ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

বামফ্রন্টের শোচনীয় পরাজয়, জিতেছে মাত্র ৬ আসনে

প্রকাশিত: ০৮:১০, ২৫ মে ২০১৯

 বামফ্রন্টের শোচনীয় পরাজয়, জিতেছে মাত্র ৬ আসনে

বিশাল আয়তনের ভারতে কখনও ক্ষমতায় যেতে পারেনি বামরা; তবে ক্ষমতায় কে যাবে, তা নির্ধারণের ভূমিকায় তারা বরাবরই আলোচনায় ছিল। একবার বামনেতা জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রও তৈরি হয়েছিল। ওয়েবসাইট। এবারের লোকসভা নির্বাচনে বামদের অবস্থা সঙ্গিন; সারা ভারতে প্রায় সাড়ে পাঁচ শ’ আসনের মধ্যে মাত্র ছয়টি আসনে জিতেছে বামফ্রন্ট। নিজেদের এক সময়ের দুর্গ পশ্চিমবঙ্গ থেকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। ভারতের ইতিহাসে এত খারাপ ফল বামদের কখনও হয়নি। ২০০৪ সালের নির্বাচনে বামফ্রন্টে নিজেদের ইতিহাসে সর্বাধিক ৫৩টি আসনে জয়ী হয়েছিল। তারপর থেকে কমছে আসন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বামফ্রন্টের আসন সংখ্যা ১০টিতে নেমে এসেছিল। এবার তারও অর্ধেক কমে গেছে। ভরাডুবির জন্য বিজেপির ধর্মীয় বিভেদমূলক প্রচারকে দায়ী করলেও বামফ্রন্টের বড় শক্তি সিপিএম বলেছে, এই শোচনীয় পরাজয়ের কারণ খুঁজে দেখবেন তারা। বৃহস্পতিবার ফল ঘোষণার পর সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই হারের কারণ বের করে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী কর্মপন্থা সাজাবেন তারা। গত কয়েকদফায় ভোটের পর একই ধরনের কথা আসছে বাম নেতাদের কাছ থেকে; তাতেও পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। ত্রিপুরার পর পশ্চিমবঙ্গ, এখন কেরলেও নিজেদের জমিন খুঁজে বেড়াতে হচ্ছে লাল পতাকাধারীদের। আগের সব ভোটের ফল ॥ ভারতে ১৯৫১ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচনে বামদের আসন ছিল ১৬টি; এরপর ১৯৫৭ সালে ২৭টি, ১৯৬২ সালে ২৯টি, ১৯৬৭ সালে ৪২টি, ১৯৭১ সালে ৪৮টি, ১৯৭৭ সালে ২৯টি, ১৯৮০ সালে ৪৭টি আসন ছিল তাদের কব্জায়। ১৯৮৪ সালে ২৮টি, ১৯৮৯ সালে ৪৫টি, ১৯৯১ সালে ৪৯টি, ১৯৯৬ সালে ৪৪টি, ১৯৯৮ সালে ৩৯টি, ১৯৯৯ সালে ৩৭টি, ২০০৪ সালে ৫৩টি আসন ছিল বামদের। এর পর পতনের ধারায় ২০০৯ সালে ২০টি, ২০১৪ সালে ১০টিতে নেমে আসে আসন। এবার সিপিএম তিনটি, সিপিআই দুটি ও আরএসপি একটি আসনে জিতেছে। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় কোন আসন নেই তাদের; কেরলে আসন কমে দুটি হয়েছে; মুখ রক্ষায় ভূমিকা রেখেছে তামিলনাড়ুর চারটি আসন। তাও আবার ডিএমকের সঙ্গে সমঝোতা করে। কেরল ॥ সারা ভারতে যখন বিজেপির জয়জয়কার তখন কেরলে উল্টো স্রোত বইছিল। তাতে মুখ ফেরেনি এই রাজ্যে এক সময় ক্ষমতাসীন বামফ্রন্টের। বিজেপিবিরোধী ভোট গেছে কংগ্রেসের কব্জায়। রাজ্যটির ২০ আসনের ১৫টিই পেয়েছে কংগ্রেস। ত্রিপুরা ॥ ত্রিপুরায় রাজ্য নির্বাচনে বিজেপির কাছে হেরে যাওয়ার পর লোকসভায় আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি বামফ্রন্ট। দুটি আসনের সঙ্গে প্রায় ৫০ শতাংশ ভোটও গেছে তাদের পদ্মফুলে। বামরা পেয়েছে ১৭ শতাংশ ভোট। যা কংগ্রেসের চেয়েও ৮ শতাংশ কম ভোট। পশ্চিমবঙ্গ ॥ দুই যুগের বেশি সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গ শাসন করে রাজ্যটিকে নিজেদের দুর্গ বানিয়েছিল বামরা; সেই দুর্গে এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে তারা। এই প্রথম আসন তো শূন্য হয়েছেই, ভোটও নেমে এসেছে সাড়ে ৭ শতাংশে। অথচ গতবার দুটি আসনে জিতলেও বামদের ভোট ছিল ২৬ শতাংশ। এই রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়ে সর্বাধিক আসনে জিতলেও তাদের সঙ্গে টক্কর দিয়েছে বিজেপি ৪০ শতাংশ ভোট নিয়ে। বিজেপির গতবারের ভোট ১০ শতাংশ এবার চারগুণ বেড়ে যাওয়ায় মনে করা হচ্ছে, বাম ভোটাররা এবার ভোট দিয়েছে গেরুয়াদের। হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপিকে সমর্থনের কথা বামফ্রন্ট নেতারা স্বীকার না করলেও স্থানীয় পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের তারা আটকে রাখতে পারেননি। রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাম কর্মীদের অনেকে ভোটকেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির ছাতার নিচে গেছেন, তা প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। এর আগে তৃণমূলেও এভাবে ভিড় করেছিলেন বাম সমর্থকরা। এমনকি বিধানসভার এক নির্বাচনে বামফ্রন্টের প্রার্থীর পরের নির্বাচনেই তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার নজির দেখা গিয়েছিল। এবারের লোকসভা নির্বচনে যাদবপুরে বিকাশ ভট্টাচার্য ছাড়া আর কোন আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি বামরা। বেশিরভাগ প্রার্থীই জামানত হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। এক সময় পশ্চিমবঙ্গে ছিল বামফ্রন্টের তথা সিপিএমের একচ্ছত্র আধিপত্য, এবার তাদের আসন একটিও নেই। শোচনীয় এই হারের কারণ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র দেখিয়েছেন এভাবে, বাংলায় তৃণমূলের স্বৈরশাসন, প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা আরএসএস-বিজেপির শক্তিসঞ্চয়ে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে। মেরুকরণের ভোটে রাজ্যের ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ হয় তৃণমূল, নয় বিজেপিকে বেছে নিয়েছেন। আমাদেরও গভীরে গিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে, আত্মসমীক্ষা করতে হবে বলে আগের মতোই বলেছেন এই সিপিএম নেতা। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও কেরল- নিজেদের পুরনো দুর্গগুলো হারানোর বিপরীতে নতুন কোন রাজ্যেও অবস্থান নিতে পারেনি বামফ্রন্ট। এবার বিহারের বেগুসরাইয়ে সিপিআইর তরুণ প্রার্থী কানহাইয়া কুমারকে নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছিল লাল শিবির। জহরলাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক এই ভিপি আলোড়ন তুললেও হেরেছে চার লাখেরও বেশি ভোটে।
×