ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

অনাচার হটিয়ে মৈত্রীর আহ্বানে শুরু রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ৯ মার্চ ২০১৯

  অনাচার হটিয়ে মৈত্রীর আহ্বানে শুরু রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রবীন্দ্রনাথকে নিয়েই সকালের শুরু। তারই গানে গানে কেটে গেল সন্ধ্যা থেকে রাত। ফাগুনের ঝলমলে রোদেলা প্রভাতে ছড়াল কবিগুরুর সৃষ্টির ঐশ্বর্য। তারই সৃষ্ট সুরে সুরে দিনভর হলো প্রতিযোগিতা। গানের সঙ্গে উচ্চারিত হলো কবির রচিত কবিতার পঙ্ক্তিমালা। বিশ্বকবির সৃষ্টির আলোয় অনাচার হটিয়ে ব্যক্ত হলো সম্প্রীতির আহ্বান। সেই প্রত্যাশায় অনেক কণ্ঠ মিলিয়ে যায় এক সুরে। সবাই মিলে গেয়ে শোনায়- আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া/ বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া/এই-যে বিপুল ঢেউ লেগেছে তোর মাঝেতে উঠুক নেচে/ সকল পরান দিক-না নাড়া...। প্রাণের কলরবে এভাবেই শুক্রবার থেকে শুরু হলো জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের আয়োজিত তিন দিনের ৩৮তম সম্মেলন। সংস্কৃতির পথরেখায় মৈত্রীর আহ্বানে শুরু হওয়া এ সম্মেলনে সারাদেশ থেকে অংশ নিচ্ছে সম্মিলন পরিষদের ৬১টি শাখার সদস্য শিল্পীরা। সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে দেশের নানা প্রান্তের সাড়ে চার শ’ প্রতিযোগী। প্রতিযোগিতার পাশাপাশি তিন দিনের সম্মেলনে বর্ণিল আবহ যুক্ত করেছে আলোচনা, আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশনা। ‘আপন হতে বাহির হতে বাইরে দাঁড়া’ শীর্ষক বোধন সঙ্গীতের পরিবেশনার মাধ্যমে উৎসবের সূচনা করেন শিল্পীরা। উৎসবের উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। পরিষদের সভাপতি ড. সন্জীদা খাতুনের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল ইসলাম। ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ গানের সুরে প্রদীপ প্রজ্বালন করে উৎসবের উদ্বোধন হয়। এ সময় গানের সঙ্গী হিসেবে ছিল নান্দনিক নৃত্য পরিবেশনা। উদ্বোধনী বক্তব্যে মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি ছেলে ও মেয়েরা সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। যে সমাজে নারী-পুরুষ একসঙ্গে এগিয়ে যায় সেই সমাজে অগ্রগতি কেউ রোধ করতে পারে না। প্রাত্যহিক জীবনে রবীন্দ্রনাথের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, রবীন্দ্রসঙ্গীত না শুনে আমার একটা দিনও কাটেনি। যে মানুষটি রবীন্দ্রসঙ্গীত উপভোগ করতে পারে না তার মতো দুর্ভাগা আর কেউ নেই। তিনি দুঃখ করে বলেন, নতুন প্রজন্ম পাঠ্যবইয়ে স্থান পাওয়া গল্প কবিতা ছাড়া রবীন্দ্রনাথের অন্য কোন লেখা পড়ে না। সন্জীদা খাতুন বলেন, রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চায় আমাদের সাধনা সিদ্ধির পথে চলেছে। শুরুতে এই সংগঠনের কাজ ঢাকাকেন্দ্রিক ছিল। এখন সারাদেশে ছড়িয়েছে। সংস্কৃতির চর্চা চলছে। সংস্কৃতির চর্চা মানুষকে ভালবাসতে শেখায়। সমাজের অনাচার দূর করতে সংস্কৃতি একটা আশ্রয়। সেই সংস্কৃতির আশ্রয়ে আমরা সারাদেশের মানুষকে মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ করতে চাই। সম্মেলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সারাদেশে রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা ও প্রশিক্ষণ যে হচ্ছে তা এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বুঝতে পারি। বছরের একটা সময়ে এসে পরিচিত মুখগুলো দেখে মনটা ভরে যায়। বুলবুল ইসলাম বলেন, বিশ্ব নারীর দিবসের দিনটিতে এই সম্মেলনের সূচনা হওয়াটা তাৎপর্যপূর্ণ। রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন একজন নারী। ছায়ানট ও রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের মতো দুটি বড় সংগঠনের সভাপতিও একজন নারী। এ দুই ক্ষেত্রেই আমরা নারীর এগিয়ে চলার বার্তা পাই। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে পরিবেশিত হয় গীতি আলেখ্য ‘বিশ্বভরা প্রাণ’। এর সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন লাইসা আহমদ লিসা, নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর শুরু হয় কিশোর বিভাগের সঙ্গীত প্রতিযোগিতা। বিকেলে রবিরশ্মি শীর্ষক অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। সম্মেলক গান পরিবেশন করেন ময়মনসিংহ ও সিলেট জেলা সংসদের শিল্পীরা। কবিতার দোলায়িত ছন্দে আবৃত্তি করেন হাসান আরিফ ও ডালিয়া আহমেদ। সমবেত নৃত্য পরিবেশনায় ছিল ভাবনা। একক নৃত্য পরিবেশন করেন সুদেষ্ণা স্বয়ংস্প্রভা ও মিতা বিশ্বাস। একক কণ্ঠে গান শোনান ফেরদৌস আরা লিপি, মধুমিতা মৈত্র, শহীদুল ইসলাম টিটু, ছায়া কর্মকার, বুলবুল ইসলাম, লিলি ইসলাম, শাকিল হাসমি, অশোক সাহা, আকলিমা খাতুন, নীলোৎপল সাধ্য, তানিয়া মান্নান, দিবাকর বিশ্বাস, কৃষ্টি হেফাজ, সাধন ঘোষ, অনিরুদ্ধ সেনগুপ্ত, অভয়া দত্ত, নাঈমা ইসলাম নাজ, সুদীপ সরকার, স্টিভ তূর্য বাড়ৈ প্রমুখ। তিন কবির গান শোনান ঝুমা খন্দকার, প্রমীলা চক্রবর্তী, শিবেষ কীর্তনীয়া, সুমন মজুমদার ও দেবলিনা সুর। আজ শনিবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের সকালে অনুষ্ঠিত হবে সাধারণ বিভাগের প্রতিযোগিতা। বিকেলে রয়েছে প্রতিনিধি সম্মেলন। এরপর রয়েছে সেমিনার। রবীন্দ্রনাথের গানের ‘সজীব মূর্তি’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করবেন ড. অসীম দত্ত। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। রবিবার বিকেলে সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে রবীন্দ্রপদক ও গুণীজন সম্মাননা প্রদান করা হবে লোকসঙ্গীত শিল্পী সুষমা দাসকে।
×