ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এবার রমজানে ইফতারে দ্বিগুণ খাবার পেয়ে মহাখুশি কারাবন্দীরা

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ২৯ মে ২০১৯

এবার রমজানে ইফতারে দ্বিগুণ খাবার পেয়ে মহাখুশি কারাবন্দীরা

মশিউর রহমান খান ॥ এবারের রমজানে অন্য বছরের তুলনায় ইফতারিতে দ্বিগুণ পরিমাণ খাবার পেয়ে মহাখুশি কারাবন্দীরা। ২০০৭ সাল থেকে প্রায় এক যুগ পর ইফতারিতে আগের চেয়ে দ্বিগুণ ইফতারি পাচ্ছেন প্রত্যেক কারাবন্দী। আগে প্রত্যেক রোজাদার বন্দীর বিপরীতে ইফতারির জন্য ১৫ টাকা বরাদ্দ থাকলেও বর্তমান সরকার বন্দীর কষ্ট লাঘবে ও রোজাদারদের কথা সুবিবেচনায় এনে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তা বাড়িয়ে ৩০ টাকা করেছে। রোজাদারদের ৩০ টাকার বাইরেও অন্য সময়ে বন্দীদের জন্য নির্ধারিত সকালের নাস্তার অর্থও ইফতারিতে যোগ করছেন কারা কর্তৃপক্ষ। সরকারের নির্দেশে পহেলা রমজান থেকে সব রোজাদার বন্দীর জন্য এই নির্দেশ কার্যকর করেছে কারা অধিদফতর। চলতি মাসের প্রথম দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি আদেশে দেশের ৬৮ কারাগারে এটি কার্যকর করা হয়েছে। ২৭ মে পর্যন্ত সারাদেশে ৮৬ হাজার ৬শ’ ৯৪ নারী-পুরুষ বন্দী আটক রয়েছেন। যার মধ্যে অল্প সংখ্যক ছাড়া প্রায় সব বন্দীই নিয়মিত রোজা পালন করেন বলে কারাসূত্রে জানা গেছে। ফলে সারাদিন রোজা রাখার পর সানন্দে ইফতার করছেন কারাবন্দীরা। বর্তমানে দেশের ৬৮ কারাগারে আটক সব রোজাদার বন্দী এই সুবিধা পাচ্ছেন। একইসঙ্গে প্রতিবছরের মতো সব কারা কর্তৃপক্ষ রোজা পালনের জন্য অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত মানসম্পন্ন ও পরিমাণে বেশি খাবার দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জ সূত্র জানায়, ইফতারিতে খেজুর, কলা, লেবু গুড়ের শরবত, পেঁয়াজু, আলুর চপ বা বেগুনি, জিলাপি, ছোলাবুট ও মুড়ি দেয়া হচ্ছে। কারাবন্দী রোজাদারদের সন্ধ্যার আগেই প্রতিটি ভবনের প্রতিটি কক্ষে কারা কর্মকর্তা কর্মচারীগণ ইফতারি পৌঁছে দিয়ে থাকেন। সূত্র জানায়, আগে ইফতারিতে একটি করে খেজুর দেয়া হতো বর্তমানে প্রত্যেক বন্দীকে ইফতারে ৬টি করে খেজুর দেয়া হচ্ছে। আগে কোন বন্দীকেই জিলাপি প্রদান না করলেও নতুন করে কমপক্ষে একটি করে জিলাপি প্রদান করা হচ্ছে। কোন কোন সময় একাধিক জিলাপিও পাচ্ছেন কারাবন্দীরা। এছাড়া শরবত হিসেবে লেবুর সঙ্গে গুড় মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে সুস্বাদু শরবত। চলমান অত্যন্ত গরমে সুস্বাদু শরবত খেয়ে বন্দীরা প্রশান্তি অনুভব করছেন বলে জানা গেছে। বন্দীর অধিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা চিন্তা করে বাধ্যতামূলক কলা সংযোজন করা হয়েছে। যদিও আগে মাঝে মাঝে কোন কোন কারাগার কর্তৃপক্ষ ইফতারিতে কলার ব্যবস্থা করলেও অনেক সময় কলার জন্য মূল খাবার থেকে অর্থ কর্তন করে তা ইফতারিতে সংযোজন করা হতো বলে জানা গেছে। তবে শুধুমাত্র এবার ইফতারির জন্যই ৩০ টাকা বরাদ্দ দেয়ায় মূল খাবার থেকে কোন ধরনের অর্থ কর্তন করে ইফতারিতে সংযুক্ত করতে হবে না। একইসঙ্গে অন্য সময়ের বন্দীর জন্য নির্ধারিত সকালের নাস্তার অর্থও সংযোজন হওয়ায় ইফতারিতে পরিমাণ আরও বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। ফলে কারাবন্দীরা সুষম বণ্টনের মাধ্যমে পরিমিত খাবারে রোজাদার বন্দীরা ইফতার করতে পারবেন বলে কারা সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৭ সালের আগে প্রতিটি বন্দীর ইফতারের জন্য সরকার মাত্র ১০ টাকা প্রদান করত। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কারা সংস্কারের অংশ হিসেবে তা বাড়িয়ে ১৫ টাকায় উত্তীর্ণ করে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উক্ত আদেশে পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে ইফতারিতে আর কোন অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো যাবে না বলে নির্দেশনা দেয়া হয়। ফলে ইচ্ছে আর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাজার দর উর্ধমুখী হয়েও পূর্বমূল্যেই বন্দীদের ইফতারি সরবরাহ করতেন কারা কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে কারা কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালের বন্দীর ইফতারিতে অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম তাই তা বাড়াতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রদান করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কারা অধিদফতর কর্তৃক রমজানের সময় উক্ত প্রস্তাব পাঠানোয় বিষয়টি নিয়ে তেমন আগ্রহী হয়নি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে বিষয়টি বিবেচনাধীর রয়েছে বলে কারা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। পরবর্তীতে কারা অধিদফতর থেকে চলতি বছর নতুন করে আবারও ইফতারিতে অর্থ বরাদ্দ দ্বিগুণ করতে প্রস্তাব দেয়া হয়।
×