ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশেষজ্ঞদের অভিমত

পানি সঙ্কটে ক্ষয়ক্ষতি বেশি- ফায়ার হাইড্রেন্ট জরুরী

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ৩১ মার্চ ২০১৯

পানি সঙ্কটে ক্ষয়ক্ষতি বেশি- ফায়ার হাইড্রেন্ট জরুরী

কাওসার রহমান ॥ আগুন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত একটি কার্যকর পদ্ধতির নাম ‘ফায়ার হাইড্রেন্ট’। এটি মূলত রাস্তার ধারে থাকা এক ধরনের পানির কল, যা থেকে জরুরী প্রয়োজনে পানি সরবরাহ করা যায়। প্রায় দুই শ’ বছর আগে এটি আবিষ্কৃত হয়। তবে বাংলাদেশে এখনও এই ব্যবস্থাটির ব্যবহার দেখা যায় না। নিমতলী ও চকবাজারের ঘটনায় দেখা গেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সরু অলিগলি পেরিয়ে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারলেও প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহের অভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি। গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টার কেমিক্যাল গোডাউনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পানির সঙ্কটে পড়েন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বিভিন্ন বাড়ির রিজার্ভ ট্যাঙ্কেও পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায়নি। দূর থেকে পাইপ টেনে পানির ব্যবস্থাপনা করতে হয়েছিল। এছাড়া ওয়াসা ও সিটি কর্পোরেশনের গাড়িতে করেও পানি এনে আগুন নেভাতে দেখা গেছে। ফলে আগুনের ব্যাপ্তি আর ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে বনানী এফআর টাওয়ারে আগুন নেভানোর ক্ষেত্রে। পানির অভাবে দমকল বাহিনীর আগুন নেভানোর কার্যক্রম শুরু করতেই এক ঘণ্টা বিলম্ব হয়েছে। আবার দূর থেকে পানি এনে আগুন নেভাতে গিয়ে বার বার পানি শেষ হয়ে গেছে। ফলে পানির অভাবে বনানীর আগুন নেভাতে ৪ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে। এতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। অথচ রাস্তায় ফায়ার হাইড্রেন্ট থাকলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে মুহূর্তেই দমকল বাহিনী এই ফায়ার পাম্পের সঙ্গে সংযোগ দিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে দিতে পারত। ফায়ার হাইড্রেন্ট হচ্ছে পানির একটি সংযোগ উৎস, যা পানির প্রধান উৎসের সঙ্গে যুক্ত থাকে। যে কোন জরুরী প্রয়োজনে এই উৎস থেকে পানি সরবরাহ করা যায়। তবে এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে- এর সঙ্গে লম্বা পাইপ যুক্ত করে ইচ্ছেমতো যে কোন দূরত্বে পানি সরবরাহ করা যায়। তাই বিশ্বের বড় বড় বিভিন্ন শহরে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা হিসেবে এই প্রযুক্তির প্রচলন রয়েছে। দেখা যায়, সাধারণত বড় বড় শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ফায়ার হাইড্রেন্ট বা পানির পাম্প স্থাপন করা হয়। কোথাও আগুন লাগলে এই পাম্প থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হয়। সাধারণত দেখা যায়, শহর এলাকায় এমন কিছু সরু রাস্তা থাকে, যেখান দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না। এমতাবস্থায় এসব এলাকায় আগুন লাগলে তা নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে এসব এলাকায় ফায়ার হাইড্রেন্টের ব্যবস্থা থাকলে লম্বা পাইপ দিয়ে প্রয়োজন অনুসারে পানি সরবরাহ করা যায়। ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণ সহজ হয় এবং ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ অনেক কমানো সম্ভব হয়। ফায়ার হাইড্রেন্ট প্রযুক্তির উদ্ভাবন নিয়ে সুস্পষ্ট তথ্য জানা যায়নি। তবে প্রচলিত ধারণা থেকে জানা যায়, ১৮০১ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার প্রধান প্রকৌশলী ফ্রেডরিক গ্রাফ অগ্নিনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কৌশল হিসেবে ফায়ার হাইড্রেন্ট উদ্ভাবন করেন। কিন্তু ১৮৩৬ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত প্যাটেন্ট কার্যালয় আগুনে পুড়ে গেলে বেশ কিছু প্যাটেন্ট সম্পর্কিত দলিলপত্র নষ্ট হয়ে যায়। তাই ফায়ার হাইড্রেন্টের উদ্ভাবক হিসেবে প্রমাণক দলিলপত্র পাওয়া যায়নি। তবে, আবিষ্কারের প্রথম দিকে শহরে পানি সরবরাহের কাজে ফায়ার হাইড্রেন্টের প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে এটি আগুন নিয়ন্ত্রণের প্রযুক্তি হিসেবে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৮৬৫ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে লোহার তৈরি ফায়ার হাইড্রেন্টের প্রচলন শুরু হয়। ১৮৭০ সালের দিকে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে এর ব্যবহার শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে ইউরোপের অন্যান্য দেশে এটি ছড়িয়ে পড়ে। এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে জাপান ১৮৮৭ সালে ১৩১টি ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করে। এরপর ধীরে ধীরে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ফায়ার হাইড্রেন্ট ব্যবস্থার প্রচলন শুরু হয়। এমনকি আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও আগুন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ফায়ার হাইড্রেন্টের প্রচলন রয়েছে। ভারতের কলকাতাকে এর আওতায় আনা হয় সেই ইংরেজ আমলেই। যেখানে কলকাতাকে মাত্র একটি নদী আর ঢাকাকে বেষ্টন করে আছে চারটি নদী। কিন্তু অপরিকল্পিত এ ঢাকা নগরীতে আজও ফায়ার হাইড্রেন্ট ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোন উদ্যোগই নেয়া হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাধীনতার প্রায় পাঁচ দশক হতে চললেও এখনও বাংলাদেশে এই প্রযুক্তির প্রচলন দেখা যায়নি। যদিও প্রতিবছরই দেশের প্রধান শহরগুলোতে বিভিন্ন সময়ে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি ঢাকার চকবাজারের অগ্নিকা-ের ঘটনা প্রায় ৭১ জনের জীবন কেড়ে নিয়েছে। সর্বশেষ বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকা-ে ২৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এর আগে ২০১০ সালে ঢাকার নিমতলীতেও ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছিল। সেখানে ১৩৪ জনের করুণ মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া আমাদের গার্মেন্টস শিল্পেও প্রায়ই অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। তৈরি পোশাক শিল্পে সবচেয়ে বড় অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছিল তাজরীন ফ্যাশনে। ওই অগ্নিকা-ে ১১২ লাশ উদ্ধার করা হয়। একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটা সত্ত্বেও এসব দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফায়ার সার্ভিসকে আধুনিকায়ন করা হলেও জনাকীর্ণ এলাকাগুলোতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে সেখানে সময়মতো পৌঁছানো সম্ভব হয় না। বিশেষ করে জনাকীর্ণ এলাকায় আগুন নেভানোর জন্য পানি সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকায়, এসব এলাকায় অগ্নিকা-ে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলছে। অথচ এসব এলাকায় অগ্নি