ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাত্র চার ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ২৮ মে ২০১৯

  মাত্র চার ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দ্বিতীয় মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতু খুলে দেয়া হয়েছে। শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতু দুটি উদ্বোধনের পর তা যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। ফলে এই রুটে চলাচলকারীদের যানজটের দীর্ঘ ভোগান্তির অবসান হয়েছে। মহাসড়কে যানজটের ভোগান্তি আর থাকবে না। গজারিয়া উপজেলার জামালদী এলাকাসংলগ্ন মেঘনা ও বাউশিয়া এলাকাসংলগ্ন এলাকায় নির্মিত হয়েছে মেঘনা-গোমতী দ্বিতীয় সেতু। এই সেতু উদ্বোধনের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী লাখ লাখ মানুষের সড়ক পথের সীমাহীন ভোগান্তির অবসান হলো। এই পথে চলাচলকারীরা যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কনকনে শীতে বা প্রচন্ড গরমে পরিবার পরিজন নিয়ে রাস্তায় আটকে থেকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহায়। কিন্তু শনিবার এই সেতু দুটি উদ্বোধনের পর তাদের এই দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে বলে তারা মনে করছেন। ঈদের আগে সেতু দুটি খুলে দেয়ায় বেজায় খুশি এ রুটে যাতায়াতকারীরা। তারা আশা করছে এর ফলে দীর্ঘ সময়ের যানজট থেকে রেহাই পেয়েছে তারা। একই সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নির্ধারিত সময়ের ৬ মাস আগেই নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগে নতুন দ্বার খুলে গেছে। যানবাহন এবং চলাচল বেড়ে যাওয়ায় পুরনো দুই সেতু দিয়ে পারাপার কুলানো যাচ্ছিল না। তাই সারাক্ষণ এই দুই সেতু ঘিরে যানজট লেগেই ছিল। মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীত করা হলেও সেতু দুটি ছিল ২ লেনের। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মধ্যে পড়া কাঁচপুর, মেঘনা এবং মেঘনা-গোমতি ২ লেন সেতুর কারণে মহাসড়কের সুফল পাচ্ছিল না এই রুটে চলাচলকারীরা। এই রুটে তীব্র যানজট ছিল নিত্যসঙ্গী। এই পথের যাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে, সে লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় কাঁচপুর, মেঘনা এবং মেঘনা-গোমতী সেতু ৩টি নতুন করে নির্মাণ শুরু করে। দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতী সেতু দুটি খুলে দেয়ায় যাত্রী সাধারণ ও গণপরিবহনের চালকদের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে। কেননা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হলেও প্রথম মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতু দুই লেনের হওয়ায় গজারিয়া উপজেলা অংশে মহাসড়কের ১৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়তে হতো যাত্রী সাধারণ ও পরিবহন চালকদের। মহাসড়কের গজারিয়া অংশে নিত্য যানজট লেগে থাকত। ছুটির দিনে মহাসড়কে যানজট থাকত আরও বেশি। আর ঈদ, পূজা এসব বন্ধে তো কথাই নাই। কখনও কখনও ১/২ দিন যাত্রীদের রাস্তায়ই থাকতে হত। প্রতিনিয়ত যানজটের কবলে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে অলস বসে থাকতে হতো যানবাহনে। এতে দীর্ঘদিন ধরেই এ মহাসড়কে যাত্রীদের কর্ম-ঘণ্টা অপচয় হয়ে আসছিল। ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছিল। তবে দ্বিতীয় মেঘনা ও মেঘনা গোমতী সেতু খুলে দেয়ার মধ্য দিয়ে এখন যানজট ছাড়াই নির্বিঘ্নে মহাসড়ক পাড়ি দিতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যাত্রী সাধারণ ও পরিবহন চালকরা। বাসচালক সবুজ মিয়া জানান, এর আগে বন্দর থেকে মাল নিয়ে ঢাকা পৌঁছাতে ৪/৫ ঘণ্টার জায়গায় ২/৩ দিন লেগে যেত। এতে অনেক সময় মাল নষ্ট হয়ে যেত। আর পথে আমাদের খরচ তো আছেই। খাওয়া-দাওয়া, চাঁদা তো আছেই সেই সঙ্গে ছিনতাইয়েরও ভয় ছিল। এখন মনে হচ্ছে এ আজাব থেকে আমরা মুক্তি পাব। ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে ঈদ করতে শিক্ষক সাহেদ চৌধুরী যাচ্ছেন চট্টগ্রাম। তিনি বলেন, আজ যেভাবে এসেছি, মনে হচ্ছে স্বপ্ন। ঢাকা থেকে ৪০ মিনিটে মেঘনা সেতুতে পৌঁছে গেছি। রাস্তার কোথাও কোন যানজট নাই। রাস্তা যদি এমন সবসময় থাকত তাহলে স্বস্তিতে চলাফেরা করতে পারতাম। গজারিয়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোঃ কবির হোসেন খান বলেন, শনিবার উদ্বোধনের পর থেকে মহাসড়কে কোন যানজট নাই। সোমবার এই পথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে সময় লেগেছে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ ঘণ্টা। সব ধরনের যান চলছে নির্বিঘ্নে। তবে এই মহাসড়কে শনিবার, রবিবার ও সোমবার গাড়ির চাপ থাকে কম। তাই যানজটও থাকে কম। এই তিনদিন চট্টগ্রাম বন্দরে মাল লোড করা হয়। মঙ্গলবার সকাল থেকে এই গাড়িগুলো লোড করা মাল নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা করে। মঙ্গলবার বিকেল বা সন্ধ্যায় এই গাড়িগুলো গজারিয়ায় ঢোকে। তখন থেকে মহাসড়কের গজারিয়া অংশে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। মঙ্গলবার, বুধবার, বৃহস্পতিবার মহাসড়কের গজারিয়া অংশে যানজট থাকে। যদি মঙ্গলবার, বুধবার, বৃহস্পতিবার মহাসড়কে যানজট না পড়ে তবে ধরে নিতে হবে মহাসড়কে যানজট একেবারে থাকবে না। তবে যানজট আর আগের মতো আর হবে না। সেতু দুটি নির্মাণের সুফল জনগণ পাবেনই। তিনি আরও বলেন, স্বাভাবিকভাবে মহাসড়কের এই অংশে প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে আড়াই হাজার যানবাহন চলাচল করে। তবে ঈদের সময় দেখা গেছে ৩ দিনে ১৬/১৭ হাজার গাড়িও মহাসড়কের এই অংশ দিয়ে চলাচল করে। ঈদের আগে এই নতুন দুই সেতু খুলে দেয়ার ফলে ঘরমুখো মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। মুন্সীগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোঃ হারুন-অর-রশীদ জানিয়েছেন, চার লেন বিশিষ্ট এই সেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে এই মহাসড়কে যাতায়াতকারীদের দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘব হচ্ছে। এই সেতু দুটি সচল হওয়ার পর সড়ক পথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়া যাবে মাত্র চার ঘণ্টায়। চার লেনের মহাসড়কে একমুখী চলাচলের সুবিধায় তীরের বেগে ছোটে যানবাহনগুলো। এতে মানুষের দুর্ভোগ যেমন লাঘব হবে, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। পরিবহন খরচ হ্রাস পাবে। যানজট নিয়ে আর স্থানীয় প্রশাসনেরও পেরেশানি হতে হবে না। এই নতুন দুই সেতু চালুর মধ্যদিয়ে বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রামের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।
×