ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৫২ পণ্য জব্দ ও বাজার থেকে প্রত্যাহারে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন-

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ১০ মে ২০১৯

 ৫২ পণ্য জব্দ ও বাজার থেকে প্রত্যাহারে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন-

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় প্রমাণিত ৫২ প্রতিষ্ঠানের ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য জব্দ এবং এসব পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার ও উৎপাদন বন্ধে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিনা সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুই কর্মকর্তাকে তলব করা হয়েছে। বিএসটিআই ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য অধিদফতরের দুই কর্মকর্তাকে তলব করেছে হাইকোর্ট। ডেপুটি ডিরেক্টরের নিচে নয় এমন দুই কর্মকর্তাকে ১২ মে রবিবার আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হাইকোর্ট এ সময় উষ্মা প্রকাশ করে বলেছে, দেশের নামীদামী ব্র্যান্ডের পণ্য বিদেশ রফতানি হচ্ছে, আমরা তাদের নিয়ে প্রাউড ফিল করি। অথচ তারাই আমাদের ভেজাল খাওয়ায়। এ সংক্রান্ত একটি রিটের শুনানিকালে বৃহস্পতিবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান। শুনানির এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে আদালত বলে, মাংসে ভেজাল, ভেজাল পানি, ভেজাল খাদ্য, বিভিন্ন ভেজাল পণ্যে বাজার ভরে গেছে। দেখছি হলুদের গুঁড়ায় ভেজাল, ব্র্যান্ডের তেলে ভেজাল, সেমাইতে ভেজাল। কিন্তু এসব বিষয় এত গুরুত্বপূর্ণ যে এগুলো আমাদের সামনে এলে আমরা তো ফেলে দিতে পারি না। এসব দেখে কি আমরা বসে থাকব? তা হয় না। রোজা এলেই কেন ভেজালের বিষয়টি খোঁজা হয়? রোজার সঙ্গে ভেজালের কী সম্পর্ক? খাবার তো সারা বছরই আমাদের খেতে হয়। বিএসটিআইর প্রতিবেদনে বলা হয়, পবিত্র রমজান উপলক্ষে খোলা বাজার থেকে ৪০৬ পণ্যের নমুনা কিনে বিএসটিআইয়ের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৩১৩ পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এর মাধ্যে ৫২ পণ্যই পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে। গত ৬ মে বিএসটিআই কর্তৃক বাজারে এসব পণ্যে ভেজাল ধরা পড়ার পরও জব্দ না করা, সেগুলো বাজার থেকে প্রত্যাহারের ব্যবস্থা না নেয়া ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ না নেয়ায় দুই মন্ত্রণালয়ের সচিব ও তিন প্রতিষ্ঠান প্রধানকে ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়ে আইনী নোটিস পাঠায় ভোক্তা অধিকার সংস্থা কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি (সিসিএস)। নোটিসে বলা হয়, বিএসটিআই সম্প্রতি ২৭ ধরনের ৪০৬ খাদ্য পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে ৩১৩ পণ্যের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় যেখানে ৫২ পণ্যকে নিম্নমানের ও ভেজাল উল্লেখ করে বিএসটিআই বলে, এসব খাদ্যপণ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এসব খাদ্য গ্রহণের ফলে কিডনি, লিভার আক্রান্তের পাশাপাশি মানুষ হৃদরোগেও আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে জবাব না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার রিট দায়ের করা হয়। রিটে ওসব প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট পণ্য কেন জব্দ করা হবে না বা বাজার