নিয়ন্ত্রণের জন্য পানি সরবরাহ করতে ফায়ার হাইড্রেন্ট ব্যবস্থা খুবই কার্যকর একটি কৌশল হতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রায় দুই শ’ বছর আগে উদ্ভাবিত হলেও এই প্রযুক্তিটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে স্থাপন করা হয়নি। তাই আগুন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উন্নত করতে দেশের প্রধান শহরগুলোতে দ্রুত এই প্রযুক্তির প্রচলন করা উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা শহর পরিকল্পিতভাবে গড়ে না উঠলেও সরকার ও নগরের দায়িত্বশীলরা চাইলে পুরো ঢাকা শহরজুড়ে ‘স্ট্রিট হাইড্রেন্ট’ বসানো সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন দায়িত্বশীলদের সদিচ্ছা। চারপাশে নদী বেষ্টিত ঢাকা শহরে পানির অভাবে আগুন নেভাতে না পারার মতো ঘটনা লজ্জাজনক। ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ‘পুরান ঢাকাসহ সারা শহরে স্ট্রিট হাইড্রেন্ট করার জন্য সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসাকে অনেক আগে থেকে আমরা সুপারিশ করে আসছি। সরকার চাইলে পুরো ঢাকা শহরে হাইড্রেন্ট বসানো সম্ভব।’ স্ট্রিট হাইড্রেন্টের কার্যকারিতা প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পাম্পের পানির প্রেসার দেয়া থাকবে। বিভিন্ন পয়েন্টে হাইড্রেন্ট বসানো থাকবে। সেগুলোতে ডেলিভারি হুজ লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে পানির সোর্স পাবে। এবং সেই পানি দিয়ে আগুন নেভানোর কাজটা দ্রুত করা যাবে।’ এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সাবেক সভাপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, শহরজুড়ে স্ট্রিট হাইড্রেন্ট বসানোর শতভাগ সুযোগ রয়েছে। মরুভূমিতে ফায়ার হাইড্রেন্ট বসানো গেলে আমাদের এখানে কেন নয়? পৃথিবীর একমাত্র রাজধানী ঢাকা, যার চারপাশে নদী রয়েছে। আমরা পানি বেষ্টিত অবস্থায় থেকে পানির অভাবে আগুন নেভাতে পারি না, এর চেয়ে লজ্জাজনক অবস্থা আর কী হতে পারে? তিনি বলেন, ‘আমাদের পাশে কলকাতায় ব্রিটিশ আমল থেকে ফায়ার হাইড্রেন্ট আছে। কিন্তু আমাদের এখানে নেই। গত ১৫-২০ বছর ধরে বলা হচ্ছে, ঢাকা শহরের চারপাশে নদী আছে, জরুরী ভিত্তিতে ফায়ার হাইড্রেন্ট করা হউক। এটা করা হলে যেখানে ফায়ারের গাড়ি ঢুকতে পারে না, সরু গলি, সেখানেও পাম্প দিয়ে আগুন নেভানো সম্ভব। এগুলো তো বলা হচ্ছে। আমরা ফায়ার হাইড্রেন্টের বদলে নির্মাণ করি ফ্লাইওভার। যেসব এলাকা ডেভেলপমেন্ট হয়েছে, কিন্তু ফায়ার হাইড্রেন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাপনা রাখা হয়নি, সেসব স্থানে এখন করলেই হয়। আমাদের তো আগে ফ্লাইওভার ছিল না, এখন হচ্ছে। তাহলে ফায়ার হাইড্রেন্টও বসানো কেন সম্ভব নয়?’ নগর পরিকল্পনার সময় জননিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুরুত্ব পায় না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে অধিকাংশ এলাকা অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা। যেখানে অপরিকল্পিতভাবে নগর গড়ে ওঠে সেখানে ফায়ার হাইড্রেন্টের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো রাখা হয় না বা মানা হয় না। কিন্তু বনানীর মতো জায়গাকে তো অপরিকল্পিত বলা যাবে না। সেখানেও দেখা গেছে এই ভয়াবহতা।’ ড. আদিল মুহাম্মদ খান আরও বলেন, ‘সিটি হয়ে গেছে টাকা তৈরির যন্ত্র। যেখানে মানুষ, মানবিকতার জায়গা নেই। সিটিতে যে মানুষগুলো থাকে, তাদের নিরাপত্তা দেয়াটা জরুরী। একটা মানুষকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য সিটিতে যতটুকু প্রটেকটিভ মেজারস থাকে তার কোনটাই সিটির দায়িত্বশীলরা পালন করছেন না। এ কারণে বারবার দুর্যোগ আসছে। তবে এটাই শেষ না। একটা মানুষের জীবনের মূল্য অনেক। সে জীবন রক্ষা করার জন্য সরকার ও রাষ্ট্রকে অনেক ছাড় দিতে হবে। অনেক কঠোর হতে হবে। কোন নিয়মই সাধারণ মানুষ এমনিতে মানে না। তাকে মানাতে হয়। সমষ্টিগত ভাল’র জন্য রাষ্ট্রকে সে জায়গাটা তৈরি করতে হয়। যেনতেনভাবে করতে পারবেন না। এভাবে করতে হবে। নিয়ম মেনে করতে হবে। এই না বলার চর্চাটা কঠোরভাবে রাষ্ট্রকে করতে হবে।’ তবে এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসা বলছে, ভবিষ্যতে যেসব স্থান ডেভেলপমেন্ট হবে, সেসব স্থানে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা হবে। ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিন এ খান নগর পরিকল্পনায় ফায়ার হাইড্রেন্টের মতো ব্যবস্থা না থাকাকে দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আরবান প্ল্যানিংয়ে শহরে ফায়ার হাইড্রেন্ট থাকতে হয়। এটা প্ল্যানিংয়ের একটা পূর্ব শর্ত। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে পরিকল্পিতভাবে আরবান প্ল্যানিং হয়নি। যার জন্য এই ফায়ার হাইড্রেন্টের অভাব রয়ে গেছে। তবে আমাদের নতুন যেসব প্রকল্প আসছে, সেগুলোতে ফায়ার হাইড্রেন্ট রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ হবে।’ যেসব এলাকায় ফায়ার হাইড্রেন্ট নেই সেসব এলাকায় করণীয় সম্পর্কে ওয়াসার এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন যেসব এলাকায় করা সম্ভব হয়নি সেখানে ভবন ও বাড়িগুলোতে পর্যাপ্ত ফায়ার ফাইটিং টুলস রাখতে হবে। একই সঙ্গে নিচের যেখানে পানি রাখা হয়, সেখান থেকে ফায়ার সার্ভিস যাতে পানিটা ব্যবহার করতে পারে সেটার সুব্যবস্থা রাখতে হবে। এটা বিল্ডিং কোডের মধ্যেও আছে। সেখানে অনেক ক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতা দেখা যায়।’ ফায়ার হাইড্রেন্টকে ফায়ার প্লাগ, ফায়ার পাম্প, কিংবা শুধু পাম্প ইত্যাদি বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। এটি মাটির ওপরে কিংবা নিচে দুই পদ্ধতিতেই স্থাপন করা যায়। এটি দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হলো ‘ওয়েট ব্যারেল ফায়ার হাইড্রেন্ট’। এতে অবিরত পানি সরবরাহ থাকে। অন্যটি হলো ‘ড্রাই ব্যারেল ফায়ার হাইড্রেন্ট’। এ ধরনের পাম্পে বৈদ্যুতিক যন্ত্র বা ঢাকনি দ্বারা পানি সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। প্রয়োজনের সময় ঢাকনি সরিয়ে দিলে বা বৈদ্যুতিক যন্ত্র চালু করলে পানি সরবরাহ হয়। ফায়ার হাইড্রেন্ট কিভাবে কাজ করে ॥ খুব সহজে বলতে গেলে ফায়ার হাইড্রেন্ট যুক্ত থাকে একটি বা একাধিক জলাধারের সঙ্গে। আর এর সঙ্গে থাকে অতি শক্তিশালী পাম্প। ব্যবহারের সময় এ পাম্প চালু হয়ে যায় এবং জোরে এর মুখ দিয়ে পানি নির্গত হতে থাকে। চালু হওয়া থেকে পানি বের হওয়া পর্যন্ত সর্বোচ্চ তিন মিনিট সময় লাগে। একটি ফায়ার হাইড্রেন্ট থেকে মিনিটে ৫০০ থেকে ১৫০০ গ্যালন পানি বের হয়। ফায়ার হাইড্রেন্টের জলাধারগুলো সাধারণত প্রাকৃতিক পানির উৎস যেমন নদী, লেক এর সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং এগুলোর অবস্থান পানির উৎস থেকে নিচুতে থাকে যাতে করে পানির সম-উচ্চশীলতার কারণে উৎস থেকে জলাধারে আপনাআপনি পানি চলে যায়। যার কারণে ফায়ার হাইড্রেন্টের পানির সরবরাহ যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণই থাকে। ফায়ার হাইড্রেন্ট থেকে হোসপাইপের সাহায্যে আগুনের উৎসের কাছে পানি নিয়ে যাওয়া যায়।
×