ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা ব্যয় নাগালের বাইরে

প্রকাশিত: ১০:২৯, ৭ এপ্রিল ২০১৯

 স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা ব্যয় নাগালের বাইরে

নিখিল মানখিন ॥ স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা ব্যয় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। দেশের মানুষের মাথাপিছু স্বাস্থ্য ব্যয় বেড়ে ২৭ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ব্যয়ের ৬৪ শতাংশ ব্যক্তি নিজের পকেট থেকে খরচ করে। ২৬ শতাংশ ব্যয় বহন করে সরকার। বাকি ১০ শতাংশ ব্যয় বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, এনজিও ও ব্যবসায়িক বীমা কোম্পানি বহন করে। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে বছরে ৪ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। দেশের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা এখনও অনেকটাই জেলা ও বিভাগ কেন্দ্রিক। জটিল জটিল অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের মাত্রাও অনেকগুণ বেড়েছে। ব্যয়বহুল হওয়ায় দরিদ্র মানুষ জটিল ধরনের অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা করাতে পারে না। স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি ও ভোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণীর জনগোষ্ঠীর মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। কিছু কিছু অসমতা এতটাই তীব্র ও প্রতিকূল যে, সমষ্টিগতভাবে তা দেশের অগ্রগতির অন্তরায়। কোন কোন ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতে অর্জিত সাফল্য টিকিয়ে রাখাই কষ্টকর। আবার কিছু ক্ষেত্রে স্থবিরতার লক্ষণ দৃশ্যমান। দেশে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচী বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হেলথ ইকোনমিকস ইউনিট, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান জিআইজেড সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ রবিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বিশ^ স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, জনগণের দোরগোড়ায় আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার কাজ ত্বরান্বিত করতে আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। খুবই সীমিত বাজেট নিয়ে দেশের মানুষের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সাফল্য দেখিয়েছে। এমনকি অনেক দেশের তুলনায় কম বাজেট নিয়েও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত দক্ষিণ এশিয়ায় স্বীকৃত অবস্থানে পৌঁছেছে। আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার চ্যালেঞ্জ উত্তরণের জন্য আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের হার বাড়ানো প্রয়োজন। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্যের চিত্র তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই ইউনিয়ন পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালের প্রথমবার সরকার পরিচালনায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রামের ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেন। এখন সারাদেশে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক সাফল্যের সঙ্গে জনগণকে সেবা দিচ্ছে। প্রতিদিন প্রতিটি ক্লিনিক থেকে প্রায় ১০০ মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে। ৩০ রকমের ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিবার-পরিকল্পনা উপকরণ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধসহ কোটি কোটি মানুষ সহজে বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন যা দেশে সমতাভিত্তিক সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এবং এই সফলতা বিশ্বের অনেক দেশের জন্য অনুকরণীয়। বর্তমান সরকার পুরনো কমিউনিটি ক্লিনিক নতুন করে সংস্কার করে আরও রোগীবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এখানে ডেলিভারি রুমসহ, পৃথক বিশ্রামাগর, কাউন্সেলিং রুম থাকবে। তিনি বলেন, শহরের দরিদ্ররা যেন সহজে বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পায় সেজন্য শহরের হাসপাতালগুলোতে ‘বিশেষ কর্নার’ খোলার চিন্তা করছে সরকার। এ ধরনের কর্নার খোলা হলে নিরীহ দরিদ্র শহুরে মানুষেরা দ্রুত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দেশে ক্যান্সার, কিডনি, লিভারসহ অনেক জটিল অসংক্রামক রোগের পূর্ণাঙ্গ ও শতভাগ নিরাপদ চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। এ সুযোগে এসব রোগে আক্রান্তদের নিয়ে চলে একদল অসাধু চিকিৎসক এবং চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান মালিক চক্রের রমরমা ব্যবসা। এমন বাস্তবতা জানার সুযোগ হয় না অনেক রোগী ও তাদের অভিভাবকদের। আরোগ্য লাভের আশায় চলে চিকিৎসা, কয়েক বছর পার না হতেই পরিবার হয়ে যায় নিঃস্ব, মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে রোগী। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে অনেক জটিল রোগের চিকিৎসার উন্নত ব্যবস্থা রয়েছে বাংলাদেশে।
×