ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় পাট দিবসে পাটপণ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান

পাটকে লাভজনক করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১:০৩, ৭ মার্চ ২০১৯

পাটকে লাভজনক করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী

পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পাট ও পাটপণ্যের রফতানির জন্য প্রণোদনা সুবিধা প্রদানের কথা ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাট শিল্প টেকসই করতে এ খাত লাভজনক করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় পাট দিবস-২০১৯ এবং বহুমুখী পাটপণ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাট এমন একটি পণ্য যার কিছুই ফেলনা নয়, অতএব কেন এতে লোকসান হবে, আমি কোন লোকসানের কথা শুনতে চাই না বরং পাটশিল্প কিভাবে লাভজনক হবে সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, নতুন পণ্যের উদ্ভাবনার মাধ্যমে আমরা এই খাতকে লাভজনক করতে পারব। যারা হতাশাপূর্ণ আমি তাদের মধ্যে নেই, আমি সর্বদা আশাবাদী।’ খবর বাসস’র। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সব সময় এই খাতের উন্নয়নে সহযোগিতা দিচ্ছে। তবে আমরা চাই বেসরকারী খাত এই খাতের প্রতি আরও গুরুত্ব দিক। বেসরকারী খাত এই খাতে যত বেশি গুরুত্ব দেবে পাটশিল্প ততই বিকশিত হবে। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার দেশের উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে অন্যান্য খাতে উদ্দীপক সুবিধা দিচ্ছে। পাট খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের এই সুবিধা দেয়া হবে, যাতে তারা আরও বেশি পাটপণ্য রফতানি করতে পারে। তিনি বলেন, ‘অন্যান্য রফতানিমুখী পণ্য যে ইনসেনটিভ পাচ্ছে, পাটপণ্যের ক্ষেত্রেও অনুরূপ ইনসেনটিভ দেয়া হবে।’ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম। মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মিজানুর রহমান স্বাগত বক্তব্য রাখেন। মন্ত্রিপরিষদের সদস্যগণ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যগণ, বিদেশী কূটনীতিকবৃন্দ এবং উর্ধতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বুধবার দেশ্যব্যাপী পাট দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের পাট দিবসের সেøাগান হচ্ছে ‘সোনালী আঁশের সোনালী দেশ, জাতির পিতার বাংলাদেশ।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাট পরিবেশবান্ধব, বহুমুখী ব্যবহারযোগ্য আঁশ। শিল্প বিপ্লবের সময় থেকেই অন্যান্য কৃত্রিম আঁশের স্থান দখল করে পাটের যাত্রা শুরু। পাটের আঁশের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অন্য অনেক আঁশের সঙ্গে মিশ্রণ করে একে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া, এ আঁশ পচনশীল বিধায় পরিবেশের ক্ষতি করে না। তিনি বলেন, পাট এক সময় আমাদের অর্থনীতির বুনিয়াদ ছিল। আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে ছিল পাটের সম্পৃক্ততা। ছয়দফা আন্দোলনের ঘোষণায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের অর্থনৈতিক বৈষম্যের কথা বলতে গিয়ে পাটের অবদানের বিষয়টি তুলে ধরেন। সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইস্তেহারেও পাট অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল। শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রায় ৯০ ভাগ আসত পাট খাত থেকে। কিন্তু কিছুটা কৃত্রিম আঁশের আগ্রাসনের ফলে আবার কিছুটা ৭৫-পরবর্তী সরকারগুলোর অব্যবস্থাপনার কারণে আমাদের দেশের পাট খাতে মন্দা নেমে এসেছিল। মাঝে কিছুটা সময় পাটের মন্দ সময় গেলেও এখন নতুন করে পাট শিল্পের সুদিন ফিরে আসছে। সারাবিশ্বের মানুষ ক্ষতির দিক বিবেচনায় নিয়ে কৃত্রিম আঁশের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে আবার পাটের মতো প্রাকৃতিক আঁশের দিকে ঝুঁকছেন। পাশাপাশি পাটের বহুমুখী ব্যবহার বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাট উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পাটের বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধির বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে। এ খাতে গবেষণা বাড়াতে হবে। পাটের রফতানি বাড়াতে নতুন-নতুন বাজার ধরতে হবে। তিনি বলেন, দেশে পাট উৎপাদন ও পাটের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধি এবং পরিবেশ রক্ষায় আমরা ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’ ও ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার বিধিমালা, ২০১৩’ প্রণয়ন করেছি। সরকার ইতোমধ্যে ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি, ও মসলা জাতীয় পণ্যসহ ১৯টি পণ্য মোড়কীকরণে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। এই আইন বাস্তবায়নের ফলে দেশের অভ্যন্তরে প্রতিবছর প্রায় ১৫০ কোটি পাটের বস্তার চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, পরিবেশবান্ধব পাটপণ্যকে বহুমুখী করার বিষয়টিকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছি। জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি)-এর মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রায় ৬৫০ জন বেসরকারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে। ওই সকল উদ্যোক্তা প্রায় ২৮০ ধরনের পাটের পণ্য তৈরি, বাজারজাত এবং রফতানি করছে। তিনি বলেন, পাটের সুতা, বস্তা, চট, কার্পেট ইত্যাদি প্রচলিত পণ্যের পাশপাশি পাট দিয়ে পর্দার কাপড়, কুশন কভার, কার্পেট, শাড়ি ইত্যাদি তৈরি হয়। গরম কাপড় তৈরির জন্য উলের সঙ্গে মিশ্রণ করা যায়। পাট খড়ি থেকে উন্নতমানের কার্বন তৈরি হচ্ছে। পাটের আঁশ থেকে প্রসাধনী, ওষুধ, রং ইত্যাদি তৈরি সম্ভব। বাঁশ এবং কাঠের বিকল্প হিসেবে পার্টিকেল বোর্ড, কাগজের ম- ও কাগজ তৈরিতেও পাট খড়ি ব্যবহৃত হয়। সম্প্রতি পাট থেকে জুট পলিমার তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। যা দিয়ে পলিথিন ব্যাগের বিকল্প ‘সোনালি ব্যাগ’ তৈরি করা হচ্ছে। সোনালি ব্যাগের ব্যবহার দ্রুত প্রসারের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ‘রফতানি নীতি ২০১৮-২০২১’ ঘোষণা করেছি। এর আলোকে পাটজাত পণ্যের মান উন্নয়ন ও বাজার সম্প্রসারণের জন্য পণ্যভিত্তিক শিল্প এলাকা গড়ে তোলার জন্য দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, সোনালি আঁশ পাটকে বিশ্বব্যাপী ব্রান্ডিং করতে হবে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন জোরদার হওয়ায় পরিবেশবান্ধব পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে। পাট চাষ সম্প্রসারণ এবং অধিকহারে পাটপণ্য ব্যবহার করে আমরা পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী পাট খাতের বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১৪টি পুরস্কার তুলে দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী বিআইসিসি চত্বরে মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
×