলে দেশ এগিয়ে যাবে। বিশ্বের অনেক দেশেই সড়ক প্রশস্ত নয়। কিন্তু সেখানে দুর্ঘটনা কম। গাড়িতে গাড়িতে ঠোকাঠুকি নেই। ওবায়দুল কাদের বলেন, রাস্তায় যানজটের সঙ্গে জনজটও হয়ে যায়। ইদানীংকালে এই সমস্যা প্রকট। কেউ নিয়ম মানে না। সবাই লাইন ধরে চলন্ত গাড়ি থেকে রাস্তায় নেমে যায়। এখন এখানে জলজট, জনজট, যানজট, তিনটা মিলেমিশে একাকার। পরিবহনে শৃঙ্খলা নেই। সড়কেও শৃঙ্খলা নেই। এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শৃঙ্খলা। শৃঙ্খলার সঙ্কট কাটাতে পারলে এ দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেক স্বস্তি আসবে। সড়কে যান নিয়ন্ত্রণকে পরীক্ষা হিসেবেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, সরকারের অনুরোধের পরও অনেক মালিক অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সরকার বিভিন্ন টার্মিনালে মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করছে। এ পর্যন্ত হিমাচল, একুশে, ফতেহ আলী, হানিফ পরিবহনকে জরিমানা করা হয়েছে। এখন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে মাত্র ৪ ঘণ্টা সময় লাগে পাবলিক পরিবহনে। আর ব্যক্তিগত পরিবহনে গেলে লাগে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা। এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক চেষ্টার ফলে। বহুদিন পর এবার ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে। যা সারাবছরই অব্যাহত থাকবে। জনগণের যাত্রা যাতে স্বস্তির হয় এজন্য বিভিন্ন দফতরে সভা করেছি। ফেরার পথেও যাতে যাত্রা স্বস্তির হয়। তিনি বলেন, আমি দুইটি টার্মিনালে গিয়েছি। সেখানে অভিযোগ পেয়েছি। বাস মালিকরা অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন। মালিকরা জানান, ঈদে বাস ভরে যাত্রী নিলেও আসতে হয় খালি। এজন্য আমরা বলেছি আপনারা সারাবছর অনেক আয় করেন। ঈদের সময় একটু কম আয় বা লাভ কম করেন। তবে এতে কতটুকু কাজ হবে জানি না। সব কথায় কাজ হলে দেশ সোনার বাংলাদেশ হয়ে যেত। বিপদে পড়ে জনগণ, বিপদ আমরা সৃষ্টি করি না, বিপদ সৃষ্টি করে প্রভাবশালীরা। পরিবহন খাতে শৃঙ্খলার খুবই অভাব উল্লেখ করে তিনি বলেন, সড়ক ও পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা নেই। এখন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। এটা করতে পারলে শৃঙ্খলাসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হবে। ঢাকায় যানজট, জনজট ও জলজট এ তিন মিলে একাকার। এই জট নিরসনে শীঘ্রই পদক্ষেপ নিতে হবে। এ বিষয়ে ঈদের পর ডিটিসিএ এর সভা হবে। সেখানে দুই সিটির মেয়রও থাকবে। বছরের পর বছর ধরে ঢাকা শহরে বিশৃঙ্খলা চলছে। এখানে আমাদেরও কিছু পরিকল্পনা আছে। দিস্তার পর দিস্তা কাগজ আমরা পরিকল্পনায় নষ্ট করেছি। কোন লাভ হয়নি। এখন আমরা ঢাকা সিটির যানজট নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেব। এক প্রশ্নে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, বিআরটিসির নতুন গাড়িগুলো আমাদের জনগণের দূরপাল্লায় যাতায়াতে ভাল ভূমিকা রেখেছে। হিমাচল পরিবহন প্রতিবছরই অতিরিক্ত ভাড়ার জন্য একটি অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান। আমি বিআরটিএকে বলেছি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে মালিকদের লোভ লালসার মানসিকতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আমাদের নতুন আইন বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই অশান্তি সৃষ্টি করে। এখানে অশান্তির কারণ তারা সৃষ্টি করে না। আমরাই সৃষ্টি করি, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এ দেশে সততার সঙ্গে কাজ করা একটা চ্যালেঞ্জ। তবে ঈদে রাস্তার বিড়ম্বনা এবার কম হওয়ার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বহুদিন পর এবারের সড়কপথে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হচ্ছে। ফেরার পথেও যেন শোভন ও নিরাপদ হয় সরকার সে চেষ্টা করছে। শুধু ঈদ নয়, সারাবছর সড়ক এ রকম স্বস্তিদায়ক থাকবে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে যানজট ক্রমেই অসহনীয় হয়ে উঠছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেছেন, এ সঙ্কটের সমাধানে ঈদের পর পদক্ষেপ নেয়া হবে। মেট্রোরেল পুরোপুরি চালুর বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে মেট্রোরেল পুরোপুরি চালু হবে। শুধুমাত্র অবকাঠামোগত পরিবর্তনের মাধ্যমে যানজট নিরসন সম্ভব নয়। এজন্য শৃঙ্খলা আনাসহ মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। ২০৩০ সালের মধ্যে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে আশা করছি ঢাকা থেকে পুরোপুরি যানজট নিরসন সম্ভব হবে। ওবায়দুল কাদের জানান, ঈদের পর ঢাকার যানজট নিয়ন্ত্রণে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সভা করবেন। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে কার্যকর কিছু করবেন। সিঙ্গাপুরে হৃদরোগের চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে সড়কে নজর দিয়েছেন বলে জানান ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, চিকিৎসকের বারণের পরও আমি টার্মিনালগুলো পরিদর্শন করেছি, যাতে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া না হয়। বাস মালিকরা আমাকে বোঝাতে চেয়েছেন, যাওয়ার সময় যাত্রী থাকলেও আসার সময় তাদের খালি আসতে হয়। আমি তাদের বলেছি, সারাবছরই তো ব্যবসা করেছেন, ঈদের সময় মুনাফার ক্ষেত্রে একটু সংযমী হন। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, রাজনীতিতে আচরণগত পরিবর্তন দরকার। লাগামহীন বক্তব্য এবং শব্দবোমা রাজনৈতিক বিদ্বেষ সৃষ্টি করে, যা পারস্পরিক সম্পর্ককে দূরে ঠেলে দেয়। গরম কথা, বক্তব্য নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। এগুলো সহনীয় পর্যায় থাকলে রাজনৈতিক সৌহার্দ্য বাড়বে। আমি আওয়ামী লীগ করি বলে বিএনপির কোন নেতার জানাজায় যেতে পারব না, এটি ঠিক নয়। যদিও এই কালচার অনেকটা ঘুচে এসেছে। আমি অসুস্থ হওয়ার পর বিএনপির অনেক নেতা আমাকে হাসপাতালে দেখতে গেছেন। বিএনপি নেতারা চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়েছেন ঈদের আগেই। এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়াকে বন্দী করেছে আদালত। মুক্তি দেয়ার বিষয়টিও আদালতের। এক্ষেত্রে সরকারের কিছুই করার নেই। বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। উনি এখন বন্দী। উনার মুক্তির বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে আন্দোলন কর্মসূচী দেয়া তাদের রাজনৈতিক অধিকার। কিন্তু এতদিনেও তারা কি এমন কোন কর্মসূচী দিতে পেরেছে, যা সরকার বা আদালতের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে? বিএনপির গঠনতন্ত্র থেকে সাত ধারা বাদ দেয়া ঠিক হয়নি, অনৈতিক কাজ হয়েছে, যা জনগণের আস্থা অর্জনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
×