ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরায় টিকেট বিক্রি বেড়েছে

বিমানের দূরপাল্লার ফ্লাইট যাত্রীতে পরিপূর্ণ

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ১১ এপ্রিল ২০১৯

বিমানের দূরপাল্লার ফ্লাইট যাত্রীতে পরিপূর্ণ

আজাদ সুলায়মান ॥ দুর্নীতি অনিয়মের লাগাম টেনে ধরায় টিকেট বিক্রি বেড়েছে বিমানে। এখন দূরপাল্লার ফ্লাইট পূর্ণ যাত্রী নিয়েই চলছে। এতদিন টিকেট নিয়ে দীর্ঘদিনের কারসাজি ও ব্লক বাণিজ্যের কারণে যাত্রীরা সুবিধা বঞ্চিত হতেন। টিকেট চেয়েও পেতেন না। এই দুর্নাম অনেকটাই ঘুচতে শুরু করেছে। কাউন্টারে গেলে টিকেট নেই, কিন্তু ফ্লাইটে সিট খালি থাকে-চিরকালের এমন দৃশ্য এখন আর নেই বলে জোর গলায় দাবি করেছেন স্বয়ং বিমান মন্ত্রী মাহবুব আলী। অবস্থা স্বচক্ষে দেখার জন্য তিনি আকস্মিক পরিদর্শন করছেন ফ্লাইটের পরিস্থিতির। পরিস্থিতি যথেষ্ট উন্নতি হচ্ছে বলে দাবি করে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আমি নির্দেশ দিয়েছি টিকেট ব্লক বাণিজ্য বন্ধ করতে। তারপর থেকেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। এখন টিকেট বিক্রিও বেড়েছে, আসনও খালি যাচ্ছে না। আমি এতে সন্তুষ্ট। বিমান জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহ ধরে বিমানের প্রতিটি দূরপাল্লার ফ্লাইট পূর্ণ আসন নিয়েই উড়ছে। এমন চিত্র স্বচক্ষে দেখার জন্য বিমানমন্ত্রী মাহবুব আলী গত সোমবার আকস্মিক হাজির হন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। তিনি সরাসরি চলে যান বোডিং ব্রিজে। সেখানে তখন দাম্মাম ফ্লাইট ৪১৯ আসনের ৭৭৭ উড়োজাহাজে গিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। এ সময় বিজনেস থেকে ইকোনমি ক্লাসের প্রতিটি সিটের খোঁজ-খবর নিয়ে দেখতে পান যাত্রীতে পূর্ণ। সে সময় লন্ডন থেকে সিলেট হয়ে আসা ফ্লাইটও (বিজি-২০২) যাত্রীতে পূর্ণ ছিল। এই ফ্লাইট লন্ডন যাওয়ার সময়েও যাত্রীতে পূর্ণ ছিল বলে জানান তিনি। দাম্মাম ফ্লাইটের ভেতর থেকে ফোনে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আমি পরীক্ষামূলক টিকেট ব্লকিং সিস্টেম বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিলাম। এখন দেখছি ফ্লাইটের ৪১৯ আসনেই যাত্রী বসে আছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এখন আর কেউ অভিযোগ করতে পারবে না টিকেট নেই অথচ সিট খালি। আমি নিজে এটা তদারকি করছি সার্বক্ষণিক। এ সম্পর্কে বিমানের জিএম এয়ারপোর্ট সার্ভিস নুরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবারের দাম্মাম, কুয়েত ও মাস্কাটের ফ্লাইটও আসন পূর্ণ করেই ঢাকা ছেড়েছে। আগের চেয়ে পরিস্থিতি বেশ উন্নতি ঘটেছে। জানা গেছে, দায়িত্ব নেয়ার পর পরই বিমানমন্ত্রী মাহবুব আলী তার সচিব মহিবুল হকের সঙ্গে আলোচনা করে বিমানের চিরকালের দুর্নাম টিকেট বাণিজ্য বন্ধ করা ও নানা অনিয়ম খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেন। এরপরই মাঠে নামে মন্ত্রণালয়ের বিশেষ টিম। তারা বিমানের দেশী বিদেশী