ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর ইন্তেকাল

প্রকাশিত: ১১:০৯, ২৮ এপ্রিল ২০১৯

বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর ইন্তেকাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ আর নেই। বাংলাদেশ সময় শনিবার সকাল ১০টা ৫মিনিটে (ব্যাঙ্কক সময় ১১টা ৫ মিনিট) তিনি ব্যাঙ্ককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তাঁর মেয়ে নুসরাত হুমায়রা ও ব্যক্তিগত স্টাফ অলিদ তালুকদার। প্রবীণ এই সাংবাদিক দীর্ঘদিন ধরেই হৃদরোগ, কিডনি ও উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। ব্যাঙ্ককে একবার তার বাইপাস সার্জারিও হয়েছিল। গুরুতর অসুস্থ হয়ে গত তিন সপ্তাহ ধরে ব্যাঙ্ককের হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৬৯ বছর বয়সী মাহফুজ উল্লাহ। গত ২১ এপ্রিল তার মৃত্যুর খবর ছড়ালেও মেয়ে নুসরাত তখন জানিয়েছিলেন, তার বাবা বেঁচে আছেন। গত ২ এপ্রিল সকালে ধানমন্ডির গ্রীন রোডে নিজ বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হলে মাহফুজ উল্লাহকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। কয়েক দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১১ এপ্রিল মাহফুজ উল্লাহকে উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে নেয়া হয়। মাহফুজউল্লাহর বড় ভাই অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ জানান, রাত সাড়ে ১২টায় ব্যাংকক থেকে তার ভাইয়ের লাশ দেশে আসবে। রবিবার জোহরের নামাজের পর ঢাকার গ্রীন রোডের জামে মসজিদ এবং জাতীয় প্রেসক্লাবে জানাজা হবে। এর পর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মাহফুজউল্লাহকে দাফনের প্রস্তুতির কথা জানান মাহবুবউল্লাহ। মাহফুজউল্লাহর মৃত্যুতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শোক জানিয়েছেন। সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শোকবার্তায় এরশাদ বলেন, মাহফুজ উল্লাহ ছিলেন একজন সৎ ও আদর্শবান সাংবাদিক। তাঁর সততা ও সাহসিকতা নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের সামনে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। পেশার প্রতি দায়বদ্ধতা এবং শ্রদ্ধাবোধের প্রশ্নে সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। এছাড়া মাহফুজ উল্লাহর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ ও কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের। ১৯৫০ সালে নোয়াখালীতে জন্ম নেন মাহফুজ উল্লাহ। প্রথিতযশা এই সাংবাদিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যা ও সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নেন। ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতি করা মাহফুজ উল্লাহ ষাটের দশকে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী হিসেবে ঊনসত্তরের ১১ দফা আন্দোলনে অংশ নেন তিনি। আইয়ুব খানের শাসনামলে তাকে ঢাকা কলেজ থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। তিনি সাংবাদিকতা ছাড়াও খ-কালীন শিক্ষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। সর্বশেষ তিনি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগে শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন। এর বাইরে তাকে বিএনপিপন্থী একজন বুদ্ধিজীবী হিসেবে গণ্য করা হতো। ছাত্রাবস্থাতেই মাহফুজ উল্লাহ সাংবাদিকতা পেশায় সম্পৃক্ত হন। দেশের এক সময়ের জনপ্রিয় সাপ্তাহিক বিচিত্রার ১৯৭২ সালে জন্মলগ্ন থেকেই তিনি জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন বাংলা ও ইংরেজী দৈনিকে কাজ করেছেন তিনি। পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিকতায় তার অবদান রয়েছে। তিনি কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাসেও দায়িত্ব পালন করেছেন। বিভিন্ন বিষয়ে বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় লেখা তার বইয়ের সংখ্যা পঞ্চাশের বেশি।
×