ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষিকে সত্যিকার অর্থে বাণিজ্যিক করা হবে ॥ কৃষিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১:২৮, ৪ এপ্রিল ২০১৯

কৃষিকে সত্যিকার অর্থে বাণিজ্যিক করা হবে ॥ কৃষিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্রমেই এগিয়ে চলছে কৃষি। এখন দরকার কৃষির বহুমুখীকরণ ও বাণিজিকীকরণ। সেই সঙ্গে নিরাপদ খাদ্যও সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। কৃষিকে সত্যিকার অর্থে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর করতে চায় সরকার। বাণিজ্যিক কৃষি করতে যা প্রয়োজন তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। একই সঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ ও পরিসংখ্যান বুরে‌্যা বিবিএসের তথ্যের যে গ্যাপ ফোঁক রয়েছে তাও কমিয়ে আনা হবে। সঠিক তথ্য পেতে একটি কৃষি তথ্য ভা-ার গড়ে তোলা হবে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী। বুধবার কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) আয়োজিত সোনারগাঁও হোটেলে ‘কৃষি ভিত্তিক মিডিয়া সংলাপ ২০১৯’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী। গণমাধ্যম, কৃষি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কিভাবে দেশের তথা কৃষির উন্নয়নে অবদান রাখা যায় সে উদ্দেশে সংলাপটি আয়োজন করা হয়। কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমাদের সামনে দুটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। পুষ্টি ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত ও কৃষির সত্যিকার অর্থেই বাণিজিকীকরণ করা। আগামী ৫ বছরে কৃষিকে সত্যিকার অর্থে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর করা হবে। সেই সঙ্গে আমরা নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তাও দিতে পারব। আগামীতে কৃষির গুরুত্ব আরও বাড়বে। আমাদের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ রয়েছে। আমি খাদ্যমন্ত্রী থাকার সময় নিরাপদ খাদ্য আইন নিয়ে এসেছিলাম। আমি চাই এই কর্তৃপক্ষ যথযথ কাজটি করুক। খাদ্যে ভেজাল দেয়া কিংবা বালাইনাশকের যাচ্ছেতাই ব্যবহার হয়, দূষিত পানি সবজিতে দেয়া হয় এসব রুখতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ নির্দয় ও নিষ্ঠুর ‘দেখভাল’ করুক। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আগে দেশে খাদ্য ঘাটতি ছিল। খাদ্য আমদানি করতে হয়েছে। দেশ ছিল দুর্যোগপ্রবণ। অনেক মানুষ না খেয়ে মারা গেছে, দুর্ভিক্ষ হয়েছে। এখন আর দুর্ভিক্ষ নেই। সেসব দিনগুলো অতিক্রম করে দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সেই সঙ্গে বেড়েছে মাথাপিছু আয়। তিনি বলেন, ২০০১, ২০০২ এমনকি ২০০৭-০৮ সালেও উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা দেখা দিত। সে সময় আমরা বিরোধী দলে ছিলাম। আমরা মঙ্গা এলাকায় রিলিফ বিতরণ করতে গিয়ে বহু মানুষের না খেয়ে থাকার কষ্ট দেখেছি। আর আমাদের দল ক্ষমতায় আসার পর থেকেই খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে কাজ শুরু হয়। দেশের উৎপাদন এখন কয়েকগুণ বেড়েছে। এবার খাদ্য উৎপাদনের যে টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছিল তার চেয়ে ১৩ লাখ টন খাদ্য বেশি উৎপাদন হয়েছে। আশা করা হচ্ছে বোরোতেও লক্ষ্য ছাড়িয়ে যাবে। এখন ধানের দাম কম। সরকার সরাসরি চাষীদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করতে পারে না তাই মিলারদের থেকে নেয় সেক্ষেত্রে অনেক সময় চাষী পর্যায়ে প্রকৃত সুবিধা মেলে না। তাই সরকার সারের দাম কমিয়েছে। যা সুবিধা সরাসরি কৃষক পাচ্ছে। কৃষিমন্ত্রী সরকারের ভর্তুকি ও প্রণোদনা নিয়ে বলেন, এসব না দিলে কিন্তু উৎপাদন বাড়ত না। এসব দেয়া হচ্ছে বলেই দানাদার শস্যে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। আমরা অন্যদের পাশেও দাঁড়াতে পারছি। নেপালের দুর্যোগে আমরা সহায়তা দিয়েছি। বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন অর্থনীতিবীদদের মন্তব্য আজ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ড. রাজ্জাক বলেন, শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের পশ্চিমা অর্থনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের আশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণ করেছে। বর্তমানে কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের