ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীলঙ্কা থেকে আসা ১১ শ্রমিককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদ

প্রকাশিত: ১২:৩৬, ২৭ এপ্রিল ২০১৯

 শ্রীলঙ্কা থেকে আসা ১১  শ্রমিককে আইনশৃঙ্খলা  বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদ

বাংলা ট্রিবিউন ॥ ভয়াবহ আত্মঘাতী সিরিজ বোমা হামলার পর শ্রীলঙ্কা থেকে ১১ শ্রমিককে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এই শ্রমিকরা আত্মঘাতী এক বোমা হামলকারীর একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসার পর ইমিগ্রেশন পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। বিমানবন্দর থেকে এই শ্রমিকদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি ইউনিটের কার্যালয়ে নিয়ে আসার কথা রয়েছে। শুক্রবার দুপুর ১২টায় মালিন্দ এয়ার লাইন্সের একটি ফ্লাইটে (ওডি ১৬৪) তারা ঢাকায় আসেন। ইমিগ্রেশন পুলিশের একটি সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা হামলাকারীদের মধ্যে দুজন ছিল আপন ভাই। তাদেরই একজন ইনসাফ ইব্রাহীমের একটি তামা কারখানায় এই শ্রমিকরা কাজ করতেন। ওই কারখানাতেই আত্মঘাতী হামলায় ব্যবহৃত বোমাগুলো তৈরি হয়েছিল বলে শ্রীলঙ্কার পুলিশের বরাত দিয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, ওই কারখানায় যারা কর্মরত ছিলেন, তারা কেউ বোমা হামলা বা সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে কোন তথ্য জানেন কিনা, সেজন্য তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কলম্বোয় বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এ বিষয়ে তথ্য পাওয়ার পর ঢাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিমানবন্দরে অবস্থান নেন। বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন এলাকাতেই বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা তাদের দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করেন। শ্রীলঙ্কা থেকে ফেরত আসা শ্রমিকদের সবার বাড়ি টাঙ্গাইলে জানা গেলেও তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। শ্রীলঙ্কান পুলিশের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, ইনসাফ ইব্রাহীম সাংরি-লা হোটেলে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। তার ভাই ইলহাম ইব্রাহীম পাশের সিনোমন গ্র্যান্ড হোটেলে আত্মঘাতী হামলা চালায়। হামলার পর পুলিশ তাদের বাড়িতে অভিযান চালানোর সময় ইলহামের স্ত্রী ফাতিমা দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে আত্মঘাতী হয়, সেখানে পুলিশের তিন কর্মকর্তাও নিহত হয়েছেন। তবে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে ইলহামের বিষয়ে এক খবর প্রকাশ করে। ওই খবরে বলা হয়, ইলহাম নিজের বাড়িতেই স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে। আত্মঘাতী এই সহোদরের বাবা মোহাম্মদ ইব্রাহীম একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে শ্রীলঙ্কান পুলিশ। ইনসাফ ইব্রাহীমের যে কারখানায় বাংলাদেশী শ্রমিকরা কাজ করতেন, সেটি কলম্বোর উপশহর ওয়েল্লাম্পিটিয়া এলাকায় অবস্থিত। বাংলাদেশী ছাড়াও সেখানে ভারতীয় অন্তত ৪০ জন শ্রমিক কাজ করতেন। বোমা হামলার পর তারাও নিজ দেশে ফিরে গেছেন। কারখানার কর্মীদের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ বলছে, ঘটনার পর থেকে পুলিশ প্রায় প্রতিদিনই ওই কারখানায় অভিযান চালিয়েছে। কোলোসসাস লিমিটেড নামে তামার ওই কারখানার শ্রীলঙ্কান স্টাফ ও সুপারভাইজাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। শ্রীলঙ্কায় স্মরণকালের ভয়াবহ ওই বোমা হামলার পর থেকে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। গত কয়েকদিনে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক বৈঠকে বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার সম্ভাব্য শঙ্কা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জঙ্গী হামলার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেন এবং তা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখার কথা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান ও উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন বলেও জানান। এদিকে, ভারতের হিন্দুস্তান টাইমস ও ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শ্রীলঙ্কায় হামলার মূল হোতা মোহাম্মদ হাশিম ওরফে জাহরান হাশিমের সঙ্গে বাংলাদেশী আইএসপন্থী জঙ্গীদের যোগাযোগ রয়েছে। গত বছরের শেষের দিকে এক আইএস অনুসারীকে গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে এই যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া যায় বলে ভারতীয় গোয়েন্দারা দাবি করেন। যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এ বিষয়ে কোন তথ্য ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছ থেকে পাননি বলে জানিয়েছেন। ঢাকার কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, শ্রীলঙ্কায় হামলার পর থেকেই আমরা আরও বেশি সতর্ক রয়েছি। আমাদের এখানে যেসব থ্রেট রয়েছে, আমরা সেসব বিশ্লেষণ করছি। ওই সূত্র জানায়, শ্রীলঙ্কায় হামলার পর বাংলাদেশেও এ্যাক্টিভ যেসব জঙ্গী সংগঠন রয়েছে, তারা ইন্সপায়ার্ড হয়েছে। জঙ্গীদের নিজেদের প্রপাগান্ডা চ্যানেলগুলোতে বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছে। তবে তাদের নতুন করে হামলা চালানোর মতো শক্তি ও সামর্থ্য কোনটাই নেই। সিটিটিসি’র আরেকটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে যারা আইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে ইরাক-সিরিয়াতে গিয়েছিল, সেই সব ফরেন টেরোরিস্ট ফাইটার বা এফটিএফ সম্পর্কে এখন আরও বেশি খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। এরকম অন্তত ৪০ জনের তালিকা বিভিন্ন ইমিগ্রেশনগুলোতে দেয়া হলেও তারা নামে-বেনামে বা অবৈধ পথে দেশে প্রবেশ করতে পারে কিনা, সে বিষয়েও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলকারী অনেকেই আইএস ফেরত জঙ্গী বলে সন্দেহ করছেন দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা। এই হামলায় ২৫৩ জন নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে জায়ান চৌধুরী নামে এক বাংলাদেশী শিশুও রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিমের নাতি জায়ান চৌধুরী সাংরি-লা হোটেলে বিস্ফোরণে নিহত হয়। আহত হয়ে জায়ানের বাবা মশিউর হক চৌধুরী প্রিন্স বর্তমানে কলম্বোতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
×