ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম ও খুলনা অফিসে কর্মচারীদের সিন্ডিকেট

প্রকাশিত: ১১:৫০, ৭ এপ্রিল ২০১৯

  চট্টগ্রাম ও খুলনা অফিসে  কর্মচারীদের সিন্ডিকেট

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ নৌ বাণিজ্য দফতরের চট্টগ্রাম ও খুলনা অফিস ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের একটি সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে দেশী-বিদেশী জাহাজে আগমনের সংখ্যা বাড়ার ফলে আমদানি পণ্যের খালাস কাজও বেড়েছে। অথচ সরকারী রাজস্ব আয় কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে পক্ষান্তরে লোপাট হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের পরিস্থিতি বিরাজমান থাকলেও মন্ত্রণালয় বা অধিদফতরের পক্ষে রহস্যজনকভাবে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। মূলত ২০১৩ সাল থেকে নৌ বাণিজ্য দফতরের এ দুটি অফিস নিয়ন্ত্রণ করছে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কয়েক কর্মচারী। চট্টগ্রাম নৌ বাণিজ্য দফতরের প্রিন্সিপ্যাল অফিসার সম্প্রতি অবসরে গেছেন। তিনি পুনরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ লাভের তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে তিনি অবসরে গেলেও তারই ছত্রছায়ায় ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের এই সিন্ডিকেটের অপকর্ম অব্যাহত রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্য বোঝাই জাহাজ আসা যেমন অব্যাহত রয়েছে, তেমনি মংলা বন্দরেও বাড়ছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মংলা বন্দরে গড়ে বছরে ৭শ এবং ২০১৮ সালে ১ হাজারেরও বেশি জাহাজ মংলা বন্দরে ভিড়েছে। সমুদ্র বাণিজ্য দফতরের খুলনা অফিসের জন্য নিয়োগকৃত ৫ কর্মচারীর মধ্যে ৪ জনকে রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম অফিসে। খুলনা অফিসে এক পিয়নই যাবতীয় কাজে লিপ্ত। চট্টগ্রাম নৌ বাণিজ্য দফতরের একটি শাখা খুলনা অফিস। চট্টগ্রাম অফিস থেকে এক উচ্চমান সহকারী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে থাকেন। এ উচ্চমান সহকারী নির্দেশনা অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন সার্ভে ও ফিটনেস ইত্যাদি কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে আগত সমুদ্রগামী দেশী-বিদেশী জাহাজে অনাপত্তি সনদ প্রদান এমনকি কোন সার্ভেয়ার কি কাজ করবেন সেটিও এ উচ্চমান সহকারী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আরেক উচ্চমান সহকারী রয়েছেন সমুদ্রগামী ট্রলার, ফিশিং বোট ও কার্গো বোটের যাবতীয় নথি কর্মকান্ড পরিচালনয়। রেজিস্ট্রেশনকালীন সময়ে টনেজ প্রক্রিয়ায় কম দেখিয়ে সরকারের রাজস্ব লোপাট করা হয়। এই দুই উচ্চমান সহকারী অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে ইতোমধ্যেই দুদকের অনুসন্ধান কার্যক্রম চলছে বলে জানা গেছে। আরেক নিম্নমান সহকারী রয়েছেন যার কাজ সমুদ্রগামী জাহাজের অনাপত্তি সনদ প্রদান। অনলাইন সিস্টেমে অনাপত্তি সনদের ফি গত ৩ বছরে কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন ছলছুতায় এই নিম্নমান সহকারী শিপিং এজেন্ট প্রতিনিধিদের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ আদায় করে সনদ প্রদান করে যাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, ২০১৮ সালের ১ নবেম্বর থেকে অনলাইন প্রক্রিয়া সার্ভিস চার্জ আদায়ের নামে ৪ মাসে মোটা অঙ্কের অর্থ লোপাট হয়েছে। আরেক অফিস সহকারী রয়েছেন, যার মূল কাজ দফতর প্রদানে ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে। অথচ এই অফিস সহকারী কোস্টাল ট্যাংকের সার্ভে ও ফিটনেস নথির সার্ভের দায়িত্বের সিদ্ধান্ত প্রদান করছে। যা সম্পূর্ণ অফিস নিয়মবিরোধী। এক পিয়ন আছেন যাকে ইতোপূর্বে অফিস সহকারী করা হয়েছে। তার দৌরাত্ম্য এ দফতরে সীমাহীন। ২০১৩ সালে এই পিয়নকে করা হয়েছে অফিস সহকারী। ২০১৬ সালের প্রথম দিকে নৌ বাণিজ্য দফতরের একজন এ্যাকাউন্টেন্ট অবসরে গেলে এই পিয়নকে এ্যাকাউন্টেন্টের দায়িত্ব দেয়া হয়। হিসাব প্রক্রিয়ায় গরমিলের এন্থার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির ফলে পিয়ন থেকে অফিস সহকারী পদে আসা এ ব্যক্তির বিরুদ্ধেও দুদক অনুসন্ধান চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।
×