ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাকরিচ্যুতসহ ১০ হাজার কর্মকর্তা কর্মী বেতন ও কর্মী তহবিলের ২৫৫ কোটি টাকা পায়

প্রশিকার ২ গ্রুপের দ্বন্দ্বে হাজার হাজার কর্মী দীর্ঘদিন পাওনা বঞ্চিত

প্রকাশিত: ১০:০৯, ৩০ মে ২০১৯

 প্রশিকার ২ গ্রুপের দ্বন্দ্বে হাজার হাজার কর্মী দীর্ঘদিন পাওনা বঞ্চিত

ফিরোজ মান্না ॥ প্রশিকার দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে প্রায় ৭ হাজার কর্মীকে পাওনা না দিয়ে বিনা নোটিসে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। চাকরিচ্যুতরা বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কেউ কেউ টাকা না পেয়ে মারাও গেছেন। চাকরিচ্যুতসহ মোট ১০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মী বেতন ও কর্মীকল্যাণ তহবিলের ২৫৫ কোটি পাওনা রয়েছে। প্রশিকার কাছে ২০ লাখ গ্রাহকের আমানত জমা রয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা। মোট ৬শ’ ৫ কোটি টাকা প্রশিকার কাছে চাকরিচ্যুত কর্মী ও সদস্যরা পাবেন। কিন্তু প্রশিকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ রয়েছে ৭শ’ থেকে ৮শ’ কোটি টাকা। প্রশিকা ঋণ নিয়েছে পিকেএসএফ, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও মাইডাস থেকে ঋণ ২শ’ কোটি টাকা। প্রশিকার ঋণের টাকা দীর্ঘদিন খেলাপী হয়ে আছে। এই টাকার সুদ চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়ছে। প্রশিকার দুই পক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। প্রশিকা নিয়ে কথা বলার জন্য কাজী ফারুক আহম্মদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তিনি ফোন ধরেননি। এ অংশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী খাজে আলমও ফোন ধরেননি। তবে পরিচালক অমলেন্দু বিকাশ বড়ুয়া বললেন, সারাদেশে তাদের যে কার্যক্রম ছিল তাতে এখন প্রশিকা দেশের সবচেয়ে বড় এনজিও থাকত। কিন্তু নিজেরা নিজেরা হানাহানি করে প্রতিষ্ঠানটিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একাংশের সীমিত আকারে কাজ চললেও বড় অংশই বন্ধ রয়েছে। লাখ লাখ আমানতকারী ও ১০ হাজারের বেশি কর্মী টাকা পাওনা রয়েছে। এদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে মারাও গেছেন। কয়েকশ’ কোটি টাকা গ্রাহকরা পেলেও কেউ কোন গরজ করছে না। আমরা দুই পক্ষকে এক করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। তিনি প্রশিকার এমন অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। প্রশিকার অপর অংশের চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, বাবার বয়স হয়েছে। তিনি এসব নিয়ে আর কোন কথা বলেন না। এমনকি তাকে তারা কেউ ডাকেনও না। পরে এই অংশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, তাদের অধীনে দেশের ৬৫ উপজেলায় প্রশিকার কার্যক্রম চলছে। এই ৬৫ উপজেলায় সাড়ে চার লাখ গ্রাহক নিয়মিত টাকা লেনদেন করতে পারছেন। বড় অংশই কোন কার্যক্রমে নেই। তাদের কাছেই বেশিরভাগ গ্রাহক ও কর্মীরা টাকা পাবেন। আমাদের আওতায় থাকা গ্রাহক ও কর্মীদের টাকা পয়সা বুঝিয়ে দিয়েছি। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশের এত প্রাচীন একটি প্রতিষ্ঠান হারিয়ে যাবে। তিনিও সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। প্রশিকাকে আবার এক করে কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর কয়েক দফা আবেদন করেছেন প্রশিকা কর্মী কল্যাণ সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা-প্রশিকার সাবেক পরিচালক ও বর্তমান জেলা পরিষদ সদস্য আলফাডাঙ্গা, ফরিদপুর শেখ শহীদুল ইসলাম ও প্রশিকা কর্মী কল্যাণ সমন্বয় পরিষদ সদস্য সচিব মিজানুর রহমান আরজু। বিষয়টি নিয়ে তারা প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছেন। তারা মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে দেশের বৃহত্তর প্রতিষ্ঠানটি আবার জীবন ফিরে পাবে। প্রশিকার সাবেক পরিচালক শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রশিকার খোলা অফিসগুলোতে ভিড় করলেও কোন কর্মী ও সদস্য টাকা পাচ্ছেন না। প্রশিকার একাংশ চালু থাকলেও বড় অংশই কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। বেতন বকেয়া রয়েছে, লাখ লাখ দরিদ্র নারী-পুরুষ ক্ষুদ্রঋণ সুবিধার অভাবে স্বকর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রশিকা বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা। স্বাধীনতা-উত্তর ১৯৭৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দারিদ্র্য বিমোচন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, সার্বজনীন শিক্ষা কার্যক্রম, স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম, অটিজম, পরিবেশ কৃষি, নিরাপদ খাদ্য প্রকল্প, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কার্যক্রমসহ প্রায় বাইশটি কর্মসূচী নিয়ে প্রশিকা কাজ করে আসছে। কিন্তু স্বনামধন্য এই উন্নয়ন সংস্থায় ২০০৯ সাল থেকে কর্তৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। কাজী ফারুক আহম্মদের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ, অপরটি এ্যাডভোকেট আব্দুল ওয়াদুদ ও সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। উভয় গ্রুপই প্রশিকার স্থাপনা ও কার্যক্রম দখল নিয়ে ব্যস্ত। বর্তমানে কাজী ফারুকের দখলে রয়েছে প্রশিকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়, (যা কার্যত বন্ধ ও নিষ্ক্রিয়) এবং মানিকগঞ্জে কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। অন্যদিকে এ্যাডভোকেট আব্দুল ওয়াদুদ ও সিরাজুল ইসলামের দখলে রয়েছে প্রশিকার আর্থিকভাবে সচল ষাটটির মতো উন্নয়ন এলাকাসহ পোল্ট্রি ও কৃষিফার্ম। এর বাইরে ১৬০ উন্নয়ন এলাকার অফিস তালাবদ্ধ রয়েছে। এই অফিসগুলোর কোন খোঁজ খবর উভয় গ্রুপের কেউ রাখছে না।
×