স্টেশনগুলোকে টিকেট বিক্রির জড়িত সিন্ডিকেট চিহ্নিত করেন। সেগুলো হাতে নিয়েই নামেন এ্যাকশানে। প্রাথমিক তদন্তে ফুঠে ওঠে গা শিউরে ওঠার চিত্র। তারা বিস্মিত হন, লন্ডনের স্টেশন ম্যানেজার শফিকুল ইসলামের কোটি কোটি টাকার টিকেট বিক্রি করে আত্মসাতের কৌশল দেখে। তারপরও এত বড় দুর্নীতিবাজকে সেখান থেকে ফিরিয়ে এনে দায়িত্ব দেয়া হয় কাঁচা টাকার খনি হিসেবে চিহ্নিত কার্গোতে। এতে খোদ বিমানের কর্মকর্তাদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিমানের টিকেট বিক্রির ওপর মন্ত্রীর কৌতূহলী নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় সবাইকে। কেন যাত্রীরা কাউন্টারে গেলে বলা হয় টিকেট নেই, আবার ফ্লাইটে ওঠার পর দেখা যায় অধিকাংশ আসন খালি। কেন এমন বিপরীত চিত্র-এমন কৌতূহলী প্রশ্নের জবাব চাইলে মন্ত্রী মাহবুব আলীকেও অন্য আর দশটা মন্ত্রীর মতোই সস্তা যুক্তি দেখানো হয়, ‘কাউন্টারে যখন যাত্রীরা যায়, তখন সব ব্লক থাকে। কেনা টিকেট থাকার পরও অনেক যাত্রী শেষ মুহূর্তে অর্থাৎ ফ্লাইট ছাড়ার আগের দিন যাত্রা বাতিল করেন। তখন আর টিকেট বিক্রির উপায় থাকে না। সেজন্য সিট খালি যায়। বিমানের এই যুক্তি গা-বাঁচানোর কৌশল হিসেবে বিবেচিত হয় মন্ত্রীর কাছে। তিনি এ নীতি থেকে সরে এসে টিকেট ব্লকিং সিস্টেম বাতিলের কড়া নির্দেশ দেন। সব সময় সবার জন্য টিকেট কেনার সুযোগ উন্মুক্ত রেখে যেকোন মূল্যে সেগুলো বিক্রির সিদ্ধান্ত দেন। এমনকি শেষ মুহূতে বিমানবন্দরে চেকইন কাউন্টারে খালি থাকা বিজনেস ক্লাসের সিটগুলো বিক্রির পক্ষেও মত দেন। এদিকে লন্ডন স্টেশনের দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসার মতো চিত্র ফুটে ওঠে। কম দামের টিকেট ব্লক রেখে এজেন্টদের মাধ্যমে চড়া দামে বিক্রি এবং ফ্রি টিকেট খোলা বাজারে বিক্রির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার হোতা শফিকুল ইসলামকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়। এমন দুর্নীতবাজকেই আবার কার্গোর মতো কাঁচা টাকার দায়িত্ব দেয়ার খবর মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়ায় ভীষণ ক্ষুব্ধ হন মন্ত্রী ও সচিব দুজনেই। তাদের নির্দেশে গত সপ্তাহে ওএসডি করা হয় শফিকুলকে। একই সঙ্গে মার্কেটিং শাখায়ও আনা হয় ব্যাপক পরিবর্তন। এ সম্পর্কে বিমানের সাবেক পরিচালক জনকণ্ঠকে বলেন, লন্ডন কেলেঙ্কারির জন্য বলির পাঠা বানানো হয়েছে পরিচালক আশরাফুল আলমকে। শফিকুলের অপকর্মের দায়ে তাকে খেসারত দেয়ার ঘটনা অনেকটা উদোর পি-ি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর মতোই। এ বিষয়ে বিমান সচিব মহিবুল হক বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই এই দুজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তদন্ত চলছে। আরও যারা জড়িত তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনা হবে। এসব বিষয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, এখন এমনিতেই ভাল সিজন। টিকেট ভালই সেল হচ্ছে। এটা ধরে রাখতে হবে।
×