ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-দঃ আফ্রিকা লড়াই আজ

প্রকাশিত: ১০:২১, ২ জুন ২০১৯

বাংলাদেশ-দঃ আফ্রিকা লড়াই আজ

মিথুন আশরাফ ॥ ক্রিকেটারদের চোট এমন বিপদেই ফেলেছে বাংলাদেশ দলকে, সেরা একাদশ গঠন করাই কঠিন হয়ে পড়েছে! কব্জির চোটে ওপেনার তামিম ইকবালের খেলাই অনিশ্চিত। আজ শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচের আগে এমন সমস্যা কী আর বাংলাদেশ দলকে, দলের ক্রিকেটারদের শান্তি দিতে পারে? কোনভাবেই না। বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে তিনটায় লন্ডনের দ্য ওভাল ক্রিকেট মাঠে ম্যাচটি শুরু হওয়ার আগে তাই অশান্তিতেই থাকতে হচ্ছে মাশরাফিবাহিনীকে। অশান্তির প্রধান ও একমাত্র কারণ এখন চোট। দেশের মাটি থেকেই যার শুরু। কিন্তু সময় গড়াতে থাকে। চোট সমস্যা কমতে থাকে। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচ থেকেই আবার চোট শুরু হয়ে যায়। আজ যখন বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ দল, এর আগে তামিমের চোট নিয়েইতো বেশি চিন্তিত থাকতে হচ্ছে। সঙ্গে পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের পিঠের ব্যথা নিয়েও আছে ভাবনা। ওভালে শুক্রবার প্রথমদিনের অনুশীলন করে বাংলাদেশ দল। প্রথমদিনেই বল লেগে কব্জিতে চোট পান বাংলাদেশ ওপেনার তামিম। সেই চোট কী আর এত দ্রুত সেরে উঠবে? চোট না সারলেতো তামিমের খেলাও অনিশ্চিত। তামিম খেললেওতো শতভাগ দিতে পারবেন না। তার মানে শুরুতেই ধাক্কা। বড় স্কোর গড়তে হলে যে শুরুটা জরুরী। আর শুরুটা তামিমের চেয়ে বাংলাদেশ দলে সেরা কেউ করতে পারবেন এত বড় মঞ্চে, তাতো ভাবাই যায় না! তামিম না খেললে শুরুতেই বাংলাদেশ দল দুর্বল হয়ে পড়বে। তখন সৌম্য সরকার ও লিটন কুমার দাস ওপেনিং করবেন। এ দুইজনের ওপরও ভরসা আছে। দুইজনই আবার আছেন ফর্মে। কিন্তু দল যখন অশান্তিতে থাকে তখন কী শান্তি নিয়ে খেলা যায়? এরপর সাকিব আল হাসান আছেন। মুশফিকুর রহীম রয়েছেন। আছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তিনজনই দলের কা-ারি। তামিম যদি নাও থাকেন তাহলে সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ মিলে সেই অভাব অনায়াসে পূরণ করে দিতে পারবেন। কিন্তু কোনভাবে ব্যর্থ হয়ে গেলে। বাকি যারা ব্যাটিংয়ে থাকেন, তাদের ওপর কী আর শতভাগ ভরসা করা যায়? মোহাম্মদ মিঠুন অথবা সাব্বির রহমান রুম্মন, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাশরাফি বিন মর্তুজা, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান কী আর স্কোর অনেক বড় করার মতো ব্যাটসম্যান? এর মধ্যে মাশরাফি হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে ভুগছেন। মুস্তাফিজের কাফ মাসলে টান পড়েছে। এখন সুস্থ। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে নিয়ে ভরসা করা হলেও পিঠের চোট পুরোপুরি সেরে ওঠেনি। চোট নিয়েই দল পড়েছে বিপাকে। দক্ষিণ আফ্রিকাও ব্যাটিংয়ে বিপাকে পড়বে। হাশিম আমলা যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে মাথায় চোট পেয়েছেন আজ নাও খেলতে পারেন। সেক্ষেত্রে ডেভিড মিলার খেলতে পারেন। আমলা না থাকলে একটু স্বস্তিই মিলবে। কিন্তু ব্যাটিংয়ে বাকিরা ঠিকই থাকবেন। ডি কক, ফাফ ডু প্লেসিস, জেপি ডুমিনি, এইডেন মার্করামরা রয়েছেন। বোলিংয়ে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ভুগাতে যদিও ডেল স্টেইন এই ম্যাচেও থাকছেন না। তবে কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিদি, এন্টি পেহলুকওয়ার গতির সামনে পড়তে হবে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের। আর স্পিন ঘূর্ণির ছোবল দিতে তো আছেনই ইমরান তাহির। লেগস্পিনে বাংলাদেশ যে কতটা দুর্বল তাতো রশিদ খান সামনে পড়লেই বোঝা যায়। এবার প্রথম ম্যাচেই ইমরান তাহিরের লেগস্পিনের সামনে পড়ছেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। ব্যাটিং নিয়ে তাই চোটের সঙ্গে ব্যর্থ হওয়ার ভাবনাও আছে! তা জয় করে এখন সাফল্য মিললেই হলো। ব্যাটিংয়ের হিসেবে তামিমের চোটটিই আসলে সবচেয়ে বেশি চিন্তার। কিন্তু এ বিশ্বকাপে দলগুলো যেভাবে রান তুলবে আশা করা হচ্ছে, তাতে বোলিংটাতো সবচেয়ে বেশি জরুরী হয়ে উঠেছে। সেখানে দলের অবস্থাতো বেহালই দেখা যাচ্ছে! সাইফউদ্দিনকে পেস অলরাউন্ডার হিসেবেই নেয়া হয়েছে। তার ওপর ভরসাও করা হয়েছে। কিন্তু বোলিংটা আগে। তিনি পিঠের ব্যথায় খেলতে পারবেন কিনা নিশ্চিত নয়। ব্যথানাশক ওষুধ নিয়ে শেষ পর্যন্ত খেলতেও পারেন। সাইফউদ্দিন না খেললে রুবেল খেলবেন। ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে উইকেট নিলেও রান প্রচুর দিয়েছেন রুবেল। মুস্তাফিজকে নিয়েই তাই শুধু ভরসা করা হচ্ছে। তাকে ‘এক্স ফ্যাক্টর’ ধরা হচ্ছে। এখন কাফ মসলের চোট পুরোপুরি সারিয়ে তা প্রমাণ করতে পারলেই হলো। অভিজ্ঞতা দেখাতে হবে মাশরাফিকে। কিন্তু তিনিওতো হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়ে আছেন। যদিও এসব ইনজুরি নিয়েই খেলেন মাশরাফি। কিন্তু বিশ্বমঞ্চে শতভাগ কী দেয়া যাবে? পেস আক্রমণ নিয়ে আছে বিশদ ভাবনা। তবে স্পিন নিয়ে ভাবনা কমই আছে। যদি উইকেটে স্পিনাররা সুবিধা পান তাহলে সাকিবতো আছেনই। মিরাজও দুর্দান্ত ফর্মেই আছেন। সঙ্গে মোসাদ্দেকও একটু নিজেকে মেলে ধরতে পারলে কাজের কাজই হয়ে যায়। কিন্তু দিনশেষে অশান্তি যে ঘিরে ধরেছে তা থেকে বের হওয়া এখন গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে যে ম্যাচে এর প্রভাব পড়বে। আর ম্যাচে প্রভাব পড়া মানে হারা। হারলে সামনের ম্যাচগুলো খেলতেও সমস্যা হবে। তখন যে বড় স্বপ্ন মনে গেঁথে রাখা হয়েছে, তার ধারে কাছেও যাওয়া যাবে না। আর তাই সব ভুলে, চোটকে পিছনে সরিয়ে রেখে একাদশে যারা খেলবেন তারা সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারলেই হয়ে গেল। জয় ধরা দিতে পারে। ওয়ানডে ফরমেটে এখন বাংলাদেশ অনেক শক্তিশালী দল। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেটার ছাড়াও পাকিস্তানের মতো দলকে এশিয়া কাপে হারায় বাংলাদেশ। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে সাকিবকে ছাড়া জিতে শিরোপা ঘরে তুলে। তার মানে, যদি একাদশে থাকা ক্রিকেটাররা সামর্থ্য কাজে লাগাতে পারেন তাহলেও জয় সম্ভব। তাছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকাকে এর আগেও বিশ্বকাপে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে ২০০৭ সালের সুপার এইটে প্রোটিয়াদের হারিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালেতো দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজেই হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। দুই দলের মধ্যকার এখন পর্যন্ত ২০ ওয়ানডের মধ্যে ৩টিতে জিতেছে বাংলাদেশ। ১৭টিতে হেরেছে। দুই দলের মধ্যকার সর্বশেষ ২০১৭ সালে খেলা হয়। শেষ তিনটি ম্যাচে বাংলাদেশই হারে। তবে এবার বাংলাদেশ দলটি অনেক উজ্জ্বীবিত। দলের ক্রিকেটারদের মধ্যেও আছে আত্মবিশ্বাস। সেই আত্মবিশ্বাস এবং চাঙ্গা মানসিকতা নিয়ে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে আজ বিশ্বকাপে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। চোট সমস্যা দূর হয়ে গেলেই শুধু হয়। বাংলাদেশ ১৯৯৯ সাল থেকে বিশ্বকাপ খেলে। সেই থেকে ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭, ২০১১ ও ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ খেলেছে। এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ খেলছে বাংলাদেশ। একবারও ফাইনালে খেলতে পারেনি। সেমিফাইনালেও খেলার সুযোগ মিলেনি। তবে গত আসরেই বাংলাদেশ চমক জাগিয়েছে। কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে। এর আগে ২০১১ সালের বিশ্বকাপে রানরেটে পেছনে পড়ে গিয়ে গ্রুপপর্ব অতিক্রম করতে পারেনি। তবে ২০০৭ সালে আবার সুপার এইটে (দ্বিতীয় রাউন্ডে) খেলে। ২০০৩ সালে সবচেয়ে বাজে ফল হয়। কিন্তু প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নেমেই বাংলাদেশ হারিয়ে দেয় পাকিস্তানকে। সেই থেকে বাংলাদেশের বিশ্বকাপে টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোকে হারানোর পালাও শুরু হয়ে যায়। এখন বাংলাদেশ দল অনেক শক্তিশালী। যে কোন দলকে হারাতে সক্ষম। আজ দক্ষিণ আফ্রিকাকেও হারিয়ে দিয়ে বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করে ফেলতে পারে বাংলাদেশ।
×