ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

চরম অসন্তোষের মুখে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ১৫ মে ২০১৯

চরম অসন্তোষের মুখে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব

মুনতাসির জিহাদ ॥ ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণায় রীতিমতো প্রতিরোধের মুখে পড়েছে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। বিবাহিত, রাজাকারের সন্তান, চাকরিজীবী, মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে মধুর ক্যান্টিনে প্রতিবাদী পদবঞ্চিত নেতা-নেত্রীদের ওপরে হামলার ঘটনায় তোলপাড় চলছে। এদিকে কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দিয়েছেন প্রতিবাদকারীরা। কমিটি পুনর্গঠন না হলে গণ পদত্যাগেরও হুমকি দিয়েছেন তারা। কমিটিতে পদপ্রাপ্ত নেতাদের অনেকেও কমিটিতে নিয়ে তাদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন। পদবঞ্চিতদের বিশেষত নারী নেত্রীদের ওপর হামলার ঘটনায় তারা নিন্দা জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে ৩০১ সদস্যের মধ্যে ১০০ জন নেতার যে কোন সময় পদত্যাগ করার গুঞ্জন উঠেছে। তবে ছাত্রলীগ সভাপতি বলছেন, বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি প্রমাণ পেলে তাদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হবে। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করেন পদবঞ্চিতরা। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কমিটি পুনর্গঠন করা না হলে একযোগ পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন নবগঠিত কমিটির উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক তিলোত্তমা শিকদার, উপগ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ফরিদা পারভিন, উপ-পাঠাগার সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা, উপ-ছাত্রবৃত্তি সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা, উপ-আপ্যায়ন সম্পাদক খাজা খয়ের সুজন, ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত, আইন অনুষদ ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল শুভ প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিগত কমিটির প্রচার সম্পাদক সাইফ উদ্দিন বাবু বলেন, বিগত দিনগুলোতে যারা সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের একটি বৃহৎ অংশকে বাদ কিংবা সঠিক মূল্যায়ন না করে ছাত্রলীগে নিষ্ক্রিয়, সাবেক চাকরিজীবী, বিবাহিত, অছাত্র, গঠনতন্ত্রের অধিক বয়স্ক, বিভিন্ন মামলার আসামি, মাদকসেবী, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে আজীবন বহিষ্কৃতসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পদায়ন করা হয়েছে। এমন ব্যক্তিদের পদায়ন ছাত্রলীগের একজন নিবেদিত প্রাণকর্মী হিসেবে আমাদের ব্যথিত করেছে। লিখিত বক্তব্যে তিনি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে আরও খোঁজ-খবর নিয়ে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান। দাবি মানা না হলে অনশন, বিক্ষোভ ও একযোগে পদত্যাগ করার হুমকি দেন নবগঠিত কমিটির উপ সাংস্কৃতিক সম্পাদক নিপু ইসলাম তন্বী। তিনি ছাত্রলীগের শামসুন্নাহার হল শাখার সভাপতি ও ডাকসুরও সদস্য। সোমবার সন্ধ্যায় মধুর ক্যান্টিনে হামলার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিএম লিপি আক্তার বলেন, সোমবার সংবাদ সম্মেলনের সময় যারা হামলা করেছে তাদের দিয়েই তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আমরা এই কমিটি মানি না। ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর নিদের্শেই এই হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। হামলার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন ॥ এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় মধুর ক্যান্টিনে পদবঞ্চিতদের সংবাদ সম্মেলনে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা হলেন নবগঠিত কমিটির সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, আইন বিষয়ক সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পল্লব কুমার বর্মণ। হামলার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির লক্ষ্যে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কমিটির দুই সদস্য আল নাহিয়ান খান জয় ও ফুয়াদ হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদবঞ্চিতদের ওপর হামলার ঘটনায় তারাও ক্ষুব্ধ। আইন সম্পাদক ফুয়াদ হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, কারা হামলা করছে তার খোঁজ নিচ্ছি। আহতদের সঙ্গেও কথা বলব। হামলাকারীদের বিষয়ে আমরা কঠোর। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের নাম তদন্ত প্রতিবেদন আকারে জমা দেয়া হবে। আহতদের দেখতে গিয়ে ক্ষোভের মুখে শোভন-রাব্বানী ॥ সোমবার রাতে ঢাকা মেডিক্যালে আহতদের দেখতে গিয়ে তীব্র ক্ষোভের মধ্যে পড়েছেন ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। তাদের তোপের মুখে পড়ে বিশ মিনিটের মতো অবস্থান করে দেখা করতে না পেরে ফেরত আসেন তারা। কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী রাত পৌনে এগারোটার দিকে মেডিক্যালের জরুরী বিভাগে আহতদের দেখতে গেলে সেখানে আহতদের সঙ্গে থাকা শতাধিক নেতাকর্মী বাধা দেয়। প্রায় আধাঘণ্টা বাগ্-বিত-ার পর চলে আসেন শোভন- রাব্বানী। জানা যায়, শীর্ষ দুই নেতা মেডিক্যালের গেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পথরুদ্ধ করে রোকেয়া হলের সভাপতি ডাকসুর ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক বিএম লিপি আক্তার প্রশ্ন করেন, রাজাকার পুত্র, বিবাহিত, অছাত্রদের কমিটিতে রেখেছেন, আমাদের মতো ত্যাগীদের কেন মূল্যায়ন করেন নি? উত্তরে গোলাম রাব্বানী বলেন, সামনে মূল্যায়ন করা হবে। একই সময় আল আমিন বলেন, যাদের কমিটিতে রেখেছেন তারা কোন বিবেচনায় আমাদের চেয়ে যোগ্য? ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন বলেন, সব কিছু বিবেচনা করা হবে। আমরা আহতদের দেখতে আসছি। এ সময় সাবেক কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাইফুদ্দিন বাবু বলেন, ত্যাগী নেতাদের মারধর করে, কোন সিম্পেথি নেয়ার জন্য এসেছেন। কোনভাবেই এই নাটক করতে দেয়া হবে না। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটির পরে দুইজনেই চলে যান। এ সময় উভয় পক্ষের নেতাকর্মীরা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকে। ‘মানবতার কথা বলে বোনদের ওপর হামলা কেন, বিচার চাই বিচার চাই; বিবাহিতরা কমিটিতে কেন, মানি না মানব না; রাজাকার পুত্র কমিটিতে কেন, মানি না মানব না’ বলে পদবঞ্চিতরা স্লোগান দেয়। অপর দিকে শোভন-রাব্বানীর অনুসারীরা ‘বিদ্রোহীদের কালো হাত, ভেঙ্গে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ বলে পাল্টা স্লোগান দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতাদের ক্ষোভ ॥ নতুন কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুক পোস্টে ছাত্রলীগ সভাপতির কঠোর সমালোচনা করেছেন সংগঠনটির বিগত কমিটির সদস্য জেরিন দিয়া। তিনি লিখেছেন, রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং গোলাম রাব্বানী ভাই আপনাদের মধুভর্তি মেয়ে লাগে। বড় বড় প্রোগ্রামে মেয়েদের মুখ না দেখলে তো আপনাদের মন ভরতো না। শোভন ভাই আপনি একদিন আমাকে সবার সামনে বলছিলেন কী রে চেহারা সুন্দর আছে; তো সেজেগুজে আসতে পার না! আমি সেজেগুজে আসতে পারি নাই দেখে আমাকে কমিটিতে রাখলেন না? আপনারা যেসব মেয়েকে কমিটিতে রেখেছেন তারা কয়দিন থেকে রাজনীতি করে। আপা কি জানেন? আর নিজে বিবাহিত বলে কমিটিতে দুনিয়ার বিবাহিত মেয়েদের রেখেছেন! আর গোলাম রাব্বানী ভাই আমাকে সবার সামনে বলছিলেন দুইদিনের মেয়ে কেমনে পোস্ট পাইছো বুঝি নাই! এই বিবাহিত বিতর্কিত কমিটি মানি না। আমাদের শ্রমের মূল্য দিতে হবে আপনাদের। নবগঠিত কমিটিতে জাবির মাত্র দুজন, তীব্র ক্ষোভ ॥ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ৩০১ সদস্যের হলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মাত্র দু’জন ছাত্রনেতা তাতে স্থান পেয়েছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এই শাখার নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, এই বিশাল কমিটিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে বঞ্চিত করা হয়েছে। জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সাবেক নেতা নবগঠিত কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। তারা হলেন সহ-সভাপতি পদে আরিফুল ইসলাম আরিফ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-সম্পাদক পদে মাহবুবুর রহমান সালেহী। তারা জানায়, এই দুই জন ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন নেতা পদ প্রত্যাশী ছিলেন। জাবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমরান হোসেন ফেসবুকে লিখেছেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়জনকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদে মূল্যায়ন করা হলো? হুদায় এরা রাজনীতি করে! যে গুটি কয়েকজনকে মূল্যায়ন করা হইছে এরা গুণেই হয়তো। পোস্টেড হওয়ার প্রধান শর্ত ঢাবিতে পড়তে হবে। পদপ্রত্যাশী মোঃ মুরশিদুর রহমান আকন্দ হতাশা জানিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, রাজনীতি করে দলের স্বার্থে, সংগঠনের স্বার্থে মিথ্যাকে নিশ্চুপ বরণ করে কারাবরণ করেছি। মমতাময়ী জননীর জন্য প্রাণটা দেয়া বাদে সংগঠনের জন্য সব করেছি। চোখ দিয়ে অশ্রু গড়াচ্ছে। দেশরতœ শেখ হাসিনা কমিটি করবার জন্য যেসব দিক মূল্যায়নের কথা বলেছেন, তার কোন বিবেচনায় অযোগ্য হলে আজীবনের জন্য কারাবরণ করতে রাজি। কিন্তু এ কেমন সাজা! কমিটিতে পদপ্রাপ্ত বিকর্তিত যারা ॥ এস এম তৌফিকুল ইসলাম সাগর সহ-সভাপতির পদ পেয়েছেন। তারা বাবা সোহরাব হোসেন কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মামলা করা হয়। গাজীপুরের কাউলতিয়া ইউনিয়ন শাখার আহ্বায়ক কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন মোঃ রুহুল আমিন। ২০০৬ সালে গঠিত হওয়া ছাত্রদলের এই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন মোঃ শাহাদাত হোসেন। সেই রুহুল আমিন ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহ-সভাপতির পদ পেয়েছেন। ৬ নম্বর সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান খানের বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক ও ইয়াবা সেবন এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মল চত্বরে পহেলা বৈশাখের কনসার্টে আগুন দেয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। তাছাড়া ১৩ নম্বর সহ-সভাপতি শাহরিয়ার কবির বিদ্যুতের বিরুদ্ধে মাদক মামলা রয়েছে। ৭ নম্বর সহ-সভাপতির পদ পেয়েছেন সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির বরকত হোসেন হাওলাদার। তিনি ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব হারান। এর আগের বছর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাকে ছাত্রলীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ আকন্দ সহ-সভাপতি হয়েছেন। সোহাগ জাকির কমিটির এই সদস্যকে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছিল। সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল গোপালগঞ্জে একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি। আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চেীধুরী শোভনের আপন ছোট ভাই মোঃ রাকিনুল হক চৌধুরী। রাজনীতিতে তার নিষ্ক্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও ছাত্রলীগ সভাপতির ছোটভাই বলে সম্পাদক পদ পাওয়াতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে। বিবাহিত হয়েও পদ পেয়েছেন যারা ॥ সহ-সম্পাদক পদে সামিয়া সরকার। তার বাবা আবদুর সবুর গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। সহ-সভাপতি সোহানী হাসান তিথীও বিবাহিত বলে জানা গেছে। উপ-পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন রুশি চৌধুরী। তিনি কণ্ঠশিল্পী আশিকুর রহমান মেহরাবের স্ত্রী। সহ-সভাপতি হয়েছেন মুনমুন নাহার বৈশাখী। তার বাবা মোঃ জালাল উদ্দীন জামায়াতের রোকন ও বড় ভাই বুলবুল ইসলাম মাগুরা ২নং ইউনিয়ন শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। মুনমুন নাহার বৈশাখী যাতে আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে কোন ধরনের কর্মকা- যাতে অন্তর্ভুক্ত না হয় তার জন্য গত বছর নবেম্বরেই ২নং ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগ প্রত্যয়নপত্র প্রকাশ করে। ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আঞ্জুমানা আনু ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহ-সম্পাদক হয়েছেন। তিনি ছাত্রলীগের সোহাগ-নাজমুল কমিটির উপ-আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক লিটন মাহমুদের স্ত্রী। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য ॥ মঙ্গলবার দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে আসেন শোভন-রাব্বানী। ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন সাংবাদিকদের বলেন, বৃহত্তর এই সংগঠনে পদ প্রত্যাশী রয়েছে এক থেকে দুই হাজার কর্মী। কিন্তু কমিটি দিয়েছি ৩০১ সদস্যের। ত্যাগী কর্মীদের আসলে পদ দ্বারা সীমাবদ্ধ করা সম্ভব নয়। কমিটিতে যাদের নিয়ে বিকর্ত আসছে তাদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি করা হবে জানিয়ে শোভন বলেন, প্রমাণ হলে তাদের পদগুলো শূন্য ঘোষণা করে যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হবে। সোমবারে মধুর ক্যান্টিনে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার প্রশ্নে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ সকলের প্রাণের সংগঠন। এর রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। পদবঞ্চিতদের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা পদ পায়নি, তাদের রাজনীতি থেমে গেছে এমনটি ভাবার কিছু নেই। তাদের (পদবঞ্চিতরা) প্রতি আহ্বান জানাব ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেষ্ট থাকবে। কিছুদিন পরে এই কমিটি বর্ধিত করে আরও কিছু-যারা বেশি যোগ্য, যাদের পদ দিতে পারি নাই তাদের কমিটিতে আনব। বিচার বিশ্লেষণ করে যে সকল ত্যাগী এবং যোগ্যরা বাদ পড়েছে, নেত্রীর সঙ্গে কথা বলে কিছু পদ যদি বাড়ানো যায়, সেই বিষয়ে আমরা কথা বলব। গোলাম রাব্বানী বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে, আমরা আজকেই তদন্ত কমিটি করে দিচ্ছি। অভিযোগকারীরা দালিলিক তথ্য কমিটির কাছে দেবে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে তারাও প্রমাণ করবে যে এই অভিযোগ মিথ্যা। সেই তদন্ত প্রতিবেদন ‘পাবলিকলি’ প্রকাশ করব। পদবঞ্চিতদের বিক্ষোভ ও তাদের ওপর হামলার ঘটনায় তিনি বলেন, অনেকে সাবেক কমিটিতে পোস্টেড ছিল। ৩০১ জনের মধ্যে ১৩৩ জন সরাসরি বিগত কমিটিতে কেন্দ্রের পোস্টেড ছিল। আমাদের সাবেক নেতৃবৃন্দ ২০০ জনের তালিকা দিয়েছিল। এর মধ্যে সরাসরি ৯০ জনকে নেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৭৪ জন সাবেক নেতাদের পছন্দের । সবাইকে খুশি করা সম্ভব নয়। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি যোগ্যতার মূল্যায়ন করার জন্য। বিগত কোন কমিটিতে এত জনকে নেয়া হয়নি। তারা মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করতে চেয়েছিল। সেখানে জুনিয়ররা ছিল। এক ধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। শ্রাবণী-দিশা আহত হয়েছে। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেছি, দিশা ছাড়া কেউ আহত হয়নি। প্রসঙ্গত, সম্মেলনের এক বছর পর সোমবার ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। এর পরপরই পদবঞ্চিত ও কাক্সিক্ষত পদ না পাওয়ায় বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভে নারী নেত্রীদের ওপর হামলা হয়। পরবর্তীতে সন্ধ্যায় মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন চলমান অবস্থায় আবারও হামলা করে নবগঠিত কমিটিতে পদপ্রাপ্ত একাধিক নেতা। এসময় অন্তত ১৫ জন আহত হয়। শ্রাবণী, দিশা ও ডাকসুর ক্রীড়া সম্পাদক গুরুতর আহত হয়।
×