ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের বাজার ধরতে অসাধু ব্যবসায়ীরা ফের বেপরোয়া;###; বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের অবিকল মোড়কে এখানে মেলে ভেজাল পণ্য

নকলের হেড অফিস চকবাজার ॥ খাদ্যপণ্য থেকে প্রসাধনী

প্রকাশিত: ১১:০৫, ৩ মে ২০১৯

 নকলের হেড অফিস চকবাজার ॥ খাদ্যপণ্য থেকে প্রসাধনী

ওয়াজেদ হীরা ॥ খাদ্যপণ্য থেকে প্রসাধনী প্রয়োজনীয় সবই এখন নকল করা হচ্ছে। রাজধানীতে তৈরি হয়ে এসব রাজধানীতেই বিক্রি হচ্ছে। কখনও চলে যাচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। দেশীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পাশাপাশি বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ডের মোড়ক লাগিয়ে হরহামেশাই বিক্রি হচ্ছে নকল পণ্য। পুরান ঢাকার অলিগলিতে মানহীন পণ্য তৈরির কারখানা রয়েছে অসংখ্য। ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, নকল পণ্য তৈরির ‘হেড অফিস’ বলা হয় পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকাকে। থানা-পুলিশ, বিএসটিআইর কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই বছরের পর বছর ধরে চকবাজার ও আশপাশ এলাকায় বিভিন্ন কারখানায় তৈরি হচ্ছে নানা মোড়কে নানা পণ্য। এক শ্রেণীর প্রতারক ব্যবসায়ীরা নানা নামে স্থান বদল করে এই ব্যবসা করছেন। আর এসব নকল পণ্য নিয়ে ক্রেতারা শুধু ঠকছেনই না বরং জীবনের ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে। কেননা এসব ভেজাল কসমেটিক্স ব্যবহারে ক্যান্সারসহ ত্বকের বিভিন্ন রোগ হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। চকের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর সাময়িকভাবে কিছুদিন আড়ালে ব্যবসা চালালেও রমজান ও ঈদের রমরমা বাজার ধরতে আবারও বেপরোয়া অসাধু ব্যবসায়ীরা। গত কয়েক দিনে ক্রেতা সেজে পুরান ঢাকায় হরহামেশাই হাতের নাগালে পাওয়া গেছে নানা ধরনের নকল পণ্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানেও থেমে নেই এই রমরমা বাজার। চকবাজার, মৌলভীবাজার, চকমোগলটুলি, উর্দু রোড, খাজে দেওয়ানসহ আশপাশের এলাকায় প্রকাশ্যেই এসব প্রসাধনী সামগ্রীর কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। আর এসব কারখানায় বডি স্প্রে ছাড়াও অনেক ঝুঁকিপূর্ণ দাহ্য রাসায়নিক রয়েছে। একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব কারখানা থেকে মাসে মাসে বিভিন্নস্থানে মাসোহারা দিতে হয়। আর মাসোহারার কারণে কোন অভিযান বা নকল পণ্য তাদের কাছে মামুলি বিষয়। শুধু পণ্যই নয়, যে কোন ব্র্যান্ডের নকল পণ্য মোড়কজাতও পাওয়া যায় এখানে। রাজধানীর নকল প্রসাধনীর সবচেয়ে বড় বাজার পুরান ঢাকার চকবাজার ও মৌলভীবাজার আবার কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, চকবাজার, বেগমবাজার, রহমতগঞ্জ, কামালবাগ, খাজে দেওয়ান, ইসলামবাগ, দেবীদাসঘাট, বড় কাটারা, ছোট কাটারা ও কামরাঙ্গীরচরে কারাখানা গড়ে তোলা হয়েছে। সম্প্রতি কেরানীগঞ্জে জনসন বেবি লোশন ও পাউডার, কুমারিকা তেল, বার্নল ক্রিম, বেটনোভেট ক্রিম, রং ফর্সাকারী ক্রিমসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন নামী-দামী ব্র্যান্ডের মোড়ক ব্যবহার করে নকল কসমেটিকস ও ওষুধ উৎপাদন, বাজারজাত এবং মজুদ করার অপরাধে সাত ব্যক্তিকে ৩৬ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন পরিচালিত একটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক। সেই সঙ্গে বিভিন্ন মেয়াদে তাদের কারাদন্ড দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, এর আগেও চকবাজারে এক অভিযানে দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন কসমেটিকস ব্র্যান্ডের পণ্য নকল করে তৈরি ও বিক্রির অপরাধে ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা এবং ছয় লাখ টাকা জরিমানা করে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। কারখানা থেকে বিপুল কসমেটিকস ব্র্যান্ড জনসন, লেকমি, লরিয়েলের নকল পণ্য সামগ্রী জব্দ করা হয়েছিল। অভিযানে ৪২ ধরনের কসমেটিকস পণ্য পাওয়া যায়। পুরান ঢাকার পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আসলে অপরাধীরা গোপনে এসব করে আর সুযোগ বুঝে বাজারে ছেড়ে দেয়। এরা কখনও এক জায়গায় বেশি দিন থাকতে চায় না। সূত্র জানায়, চকবাজার সম্পর্কে যে কোন পণ্য সুলভ মূল্যে বা পাইকারি দরে পাওয়া যায়। আর অল্পমূল্যের অনেক ক্রেতাই রোজ আসেন এই চকবাজারে। এই সুযোগটা নেয় প্রতারকরা। নিম্নমানের কালি আর ক্ষতিকর রং মিশিয়ে তৈরি বিভিন্ন কোম্পানির কসমেটিকস ধরিয়ে দেয়া হয়। সূত্র জানায়, এসব পণ্য বাজারে ছাড়ার আগে বিভিন্ন কোম্পানির লোগো বা লেবেলিং করা হয়। তারা এসব এত নিখুঁতভাবে তৈরি করে দেখে বোঝার উপায় নেই যে এসব নকল পণ্য। এসব পণ্যের জন্য তৈরি করা হয় বারকোড ও মেয়াদোত্তীর্ণ মনোগ্রামও। সাধারণ ক্রেতা বুঝতে পারেন না কোন্টি আসল আর কোন্টি নকল। পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকার বিভিন্ন পারফিউমের দোকান থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে নকল প্রসাধনী তৈরি করা হয় বলে জানান এক ভেজালকারী। সাবানের পানি, কেমিক্যাল আর খানিকটা পারফিউম বা সুগন্ধি যোগ করে অনায়াসে তৈরি করা যায় শ্যাম্পু। আর নামী-দামী ব্র্যান্ডের খালি বোতল জোগাড় করা হয় বিভিন্ন টোকাই আর ভাঙ্গারিওয়ালাদের কাছ থেকে। এগুলোতে ভরে বাজারজাত করা হয় ওসব শ্যাম্পু। আবার নিভিয়া লোশন, লাক্স, মাস্ক, এ্যাকুয়া মেরিন লোশন, ফেড আউট ক্রিম, ডাভ সাবান, ইম্পেরিয়াল সাবান, সুগন্ধির মধ্যে হুগো, ফেরারি, পয়জন, রয়েল, হ্যাভক, কোবরা সবই এখন ভেজাল আর নকলে ভরা। এই ভেজাল পণ্য এখন ঠাঁই করে নিয়েছে নামী দামী অনেক শপিং মলের দোকানে আর রূপচর্চার সেলুন বা পার্লারেও। চকবাজারের ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান বলেন, আমি জুয়েলারি পণ্য বিক্রি করি। অল্প লাভেই আমার সংসার চলে যাচ্ছে। তবে একথা ঠিক, হয়ত অনেকেই এখানে নানা পণ্যের দু’নম্বরি করে বিক্রি করছে। এজন্য আমাদের কাছে আসা জেলা-উপজেলার ব্যবসায়ীরাও মনে করেন এখানে সবই বুঝি নকল। আরেক ব্যবসায়ী মনসুর আব্দুল্লাহ বলেন, সবাই হয়ত খারাপ ব্যবসা করে না। তবে যারা করে তাদের জন্য এলাকার ওপর সিল পড়ে গেছে। এক কথায় বলা চলে এখানে নকলের হেড অফিস। সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে অন্তত ৭০ জনের বেশি লোকের প্রাণহানির পর এসব নকল কেমিক্যাল কারখানার বিষয়টি সামনে এলে কয়েকদিন বিষয়টি আলোচিত হলেও এখন আর এ নিয়ে কেউ কথা বলে না। চুড়িহাট্টার হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনে যে ভবনে আগুনের সূত্রপাত হিসেবে বলা হচ্ছে সেই পোড়া ভবনেও তৈরি হতো নকল পণ্য। বিশ্বের বিখ্যাত প্রসাধনী ব্র্যান্ড ‘ক্লরিস’ও নকল করা হতো। এছাড়াও বিশে^র নামী-দামী ব্র্যান্ডের যত প্রসাধনী আছে তাও সেখানে তৈরি করা হতো। জানা গেছে, শিকাগো শহরের গ্রেসেক ইলিনয়ভিত্তিক এ কোম্পানির অন্যতম পণ্য ডেইলি বেবি লোশন, যা উৎপাদন হয় থাইল্যান্ডে। বাংলাদেশের কোথাও, এমনকি ভারতেও