ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুযোগ নিচ্ছে সন্ত্রাসীরা

টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারা বেপরোয়া হয়ে উঠছে

প্রকাশিত: ১১:০১, ৩১ মার্চ ২০১৯

টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারা বেপরোয়া হয়ে উঠছে

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ উখিয়া টেকনাফে ৩০টি ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ক্যাম্প অভ্যন্তরে অস্ত্র হাতে ঘোরাফেরা করছে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা। এতে তারা নিজ দেশে প্রত্যাবাসন হবে কিনা এ বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। স্থানীয়রা বলেন, এখনই রোহিঙ্গাদের লাগাম টেনে ধরা দরকার। তা না হলে টপটেরর রোহিঙ্গাদের আইনের আওতায় আনা কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। ক্যাম্প ছেড়ে রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাচল, মিয়ানমারে যাতায়াত, ক্যাম্প অভ্যন্তরে শত শত দোকানপাট খুলে ব্যবসা বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়া ও পুরনো রোহিঙ্গা জঙ্গীদের সঙ্গে সহজে যোগাযোগের সুযোগ পাওয়াটা ভবিষ্যতে কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। কিছুসংখ্যক এনজিও ও আরাকান বিদ্রোহী ক্যাডার রোহিঙ্গাদের উস্কানি দিচ্ছে। যার ফলে নাগরিকত্ব না পাওয়ার বাহানায় রোহিঙ্গারা ফিরে যাবে না নিজ দেশ মিয়ানমারে। উখিয়া টেকনাফের আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে সহজে ওইসব রোহিঙ্গারা ভাসানচরেও স্থানান্তর হবে না বলে জানা গেছে। সীমান্ত এলাকায় রোহিঙ্গা শিবির স্থাপন করা মোটেও ভাল হয়নি। আশ্রয় শিবির থেকে মাত্র আধা কি.মিটার দূরে ওপারের সীমান্ত এলাকা। উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী ময়নাঘোনা, হাকিমপাড়া, শফিউল্লাহকাটা, টেকনাফের চাকমারকুল, পুঠিবনিয়া লেদা, নয়াপাড়া ও মুচনী ইত্যাদি আশ্রয় শিবির থেকে পূর্বদিকে মাত্র অর্ধ কিলোমিটার পর রয়েছে সীমানা চিহ্নিত খাল নাফ নদী। নদীটির ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চল ও এপারে বাংলাদেশ। আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে মাছ ধরার ভান করে রোহিঙ্গারা ওপারে যাচ্ছে সহজে। ভাটার সময় নাফ নদীতে বেশি পানি থাকে না। হেঁটে এপার-ওপার যাওয়া আসা করা যায়। ওপার থেকে রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ ইয়াবা নিয়ে আসছে এখানে। আবার বহু সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা ওপারে গহীন অরণ্যে আরাকান বিদ্রোহীদের ঘাঁটিতে অস্ত্র চালানোর ট্রেনিং নিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। কিছু কিছু রোহিঙ্গা সীমান্ত এলাকার স্থানীয় বাজার ও রোহিঙ্গা শিবিরের বাজার থেকে রোহিঙ্গা জঙ্গীদের জন্য ওপারে তাদের ঘাঁটিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। ওই অবৈধ কাজ সেরে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা ফের ঢুকে পড়ছে আশ্রয় শিবিরে। বিশেষ করে মিয়ানমার সীমান্তের জিরো লাইনে অবস্থান করা কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা তাদের সহযোগী ক্যাডার রোহিঙ্গা জঙ্গীদের (আরএসও) জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় বাজার থেকে। তারা তুমব্রু বাজারে সহজে যাওয়া আসা করছে। তাদের জন্য এপার থেকে নিয়মিত ত্রাণ সামগ্রীও পাঠানো হচ্ছে। আল-ইয়াকিন তথা আরসা ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) ক্যাডাররা বিদেশী একাধিক সংস্থার (এনজিও) সঙ্গে যোগাযোগ করে রোহিঙ্গাদের জন্য জিরো লাইনে মাচাংঘরও নির্মাণ করে দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের দোহাই তুলে লাখ লাখ টাকা কামাই করছে পুরনো রোহিঙ্গা নেতারা (আরএসও)। তারা বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সেবার নামে নিয়ে আসছে বিদেশী অর্থ। ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট প্রদর্শন করার সময় ওরা (রোহিঙ্গা জঙ্গী) বাংলাদেশী নাগরিক। আবার গন্তব্যস্থানে (বিদেশে) পৌঁছে তারা বনে যায় রোহিঙ্গা নেতা। রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের কথা বলে তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা ধনাঢ্যশালী রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ আনছে ওই পুরনো রোহিঙ্গা জঙ্গীরা। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নতুবা ভাসানচরে স্থানান্তর করা হলে ওসব রোহিঙ্গা জঙ্গীদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যেসব এনজিও রোহিঙ্গাদের উস্কানি দিচ্ছে, তাদেরও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে একই অবস্থা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই তারা রোহিঙ্গাদের বিভিন্নভাবে উস্কানি দিচ্ছে। বর্তমানে ওই এনজিওগুলো গাড়ি কক্সবাজার শহর থেকে এক ঘণ্টার ভেতর সহজে ক্যাম্পে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হলে তাদের পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে। এতে বিপুল অর্থ আত্মসাত করা মুশকিল হয়ে পড়বে। তাছাড়া উখিয়া টেকনাফের ক্যাম্পগুলো অরক্ষিত হলেও ভাসানচরে একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা। উখিয়া টেকনাফে গড়ে উঠা ৩০টি আশ্রয় শিবিরে প্রবেশ করতে অসংখ্য মেঠোপথ রয়েছে। ভাসানচর যেহেতু একটি দ্বীপ সেখানে প্রবেশের প্রাক্কালে প্রধান ফটক থাকবে। ওই ফটক অতিক্রম করেই আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে হবে। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে জবাবদিহিতার প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে তারা সহজে ভাসানচরে প্রবেশ করতে পারবে না। এসব ঝামেলা এড়াতে রোহিঙ্গা জঙ্গী ও এনজিও প্রতিনিধিরা সাধারণ রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে না যেতে উস্কানি দিচ্ছে।
×