চেষ্টা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত আমরা এ কাজও করতে পারব। তাদের আশঙ্কা আমরা বার বার মিথ্যা প্রমাণ করব। কৃষিমন্ত্রী বলেন, যে কোন মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নের জন্য মিডিয়া অপরিহার্য। কারণ মন্ত্রণালয়ে কি কাজ হচ্ছে তার গঠনমূলক সমালোচনা হলে সংশ্লিষ্টরা তা সুধরে আরও ভাল ভাবে কাজ করতে পারে। মিডিয়া শুধু এটুকুই নয়, বিদেশীরা এ দেশে বিনিয়োগ করতে পারবে কি না, বিনিয়োগ করার মতো পরিবেশ আছে কিনা। মিডিয়া তা তুলে ও এ বিষয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে পারে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই এখন নিরাপদ খাদ্য। এটি আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জও বটে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ফসলে যে বালাইনাশক ব্যবহার হয় তা যেন যাচ্ছেতাচ্ছে ভাবে না হয়। আমরা লক্ষ্য করেছি অনেক সময় বেগুনে উৎপাদনে ২৭/২৮ বার ব্যবহার হচ্ছে। এসব সুষ্ঠুভাবে হতে হবে। খাদ্যকে যে কোন মূল্যে নিরাপদ করতে হবে। ট্যানারি দিয়ে পোল্ট্রি খাদ্য তৈরি করা হয় এটির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে মন্ত্রী বলেন, দেশে যত পোল্ট্রি রয়েছে এবং খাদ্যের যে চাহিদা শুধু ট্যানারি দিয়ে সেটি অসম্ভব। পোল্ট্রিতে নেতিবাচক দৃষ্টি ও প্রচারের কারণে অনেক সময় পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষির তথ্য নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ একটি তথ্য দেয় আবার বিবিএস অন্যরকম দেয়। এই দুটির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে মন্ত্রী বলেন এটির গ্যাপ কমিয়ে আনা হবে। দেশে কফি উৎপাদন হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দেশে এখন অনেক কিছুই উৎপাদন হচ্ছে। আমরা কৃষির উন্নয়নে সবার সহযোগিতা চাই। কৃষি রফতানি যেন বাড়ানো যায়, কৃষির সার্বিক উন্নয়নে সবাইকে পাশে চান মন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি কৃষি মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা কৃষিভিত্তিক রফতানি বাড়াতে পারিনি। পরিমাণ বাড়াচ্ছি তবে গুণগত মান বাড়াতে পারলাম কত সেটি দেখতে হবে। সেদিকে তিনি সবাইকে নজর দিতে বলেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান বলেন, এক কোটি ৫৩ লাখ মেট্রিক টন আমন উৎপাদন হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ লাখ টন বেশি। কৃষি খাতে উন্নয়ন হচ্ছে। যদি বিনিয়োগ করা যায় তবে কর্মসংস্থান বাড়বে। কৃষি থেকে অনেক কৃষক চলে যাচ্ছে, জমি বর্গা দিচ্ছে, অন্যকে চাষাবাদ করাচ্ছে। আমরা চাচ্ছি কৃষককে কৃষিতে ফিরিয়ে আনতে। সচিব বলেন, কৃষি পণ্যের দাম কমলেও আমরা বিড়ম্বনায় থাকি আবার বাড়লেও। কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক ড. নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন এআইএসের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ড. মোঃ খালেদ কামাল। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামীম রেজা। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৪.২৩ শতাংশের কাছাকাছি। তবে পরিসংখ্যানের মাধ্যমে অর্থনীতি ও কৃষির গুণগত অবস্থান এবং জীবনযাত্রার প্রভাব মূল্যায়ন করা যাবে না। কৃষির উন্নয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে একটি সমন্বিত কৃষি তথ্য পরিকল্পনার কথা বলেন তিনি। একই সঙ্গে কৃষি বিষয়ে মনোভাবের পরিবর্তনের কথাও বলেন। উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা কৃষি উন্নয়নে আলোকপাত করেন। একই সঙ্গে তথ্য সহজভাবে পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা বিষয় উপস্থাপন করেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষির বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বরত কর্তা ব্যক্তিরাও। সভাপতির বক্তব্যে সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে ড. নুরুল ইসলাম বলেন, তথ্য দেয়াই তথ্য সার্ভিসের কাজ। আমরা তথ্যকে কিভাবে আরও সহজ ও সুন্দরভাবে দিতে পারি সেটি নিয়ে সব সময় কাজ করছি। দেশের উন্নয়ন তথা কৃষকের উন্নয়ন নিয়ে সব ধরনের কৃষি তথ্য দিতে আমরা প্রস্তুত। এ অনুষ্ঠানে মাধ্যমে তৈরি হওয়া সেতুবন্ধ সামনের অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করবে। অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম সাংবাদিকসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×