থেকে কেন প্রত্যাহার করা হবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিএসটিআই ডিজি, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে। বিএসটিআইর প্রতিবেদন নিয়ে গত ২ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক সংবাদ সম্মেলন করে। এরপর গত ৩ ও ৪ মে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। বৃহস্পতিবার শুনানির শুরুতে রিটকারী আইনজীবী আদালতের উদ্দেশে বলেন, আমি, আপনি (বিচারপতিবৃন্দ) ও আমাদের শিশুরা ভেজাল খাদ্যপণ্য গ্রহণ করছে। বিএসটিআই সংবাদ সম্মেলন করে এসব ভেজাল পণ্যের তথ্য তুলে ধরলেও, তারা পণ্যগুলো এখনও জব্দ করেনি। তখন আদালত জানায় , এসবের মধ্যে কমন পণ্য কি কি রয়েছে? অনেক নামীদামী ব্র্যান্ডের পণ্য আছে দেখছি! হলুদের গুঁড়াতে ভেজাল, তাহলে আমরা কোথায় আছি? এ পর্যায়ে রিটকারী আইনজীবী বলেন, আমাদের শিশুরাও এসব খাদ্যপণ্য গ্রহণ করছে। আমরা কি করব? এ সময় আদালত মন্তব্য করে , বিএসটিআই একটি বিশেষ সরকারী প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষায় ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য ধরা পড়ল। শুধু শোকজ করেই বিএসটিআইর দায়িত্ব শেষ? তাদের ওসব পণ্য বাজার থেকে তুলে নেয়ার প্রয়োজন ছিল। আদালত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলে, ভোক্তা অধিকার আইন আছে। আইনে তাদের সব দেখার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কী করছে? তারা কাজ করতে না পারলে অফিস ছেড়ে দিক। আমরা কেন এসব দেখতে যাব। এসব দেখে কী আমরা কী বসে থাকব? তা হয় না। এসব আমরা দেখলে আমাদের সমালোচনা করা হয়। এদিকে বিএসটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে খোলা বাজার থেকে ৪০৬টি পণ্যের নমুনা ক্রয় করে বিএসটিআইয়ের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৩১৩টি পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ৫২টি পণ্য পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে। ভেজাল পণ্যগুলো হলো সিটি অয়েলের সরিষার তেল, গ্রিন ব্লিচিংয়ের সরিষার তেল, শমনমের সরিষার তেল, বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের সরিষার তেল, কাশেম ফুডের চিপস, আরা ফুডের ড্রিংকিং ওয়াটার, আল সাফির ড্রিংকিং ওয়াটার, মিজান ড্রিংকিং ওয়াটার, মর্ণ ডিউয়ের ড্রিংকিং ওয়াটার, ডানকান ন্যাচারাল মিনারেল ওয়াটার, আরার ডিউ ড্রিংকিং ওয়াটার, দিঘী ড্রিংকিং ওয়াটার, প্রাণের লাচ্ছা সেমাই, ডুডলি নুডলস, শান্ত ফুডের সফট ড্রিংক পাউডার, জাহাঙ্গীর ফুড সফট ড্রিংক পাউডার, ড্যানিশের হলুদ গুঁড়া, প্রাণের হলুদ গুঁড়া, ফ্রেশের হলুদ গুঁড়া, এসিআইর ধনিয়া গুঁড়া, প্রাণের কারি পাউডার, ড্যানিশের কারি পাউডার, বনলতার ঘি, পিওর হাটহাজারী মরিচ গুঁড়া, মিষ্টিমেলা লাচ্ছা সেমাই, মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, মিঠাইর লাচ্ছা সেমাই, অয়েল ফুডের লাচ্ছা সেমাই, এসিআইর আয়োডিনযুক্ত লবণ, মোল্লা সল্টের আয়োডিনযুক্ত লবণ, কিংয়ের ময়দা, রূপসার দই, মক্কার চানাচুর, মেহেদীর বিস্কুট, বাঘাবাড়ীর স্পেশাল ঘি, নিশিতা ফুডসের সুজি, মঞ্জিলের হলুদ গুঁড়া, মধুমতির আয়োডিনযুক্ত লবণ, সান ফুডের হলুদ গুঁড়া, গ্রীন লেনের মধু, কিরণের লাচ্ছা সেমাই, ডলফিনের মরিচ গুঁড়া, ডলফিনের হলুদ গুঁড়া, সূর্যের মরিচ গুঁড়া, জেদ্দার লাচ্ছা সেমাই, অমৃতের লাচ্ছা সেমাই, দাদা সুপারের আয়োডিন যুক্ত লবণ, মদীনার আয়োডিনযুক্ত লবণ, নুরের আয়োডিনযুক্ত লবণ।
×