ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রির মাধ্যমে যুদ্ধ শুরু

প্রকাশিত: ১০:১০, ১৮ মে ২০১৯

 বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রির মাধ্যমে যুদ্ধ শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুরু হলো টিকেট যুদ্ধ। শুক্রবার দেশের উত্তরাঞ্চলসহ চার বিভাগে আসন্ন ঈদ উপলক্ষে বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি মধ্য দিয়ে যুদ্ধের যাত্রা শুরু হয়। বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি চলবে অন্তত চারদিন। তবে যতক্ষণ টিকেট আছে ততক্ষণ দেয়া হবে। প্রথম দিন বিক্রি হয়েছে ২৯ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত যাত্রার টিকেট। গাবতলী, মাজার রোড, কল্যাণপুরসহ বিভিন্ন বাসের কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে এক থেকে চার জুনের টিকেটের চাহিদাই বেশি। তবে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিটি বাসের আট থেকে ১০টি টিকেট এ্যাপের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে। একটি বাস কোম্পানি ঝামেলা এড়াতে অনলাইনে সব টিকেট বিক্রি করছে। এতে যাত্রীদের কিছুটা হলেও দুর্ভোগ কমবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টারের সামনে এ্যাপের মাধ্যমে টিকেট বিক্রির ঘোষণা সম্বলিত ব্যানার ঝুলতেও দেখা গেছে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে এসি বা সাধারণ টিকেট না পাওয়া, দুর্ভোগ, বাড়তি ভাড়া, সিরিয়াল না মানা সহ নানা অভিযোগের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের টিকেট বিক্রি কার্যক্রম শেষ হয়। তবে দীর্ঘ সময় কষ্টের পরও যারা সোনার হরিণ টিকেট হাতে পেয়েছেন, তারা প্রাণ খুলে একবার অন্তত হাসি দিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়জনকে টেলিফোন করেও টিকেট প্রাপ্তির খবর জানাতে ভুলেননি। টিকেট পাওয়ার পর বাড়তি চিন্তা যোগ হয়েছে, ঈদ যাত্রায় সড়ক যানজটমুক্ত থাকবে তো। এদিকে আগামী ২২ মে থেকে ঢাকার পাঁচ পয়েন্টে অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু করতে যাচ্ছে রেলওয়ে। জয়দেবপুর রেল স্টেশন থেকেও দেয়া হবে অগ্রিম টিকেট। এবার প্রতিদিন ৯৭ হাজার অগ্রিম টিকেট বিক্রি করবে রেল মন্ত্রণালয়। ২২ রোজা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য লঞ্চের কেবিনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হতে পারে। বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রির ধূম মূলত আসাদগেট থেকে গাবতলী পর্যন্ত বাস কাউন্টারগুলোতেই বেশি। অন্যান্য কাউন্টারে তেমন লোকজনের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। গাবতলীর বিভিন্ন বাস কাউন্টার ঘুরে জানা গেছে, চলতি মাসের শেষদিন আর শুরুর মাসের প্রথম চার দিনের টিকেটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কারণ ২৪ রমজান বা ৩০ মে দিনটি হলো বৃহস্পতিবার। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ২৭ রমজান বা ২ জুন শবে কদরের ছুটি। ৩ জুন সবশেষ কর্মদিবস। ৪ থেকে ৬ জুন বা মঙ্গল থেকে বৃহস্পতিবার ঈদের ছুটি। এরপর ৭ ও ৮ জুন শুক্র ও শনিবার। লম্বা ছুটির ফাঁদ। এই হিসেবে ৫ জুন ঈদ-উল-ফিতরের সম্ভাব্য দিন ধরে টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। অনেকে এর মধ্যে কেবল ৩ জুন ছুটি নিয়ে বাড়ির পথে ৩০ জুনই রওনা করবেন। সকাল থেকে টিকেট প্রত্যাশীদের মুখ থেকে নানা বিড়ম্বনার কথা শোনা যায়। তাদের অভিযোগ, প্রভাবশালীদের মন রাখতে সামনের দিকের ভাল আসনগুলো আগে থেকেই বুক করে রেখেছেন মালিকরা। এজন্য তৈরি হয়েছে টিকেটের কৃত্রিম সঙ্কট। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাদের জানান, তিনি যাবেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। টিকেট কাউন্টারে এসেছিলেন রাত সাড়ে ৩টায়। সকাল ৮টার দিকে কাক্সিক্ষত টিকেট পেলেও দাম নিয়ে তার অভিযোগ রয়েছে। উল্লাপাড়ার নন এসি টিকেটের দাম তিনশ টাকা। কিন্তু নেয়া হয়েছে ৪২০ টাকা। একইভাবে এসি বাসের টিকেট ৭০০ টাকার বদলে ১ হাজার ৩০০ টাকা নেয়ার অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। জীবন নামের একজন অভিযোগ করেন, প্রতি ঈদেই বাড়তি ভাড়া নেয় পরিবহন কোম্পানিগুলো। নওগাঁর ভাড়া অন্য সময় ৪০০ টাকা। আজ নিচ্ছে ৫৯০ টাকা। এটা সব সময় করে। এদিকে নাবিল পরিবহনের টিকেট অনলাইনে দেয়া হচ্ছে। কাউন্টার থেকে টিকেট বিক্রি হচ্ছে না বলে সেখানে ভিড়ও নেই। এছাড়া দেশ ট্রাভেলস, সোহাগ পরিবহনের ঈদের অগ্রিম টিকেটও দেয়া হচ্ছে অনলাইনে। গাবতলীতে এসআর ও আলহামরা পরিবহনের কাউন্টারের সামনে টিকেট প্রত্যাশীদের ভিড় দেখা গেছে। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, এস আর পরিবহনের এসি বাসের অগ্রিম টিকেট দিচ্ছে না। শুভ নামে আরেকজন বলেন, ‘টিকেটের জন্য আগে এসে বসে থাকলাম। কিন্তু এখন বলছে এসি টিকেট দেবে না। এটা আগে জানানো উচিত ছিল, তাহলে এখানে কষ্ট করে আসতাম না। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এস আর পরিবহনের ব্যবস্থাপক আমিন নবী বলেন, কাউন্টার এবং অনলাইনে একই সময়ে টিকেট বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে সিরিয়াল ঠিক রাখা যাচ্ছে না। এসি বাস কম বলে এখন টিকেট দেয়া হচ্ছে না বলে জানান তিনি। ঈদের সময় এসি বাসের টিকেট নরমাল চেয়ার কোচের মতো বিক্রি করা হয় না বলে জানান হানিফ পরিবহনের ব্যবস্থাপক (উত্তরাঞ্চল) মোঃ মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘যারা পারমানেন্ট যাত্রী, তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে এসি বাসের টিকেট দেয়া হয়। তাছাড়া এসি বাসের ব্র্যান্ড রয়েছে। আমাদের ভলভো বাস রয়েছে। কারও কারও স্ক্যানিয়া, হুন্দাই বাস আছে। ব্র্যান্ড ভেদে টিকেটের দাম নির্ধারণ করে মালিক পক্ষ। এ ক্ষেত্রে বিআরটিএ’র নির্ধারিত কোন মূল্য নেই। এসি বাসের জ্বালানিসহ পরিচালনা ব্যয় বেশি। তাই ভাড়াও বেশি রাখা হয় জানিয়ে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ঈদের সময় এসি বাস ঢাকা থেকে যাত্রী পূর্ণ করে ছাড়বে। কিন্তু ফিরবে একেবারে ফাঁকা। তাই এসি বাসের টিকেটে লাভ নেই। আমরা পঞ্চগড়ে এসি বাসের প্রতিটি টিকেটের জন্য ভাড়া নিচ্ছি দুই হাজার টাকা। মোশররফ হোসেনের দাবি, চেয়ার কোচের ভাড়া বিআরটিএ নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী রাখা হচ্ছে। বরং বছরের অন্যান্য সময় তারা কম দামে টিকেট বিক্রি করেন। তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলায় বিভিন্ন রুটে হানিফ পরিবহনের বাস চলাচল করে। প্রতিদিন এসব রুটে ২০০টি বাস যাত্রী পরিবহন করে থাকে। এর মধ্যে ২০টি এসি বাস রয়েছে। ঈদের সময় বাড়তি ট্রিপ দেয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে তাদের। সবকিছু নির্ভর করছে সড়কপথ যানজট মুক্ত থাকার ওপর। অনলাইনে বাসের টিকেট ॥ অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে বাসের টিকেট। তাই, রেলের মতো অনলাইনেও এ বছর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বাসের টিকেট। ঘরে বসেই যাত্রীরা কিনে নিচ্ছেন নির্ধারিত যাত্রার টিকেট। উত্তরবঙ্গগামী নাবিল পরিবহন তাদের সব টিকেট অনলাইনে বিক্রি করছে। এবার অগ্রিম টিকেট বিক্রির জন্য তাদের কোন কাউন্টার খোলা হয়নি এ পরিবহন কোম্পানির পক্ষ থেকে। শ্যামলী পরিবহন তাদের প্রতিটি বাসের ৮ থেকে ১০টি টিকেট অনলাইনে বিক্রি করেছে। এনা পরিবহন তাদের টিকেট সহজ এ্যাপস এর মাধ্যমে বিক্রি করছে। পাশাপাশি কাউন্টারেও পাওয়া যাচ্ছে। আর গ্রীনলাইন পরিবহন কাউন্টারের পাশাপাশি ‘পরিবহনডটকম’ নামে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকেট বিক্রি করছে। সহজ এ্যাপ কর্তৃপক্ষ জানায়, এবার ৪৫টি বাসের টিকেট তাদের এ্যাপস -এ পাওয়া যাচ্ছে। এনা পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ আতিক জানান, অনেকেই ঘরে বসে টিকেট কাটতে চান। তাদের জন্য সহজ এ্যাপ রয়েছে। ঘরে বসেই এই এ্যাপটির মাধ্যমে টিকেট কাটতে পারবেন। কাল থেকে তাদের অগ্রিম টিকেট দেয়া শুরু হবে। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটে প্রতি ১৫ মিনিট পর পর তাদের বাস চলে। এছাড়া উত্তরবঙ্গের কয়েকটি রুটে নতুন করে এনা পরিবহন চলাচল শুরু করেছে। গ্রীনলাইন পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার জানান, তাদের সবগুলো বাস বিলাসবহুল। এজন্য অগ্রিম টিকেট কিনতে যাত্রী ভিড় না থাকলেও নির্ধারিত তারিখের আগেই টিকেট বিক্রি হয়ে যায়। বিশেষ করে ৩ জুন ও ৩০ মে এই দুই তারিখের টিকেট এখন থেকেই বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন বাস কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত মানুষের লাইন ছিল। ৩ জুন বেশিরভাগ গার্মেন্টস ছুটি হবে বলে ওইদিন টিকেট চাহিদা থাকবে সবচেয়ে বেশি। আর সরকারী ছুটির হিসাব মিলিয়ে ৩০ মে মানুষ ঢাকা ছাড়া শুরু করবেন। যে কারণে ওই দিনের টিকেট চাহিদা অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে, জানান বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশ।
×