ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, প্রত্যাবর্তনের বিশ্বরেকর্ড ইংলিশ জায়ান্টদের, এক হালি গোল হজম করে টালমাটাল কাতালানরা, লিভারপুল ৪-০ বার্সিলোনা (দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ গোলে জয়ী লিভারপুল)

বার্সিলোনাকে বিধ্বস্ত করে ফাইনালে লিভারপুল

প্রকাশিত: ১০:০১, ৯ মে ২০১৯

বার্সিলোনাকে বিধ্বস্ত করে ফাইনালে লিভারপুল

জাহিদুল আলম জয় ॥ অবিশ্বাস্য, অনবদ্য, অনিন্দ্য সুন্দর, বিস্ময়কর কোন তকমাই যথেষ্ট নয়। লিভারপুল যা করেছে তা এককথায় ভাষায় বর্ণনা করার নয়। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ইতিহাসে সেমিফাইনালে প্রত্যাবর্তনের বিশ্বকরেকর্ড গড়েছে দ্য রেডসরা। আর তাতেই অবিস্মরণীয়ভাবে বার্সিলোনাকে বিদায় করে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালের টিকেট পেয়েছে লিভারপুল। সেমিতে প্রথম লেগে বার্সার মাঠে ৩-০ গোলে হেরেছিল জার্গেন ক্লপের দল। মঙ্গলবার রাতে শেষ চারের দ্বিতীয় লেগে নিজেদের মাঠ এ্যানফিল্ডে অগ্নিপরীক্ষা ছিল ইংলিশ জায়ান্টদের। কেননা তিন গোলে শুধু পিছিয়েই নয়, দলের সেরা দুই ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ সালাহ ও রবার্টো ফিরমিনোকে ছাড়াই মাঠে নেমেছিলেন ক্লপের শিষ্যরা। কিন্তু ময়দানী লড়াইয়ে লিওনেল মেসি, লুইস সুয়ারেজদের পাত্তাই দেননি ডিভোক অরিজি, জিওর্জিনিও উইজনালডামরা। চোখ ধাঁধানো পারফর্মেন্স প্রদর্শন করে বার্সার জালে গুনে গুনে চার গোল দিয়েছে রেডরা। যে কারণে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ গোলের জয় নিয়ে ফাইনালে উঠে গেছে লিভারপুল। এর ফলে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালের প্রথম লেগে তিন গোলের ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে ফাইনালে ওঠার বিশ্বরেকর্ড গড়েছে ইংলিশ জায়ান্টরা। ক্লাব পর্যায়ে ইউরোপ সেরা প্রতিযোগিতার আগের সংস্করণে অবশ্য এমন কীর্তি আছে দুটি। ১৯৭০-৭১ মৌসুমে গ্রীক ক্লাব পানাথিনাইকোস ও ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে বার্সিলোনা এই কীর্তি গড়েছিল। রেডসদের এমন ঘুরে দাঁড়িয়ে সফলতার ইতিহাস এই প্রথম নয়। ২০০৫ সালেও এমনভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে শিরোপা জয় করেছিল লিভারপুল। ইস্তান্বুুলে ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানের বিপক্ষেও ৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর এভাবেই লড়াইয়ে ফিরে এসে সফলতা অর্জন করেছিল। আর এ নিয়ে শেষ ছয় মৌসুমে নকআউট পর্বে এ্যাওয়ে ম্যাচে হারের স্বাদ পেয়েছে কাতালানরা। গত পাঁচ মৌসুমে তারা এ এস রোমা, পিএসজি, জুভেন্টাস, এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ও বেয়ার্ন মিউনিখের কাছে হেরেছিল। শিরোপা লড়াইয়ে আগামী ১ জুন স্পেনের ক্লাব এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মাঠ ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানোতে খেলবে লিভারপুল। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হবে বুধবার রাতে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে টটেনহ্যাম হটস্পার ও আয়াক্সে মধ্যে বিজয়ী দলের বিরুদ্ধে। দুই সুপারস্টার সালাহ ও ফিরমিনোর অনুপস্থিতি সত্ত্বেও ক্লপের শিষ্যদের মধ্যে ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসের কোন ঘাটতি দেখা যায়নি। সালাহ ও ফিরমিনো সুস্থ থাকলে অরিজি হয়তো একাদশের হয়ে মাঠে নামারই সুযোগ পেতেন না। ২৪ বছর বয়সী এই বেলজিয়ানই শুরুতে গোল করে দলকে আত্মবিশ্বাস এনে দেন। লিভারপুলের হয়ে প্রিমিয়ার লীগে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে গোল করে অবশ্য বারবারই ভূমিকা রেখেছেন তিনি। আর চ্যাম্পিয়ন্স লীগের এই ম্যাচেও সপ্তম মিনিটে গোল করে প্রথমবারের মতো একই ভূমিকা পালন করলেন তিনি। জর্ডান হেন্ডারসনের পাঠানো বল বার্সা গোল রক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টার স্টেগান ফিরিয়ে দিলে ফিরতি বলটি দারুণ দক্ষতায় জালে জড়িয়ে দেন অরিজি (১-০)। এরপর প্রথমার্ধে আর কোন গোল না হলেও বিরতির পর মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে আরেক দফা বার্সার ওপর চড়াও হয় লিভারপুল। ৫৪ ও ৫৬ মিনিটে পরপর দুই গোল করে লিভারপুরকে বার্সার সমতায় পৌঁছে দেন ডাচ মিডফিল্ডার উইজনালডাম। এরপর ৭৯ মিনিটে ফের গোল করে বার্সাকে বিদায় করে লিভারপুলকে ফাইনালে তুলে নেন অরিজি। ম্যাচ শেষে লিভারপুল কোচ জার্গেন ক্লপ বলেন, অন্য কোন দল হলে আমি কোনভাবেই এটিকে সম্ভব বলতাম না। ছেলেরা আসলেই মানসিকভাবে জায়ান্ট। আমরা এবার অকল্পনীয় একটি মৌসুম পার করছি। হাতে এখনও আরও ম্যাচ যেমন রয়েছে, তেমনি ইনজুরিতেও আমরা আক্রান্ত। তারপরও মাঠে নেমে এমন একটি পারফর্মেন্স প্রদর্শন করার কথা ভাবাই যায় না। এমন একটি দলের কোচ হতে পেরে আমি সত্যিই গর্ববোধ করছি। এই রাতে তারা যা করে দেখিয়েছে তা সত্যিই স্পেশাল। আমি আজীবন এটি মনে রাখব। তিনি আরও বলেন, আমরা এই ঘটনার সঙ্গে ইস্তান্বুলের ঘটনা বা অন্য কোন ঘটনার সঙ্গে তুলনা করতে চাই না। তবে আমরা বিশ্বাস করি সুযোগের সন্ধানে থাকলে তা আসে। আমরা আমাদের মতো করেই নতুন ইতিহাস রচনা করতে চাই। আমাদের অবশ্যই নতুন ইতিহাস রচনা করতে হবে। আশাকরি ছেলেরা সেটি করতে পারবে।
×