ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নেপালের মুখোমুখি আজ বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ১৬ মার্চ ২০১৯

 নেপালের মুখোমুখি আজ বাংলাদেশ

রুমেল খান ॥ বেশ খানিকটা চাপ নিয়েই আজ বিরাটনগরের শহীদ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামের মাঠে খেলতে নামবে বাংলার বাঘিনীরা। গ্রুপসেরা হওয়ার জন্য আজ বিকেল সোয়া ৩টায় তারা এমন এক প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হবে যাদের এর আগের মোকাবেলায় কখনই হারানো যায়নি, বরং হারতে হয়েছে। সেই প্রতিপক্ষটির নাম নেপাল, যারা আবার স্বাগতিকও বটে। এমনিতেই স্বাগতিক প্রতিপক্ষ, তার ওপর তাদের বিপক্ষে আগে কখনই জয়ের কৃতিত্ব নেই... কাজেই সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে ‘এ’ গ্রুপে এমন পরিস্থিতিতে খেলতে নেমে জয় কুড়িয়ে নিয়ে গ্রুপসেরা হওয়াটা বেশ চ্যালেঞ্জই লাল-সবুজবাহিনীর জন্য। এখানে অবশ্য পাঠকরা ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করতে পারেন- যেখানে এক ম্যাচ হাতে রেখে আগেই এই আসরের সেমিফাইনাল খেলা নিশ্চিত করে ফেলেছে বাংলাদেশ দল, সেখানে আজকের ম্যাচে তাদের হারলে এমন কি আর ক্ষতি হবে? বড়জোড় গ্রুপ রানার্সআপই তো হবে। এর উত্তর হচ্ছে- আজকের ম্যাচে বাংলাদেশ দল যদি হারে বা ড্র করে, তাহলে তাদের সামনে অপেক্ষা করছে সমূহ বিপদ। বিপদের নাম হলো ভারত, যারা আগের চারটি সাফেরই চ্যাম্পিয়ন। ভারত আছে ‘বি’ গ্রুপে। তারাও ইতোমধ্যেই এক ম্যাচ হাতে রেখেই সেমিতে পৌঁছে গেছে। এখনও অবশ্য গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। সে জন্য তাদের আগামী রবিবার শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ন্যূনতম ড্র করলেই চলবে (শুক্রবার এই গ্রুপের খেলায় শ্রীলঙ্কা ২-০ গোলে হারায় মালদ্বীপকে। এই জয়ে শ্রীলঙ্কা শেষ চারে খেলা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিদায় ঘটে মালদ্বীপের)। বড় ধরনের কোন অঘটন না ঘটলে ভারত যে গ্রুপসেরা হচ্ছেই এতে আর কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। সেক্ষেত্রে ভারত ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হলে আবার বাংলাদেশ ‘এ’ গ্রুপের রানার্সআপ হলে আগামী ২০ মার্চ অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় সেমিতেই মুখোমুখি হবে এই দুটো দল। আর তাতে বিপদ-ক্ষতি দুটোই বেশি হওয়ার সম্ভাবনা বাংলাদেশের। এবার নিশ্চয়ই বোঝা গেছে কেন আজ নেপালের বিরুদ্ধে জিতে গ্রুপসেরা হওয়াটা বাংলাদেশের জন্য ভীষণ জরুরী? অথচ এই কঠিন সমীরকরণ অনেকটাই সহজ বা হাল্কা হয়ে যেত ‘দ্য বেঙ্গল টাইগ্রেস’ বাহিনীদের জন্য। যদি তারা নিজেদের প্রথম গ্রুপ ম্যাচে ভুটানকে কমপক্ষে চার গোলের ব্যবধানে হারাতে পারতো। তাহলে তারা আজ অনেকটা নির্ভার-দুশ্চিন্তামুক্ত হয়েই নেপালের বিরুদ্ধে খেলতে পারতো। কেননা নেপাল তাদের প্রথম ম্যাচে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল ভুটানকে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ মোট গোলসংখ্যায় যদি এগিয়ে থাকতো নেপালের চেয়ে, তাদের মোকাবেলার আগে। তখন জয় নয়, শুধু ড্র করলেই চলতো বাংলাদেশের, গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতো তারাই হেসেখেলে। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি বাংলাদেশ ভুটানকে দুই গোলের (২-০) বেশি দিতে পারেনি। আর এ জন্যই বেধেছে গোল, বেড়েছে চাপ-দুশ্চিন্তা। কেননা নেপাল এমনই এক দল যাদের কাছে এর আগে সাফে মুখোমুখি সাক্ষাতে প্রতিবারই হেরেছে বাংলাদেশ (৩ ম্যাচে ৩টিতেই হার, ২০১০ সাফের সেমিতে ০-৩ এবং ২০১৪ সাফের সেমিতে ১-০)। শুধু হারই নয়, এখন পর্যন্ত নেপালের বিরুদ্ধে গোলের ‘হালখাতা’ই খুলতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে সবকিছু মিলিয়ে আজকের ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য বেশ কঠিনই। তাছাড়া সাফের আগের চার আসরে যেখানে বাংলাদেশ মাত্র একবার ফাইনাল খেলেছে (২০১৬ আসরে রানার্সআপ), সেখানে নেপাল দ্বিতীয় সর্বাধিক তিনবার ফাইনাল খেলেছে (তিনবারই রানার্সআপ : (২০১০, ২০১২, ২০১৪)। পরিসংখ্যানে ভারতের পর নেপালই হচ্ছে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় সেরা দল। আর এমন দলকে আজ কিভাবে মোকাবেলা করে জিতবে বাংলাদেশ? এই ম্যাচটিকে সেমিফাইনালের আগেই আরেকটি সেমিফাইনালের সঙ্গে তুলনা করেছেন বাংলাদেশ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। অন্যদিকে কোনমতে ম্যাচটা ড্র করতে পারলেই গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে নেপাল। নিজেদের মাঠ এবং দর্শক নিয়ে এমনিতেই আত্মবিশ্বাসী তারা। তার মধ্যে আবার গোল গড়ে তারা এগিয়ে। তাই আজকের এই ম্যাচটা কোচ ছোটনের জন্য অগ্নিপরীক্ষাই। আজকের ম্যাচ সম্পর্কে কোচ ছোটন বলেন, ‘আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল সেমিফাইনাল। সেটি পূরণ হয়েছে। আগামীকাল (আজ) গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ম্যাচ। আর সেমিফাইনালের আগে নেপালের সঙ্গে খেলা মানে আরেকটা সেমিফাইনাল। আমি মনে করি তারা টুর্নামেন্টের অন্যতম হট ফেবারিট দল। এই ম্যাচে গ্যালারিতে অনেক দর্শক থাকবে। আমাদের মেয়েরা যদিও অনুর্ধ-১৬ বা অনুর্ধ-১৮’র খেলোয়াড়, যেটাই থাকুক প্রতিনিয়ত তারা উন্নতি করছে। এটার প্রতিফলন আমরা দেখতে পারব।’ দলীয় অধিনায়ক সাবিনা খাতুনও মানছেন নিজেদের মাঠে নেপাল শক্তিধর প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের জন্য। তার কথায়, ‘নেপাল অবশ্যই শক্ত প্রতিপক্ষ। তারা অনেক অভিজ্ঞ দল। আপনারা জানেন আমাদের সিনিয়র টিম অনেক ইয়ং। অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে আমরা একটু পিছিয়ে থাকলেও শক্তির দিক দিয়ে আমার মনে হয় না খুব একটা পিছিয়ে আছি। কাল (আজ) একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ হবে। আমরা চেষ্টা করব আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে খেলার।’ প্রতিপক্ষ শক্তিধর হলেও অচেনা নয়। তবে বাংলাদেশ সিনিয়র জাতীয় দলেও বেশিরভাগ খেলোয়াড়ের বয়স ১৮ বছরের মধ্যেই। তাই সেদিক বিবেচনা করে ম্যাচটাকে চ্যালেঞ্জিং বলেই মানছেন দলের অভিজ্ঞ এই ফরোয়ার্ড, ‘অলিম্পিক কোয়ারিফায়ারে মিয়ানমারে আমরা নেপালের সঙ্গে ড্র করেছিলাম। ওই দিক দিয়ে দেখতে গেলে আমাদের টিম কিন্তু অনেক উন্নতি করেছে। অবশ্যই তাদের হারানোর বিশ্বাস আছে। আর মেয়েদের মধ্যে কোন ভয়ভীতি কিছুই নেই। নেপালের সঙ্গে লড়াই করতে আমরা সবাই প্রস্তুত আছি। শুধু তারা আমাদের চেয়ে অভিজ্ঞতাই এগিয়ে। অন্যদিক দিয়ে ঠিকই আছে।’ দলের ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীনের ভাষ্য, ‘আমরা চেষ্টা করব জিততে। আমরাও তো চাই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। আমাদের শতভাগ দিয়েই মেলে ধরব। হার-জিত তো থাকবেই। আমাদের ডিফেন্সটা ভাল আছে। আমাদের স্যার যেভাবে বলবেন সেভাবেই খেলব। আশাকরি রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা ওদের আটকাতে পারবে।’ এখন দেখার বিষয়, আজকের ম্যাচে ১০৮ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী হিমালয়কন্যাদের হারিয়ে কাক্সিক্ষত গ্রুপসেরা হতে পারে কি না ১২৫ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী বঙ্গকন্যারা।
×