এর কোন কারখানা নেই। কিন্তু মৃত্যুপুরী চুড়িহাট্টার সেই হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনে ‘ক্লরিসে’র লোগো হুবহু নকল করেই তৈরি করা হতো এই বেবি লোশন। শুধু তাই নয়, দুবাইয়ের ‘স্টারলিং’ ব্র্যান্ডের নকল পারফিউমও তৈরি হতো ওই ভবনে। চারতলা এই ভবনে থাকা বডি স্প্রে হাজার হাজার বোতলে থাকা দাহ্য পদার্থের কারণেই গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে নিমিষেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। জানা গেছে, আগুনের পর হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় নকল পারফিউম ও লোশনের বোতলের স্তূপ দেখা যায়। যার সবই পুড়ে গেছে। আবার অনেক বোতল বিস্ফোরণ হয়ে সিটকে রাস্তায় পড়েছিল। এসব বোতলে দেখা গেছে বিভিন্ন নামী-দামী ব্র্যান্ডের হুবহু সিল। এ প্রসঙ্গে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম জানান, ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলায় নকল পারফিউমের কারখানা ছিল। সেখানে নকল পণ্য তৈরি করা হতো। ভবনের অন্যান্য ফ্লোরেও নকল পণ্য ছিল। শুধু সেখানেই নয়, পুরান ঢাকাজুড়েই নকল পণ্যের অসংখ্য কারবারি রয়েছে। গত দুই বছরে র‌্যাব পুরান ঢাকায় ১১২ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা মাধ্যমে ১৫২ নকল প্রসাধনী ও কেমিক্যাল কারখানা সিলগালা করা হয়েছে। ১৭৩ জনকে সাজা দেয়া হয়েছে। অভিযান চালানোর পর কারখানার মালিকরা অন্যত্র বাড়ি ভাড়া নিয়ে একই কাজ করে বলে জানান এই কর্মকর্তা। র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, নকল পণ্যের এক হোতা মালিটোলার ময়না হাজী। সম্প্রতি তার দুটি বাড়ির ১৮ কারখানা থেকে ভেজাল প্রসাধনসামগ্রী তৈরির নানা উপকরণ জব্দ করেছিল র‌্যাব। ইউনিলিভার, স্কয়ার টয়লেট্রিজ, কোহিনূর কেমিক্যালের পাশাপাশি আমদানি করা বড় বড় ব্র্যান্ডের পণ্য প্রকাশ্যে নকল করে বাজারজাত করছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। এতে মূল প্রতিষ্ঠানের সুনামও নষ্ট হচ্ছে। অলিভ অয়েল, কিওকারপিন, আমলা, ভ্যাসেলিন হেয়ার টনিক, জিলেট ফোম, আফটার সেভ লোশন, জনসন, প্যানটিক প্রোভি ও হারবাল এসেনশিয়াল লোশন। সূত্র মতে, ঢাকার বাইরে ইউনিলিভারের কারখানা এবং প্রেস থেকে লেবেল, খালি বোতল, টিউব, কৌটা ও পাতার ফয়েল চোরাইপথে নকলবাজদের হাতে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে প্রসাধনীর (ক্রিম, শ্যাম্পু, সাবান, লোশন, আফটার শেভ লোশন, পারফিউম) যে চাহিদা রয়েছে, তার ১৫ শতাংশ জোগান দিচ্ছে অনুমোদিত দেশী কোম্পানি। ১৫ শতাংশ আমদানি পণ্য। বাকি ৭০ শতাংশ প্রসাধনী নকল ও ক্ষতিকারক উপাদান দিয়ে তৈরি হচ্ছে, যার মূল কেন্দ্র পুরান ঢাকা। অভিন্ন চিত্র মৌলভীবাজারেও। চড়া শুল্কে আমদানি করা মসলা বিক্রি করে লোকসানে পড়েছেন ওই বাজারের ব্যবসায়ীরা। মৌলভীবাজারেও ঢুকছে চোরাচালান হয়ে আসা মসলা। এতে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ায় ব্যবসা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। আবার কেউ কেউ অনৈতিক জেনেই ভেজাল পণ্যের দিকে ঝুঁকেছেন। মসলা আমদানিকারকরা জানান, ব্যবসা আগের মতো নাই। চোরাই মসলা ব্যবসা নষ্ট করে দিয়েছে। আবার বিভিন্ন জায়গার পাইকারদেরও অল্প দামের প্রতি ঝোঁক রয়েছে। সব মিলিয়ে নকলের একটা জয় জয়কার অবস্থা! অধিক মুনাফার জন্য একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী মসলায় কাপড়ের বিষাক্ত রং, দুর্গন্ধযুক্ত পটকা মরিচের গুঁড়া (নিম্নমানের মরিচ), ধানের তুষ, ইট ও কাঠের গুঁড়া, মটর