ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

এসএসসির প্রশ্নপত্রে ভুল- সমাধানে নানা উদ্যোগ

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

এসএসসির প্রশ্নপত্রে ভুল- সমাধানে নানা উদ্যোগ

বিভাষ বাড়ৈ ॥ এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রথম দিনে ভুল প্রশ্নপত্র বিতরণের ফলে সৃষ্ট সঙ্কটের কার্যকর সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ড। বাংলা প্রথম পত্রে ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছে যেসব পরীক্ষার্থী যাতে কোনভাবেই কম নম্বর না পায় সেদিকে খেয়াল রেখে খাতা মূল্যায়ন করা হবে। এছাড়া ভুল প্রশ্নপত্র বিতরণ এড়াতে এখন থেকে নিয়মিত-অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের আলাদা কক্ষে পরীক্ষা নেয়া হবে। এদিকে ভুলের জন্য সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০ শিক্ষা বোর্ডের অন্তত ২০ কেন্দ্র সচিব ও ৩৮ কক্ষ পরিদর্শককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়া শিক্ষকদের তালিকাও তৈরি হচ্ছে। ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দেয়া এসএসসি পরীক্ষার্থীদের খাতা আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হবে বলে রবিবারই জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। একই সঙ্গে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। সংসদে প্রশ্নোত্তরে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রশ্নটি অত্যন্ত যৌক্তিক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন জানিয়েছেন, বাংলা প্রথম পত্রে ভুল প্রশ্নপত্রের শিকার পরীক্ষার্থীরা কোনভাবেই কম নম্বর পাবে না, বরং তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া হবে। কেন্দ্রসচিব ও কক্ষ পরিদর্শকদের ভুলে যেসব কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের নতুনের বদলে পুরনো সিলেবাসের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া হবে। নতুন ও পুরানের তালগোলে পড়া সব পরীক্ষার্থীর তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের খাতা আলাদা করা হয়েছে। তিনি বলেন, পুড়ে যাওয়া, হারিয়ে যাওয়া বা অন্য কোন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীদের নম্বর দেয়ার সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলোর। আন্তঃবোর্ডের নীতিমালা অনুযায়ী ওই নম্বর দেয়া হয়, যাতে পরীক্ষার্থীরা ‘বেনিফিট অব ডাউট’ হিসেবে ৫ শতাংশ নম্বর বেশিই পায়। উদাহরণ হিসেবে সচিব বলেন, ধরা যাক, একজন ছাত্র বাংলা প্রথম পত্রে ৭০ পেয়েছে। কিন্তু কোন কারণে তার বাংলা দ্বিতীয় পত্র খাতাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা হারিয়ে গেছে কর্তৃপক্ষের ভুলে। সেক্ষেত্রে ওই ছাত্রটি বাংলা প্রথম পত্রে কত নম্বর পেয়েছে তা দেখা হয়। এরপর তাকে বেনিফিট অব ডাউট হিসেবে প্রথম পত্রের চেয়ে দ্বিতীয় পত্রে ৫ শতাংশ নম্বর বেশি দেয়া হয়। এছাড়া একক বিষয় হলে অতীতের পরীক্ষার রেকর্ড দেখা হয়। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার অনুরোধ জানান সিনিয়র সচিব। আন্তঃ শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক জনকণ্ঠকে বলেন, সারাদেশে ইতোমধ্যেই গাফিলতির জন্য অনেক কেন্দ্র সচিব ও কক্ষ পরিদর্শককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি দেখার জন্য আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে বলেছি। তারা বিষয়টি দেখছে। যার গাফিলতি থাকবে তার বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে স্থানীয় প্রশাসন। আর কি কি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেÑ এ প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, আমরা দেখছি কিভাবে এটা হলো? কার, কোথায় ব্যর্থতাÑ সার্বিক বিষয়ে তথ্য নিচ্ছি আমরা। তবে চাইলেই তো আর আমরা আইনী ব্যবস্থা নিতে পারি না। তথ্য প্রমাণ পেলে আইনের বিধিবিধান মেনে আমরা ব্যবস্থা নেব। তবে শিক্ষার্থীদের চিন্তার কোন কারণ নেই। ভুল প্রশ্নপত্র বিতরণের ফলে যে সমস্যাটা হয়েছে তার কার্যকর সমাধান নিচ্ছি আমরা। জানা গেছে, ভুলের শিকার শিক্ষার্থীদের প্রতিবেদন কেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করেছে বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড। শনিবার ঢাকা, চট্টগ্রাম, জামালপুর, নওগাঁ, শেরপুর, সাতক্ষীরা, মুন্সীগঞ্জ, গাইবান্ধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বাগেরহাট ও মাদারীপুরসহ কয়েকটি জেলায় বেশ কিছু কেন্দ্রে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের পুরনো সিলেবাসের প্রশ্নপত্র দেয়া হয়। এসব প্রশ্নপত্র ছিল পুরনো পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতে অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য। ভুল ধরা পড়ার পর কোথাও পরীক্ষার্থীদের সময় বাড়িয়ে দিয়ে নতুন প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে আবার কোথাও হয়নি। এতে কম নম্বর পাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেক পরীক্ষার্থী। একাধিক স্থানে ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তাও অবরোধ করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এদিকে নতুন করে ভুল প্রশ্নপত্র বিতরণ এড়াতে নিয়মিত-অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের আলাদা কক্ষে পরীক্ষা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। নতুন ও পুরাতন সিলেবাসের নিয়মিত ও অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্নপত্র বিতরণ ও পরীক্ষা গ্রহণে সঙ্কট তৈরির প্রেক্ষাপটে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আপত পদক্ষেপের বাইরেও প্রথম দিনে সারাদেশে ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়া শিক্ষকদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার অংশ হিসেবে তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। আন্তঃ শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করে প্রতিবেদন পাঠাতে কেন্দ্র সচিবদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ঘটনা না ঘটে সেজন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বোর্ড চেয়ারম্যানরা বলেছেন, যারা নিয়মিত পরীক্ষার্থী কিন্তু অনিয়মিতদের প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছেন তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। কাজেই তাদের খাতা একদম ভিন্নভাবেই দেখা হবে। যেন তারা কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। যাদের ভুলের কারণে ঘটনাটি ঘটেছে ইতোমধ্যেই তাদেরকে তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে এবং তদন্ত কমিটি করে দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান শিক্ষার্থী অভিভাবকদের অভয় দিয়ে বলেছেন, চিন্তার কোন কারণ নেই। কোন শিক্ষার্থী যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেভাবেই সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আন্তঃ শিক্ষা বোর্ডের যে টেবুলেশন নীতিমালা আছে তা অনুসরণ করে এর চেয়েও বড় বড় সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। সেটা অনুসরণ করলে চিন্তার কোন কারণ নেই। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানান, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এ পর্যন্ত প্রথম দিনের ঘটনায় ৮ জন কেন্দ্র সচিবকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তদন্ত হচ্ছে। প্রতিবেদন পেলে দায়ী কক্ষ পরিদর্শকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×