ডাল ও সুজি ইত্যাদি মেশাচ্ছে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, ভেজাল মসলা কিনে ক্রেতারা শুধু প্রতারিতই হচ্ছেন না, এতে তৈরি হচ্ছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। কারণ ভেজাল মসলায় মেশানো ক্ষতিকর খাদ্যদ্রব্য ক্যান্সার, কিডনি ও লিভারের রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। অনুসন্ধানে জানা যায়, ভেজাল মসলা উৎপাদনকারীরা গুঁড়া মরিচের সঙ্গে মেশাচ্ছে ইটের গুঁড়া। হলুদে দেয়া হচ্ছে মটর ডাল, ধনিয়ায় স’ মিলের কাঠের গুঁড়া। মসলার রং আকর্ষণীয় করতে মেশানো হচ্ছে বিশেষ ধরনের কেমিক্যাল। মৌলভীবাজার মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের নেতা মোহাম্মদ এনায়েতুল্লাহর মতে, আশির দশক পর্যন্ত রমরমা ব্যবসা ছিল চক ও মৌলভীবাজারে। তবে কয়েক বছরে কেনাবেচা অর্ধেকে নেমেছে। কারণ হিসেবে বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ বাজারে চোরাচালান ও নকল পণ্য আসছে। এ কারণে ক্রেতাদের মধ্যে আস্থার সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা। দেশের বাজারে যে চোরাচালান হয়ে আসা মসলা তা বন্ধের জন্য মত দেন তিনি। পুরান ঢাকার চকবাজার, লালবাগ ও কেরানীগঞ্জের অলিগলিতে প্রস্তুতকৃত নকল ও নিম্নমানের সাবান, চন্দন, মেছ্তা-দাগনাশক ক্রিম, নানা প্রসাধনী, তেল, পারফিউম সবকিছুই পাইকারি ও খুচরাও বিক্রি হচ্ছে। এসব নকল সামগ্রীর প্যাকেট বা বোতলে সাঁটানো বিভিন্ন দেশের লেবেল। রকমারি বিদেশী পণ্যের সমারোহে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। পৃথিবীর যত নামকরা ব্র্যান্ডের প্রসাধন সামগ্রী সবই তৈরি হচ্ছে পুরান ঢাকার চক ও মৌলভীবাজারের আশপাশের এলাকায়। গত কয়েকদিন চকবাজার এলাকায় দেখা গেছে, এসব মানহীন পণ্যের ছড়াছড়ি। জানতে চাইলে এক বিক্রেতা বলেন, কেমন দামের পণ্য নেবেন? যদি একটু কম দামে নেন তবে আছে, দোকানে নাই, আইনা দিতে হইবে। বেগম বাজারের ফেন্সী সুপার মার্কেটের একটি মোড়ক তৈরি ও বিক্রেতা আলামিন বলেন, আপনি যে পণ্যের মোড়ক চান দিবো একটু সময় লাগবে। আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম থাকতে পারে, অন্য প্রতিষ্ঠানের নামও থাকতে পারে। জানা গেছে, অভিজাত শপিং সেন্টার থেকে শুরু করে শহর-বন্দর, প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাটবাজার পর্যন্ত সর্বত্রই নকলের বাহার। নকলের ভিড়ে আসল পণ্য এখন অনেকটাই উধাও। শিশুদের চকোলেট ও গুঁড়া দুধ, ঘি, আটা, তেল, সাবান, মধু, মসলা, দই, মিষ্টি থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী নকল হচ্ছে। এছাড়াও বংশালজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন মোটরসাইকেল, সাইকেলের পার্টসের দোকান। এসব দোকানেও হরহামেশাই ভাল পণ্য, নকল পণ্য পাওয়া যায়। বিএসটিআইর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এক সময় পুরান ঢাকার চকবাজারে অর্ধশতাধিক নকল প্রসাধনী তৈরি হতো। ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালিত হওয়ার পর এখন আর আগের মতো নকল জিনিস তৈরি হচ্ছে না। আবার বন্ধ হয়ে গেছে সেটিও বলব না। হয়ত কেউ কেউ বিশেষ সুবিধা পেয়ে এসব লোভী ব্যবসায়ীকে পাত্তা দেয়। বিএসটিআইর ওই কর্মকর্তা জানান, বিগত কয়েক বছর আগে চকবাজারের খান মার্কেটে অভিযান চালিয়ে কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ীকে জেল-জরিমানা করা হয়। মালিক সমিতির কিছু ব্যবসায়ী নকল সামগ্রীর ব্যবসা ছেড়ে দেয়ার অঙ্গীকারও করেন। কিন্তু বন্ধ করা যায়নি নকলের তৎপরতা।
×