ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

কর্ণফুলীর দু’পাড়ে ২১শ’ ৮১ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ সোমবার শুরু

প্রকাশিত: ১১:১০, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

কর্ণফুলীর দু’পাড়ে ২১শ’ ৮১ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ সোমবার শুরু

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ উচ্চ আদালতের রায় ঘোষণার পর অবশেষে দীর্ঘ ২৯ মাস পর অবশেষে আগামী সোমবার ৪ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী ২১৮১ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এসব অবৈধ স্থাপনা অপসারণের নির্দেশ প্রদান করেন। এ নিয়ে জনস্বার্থে কর্ণফুলী নদী সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ-এর পক্ষে এ্যাডভোকেট মঞ্জুর মোরশেদ একটি রিট আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত এ সংক্রান্তে রায় ঘোষণা করে। রায় ঘোষণার পর দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় কর্ণফুলীর উভয় তীরে ছোটখাটো আরও অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠে। এর পাশাপাশি ড্রেজিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় উজান থেকে নেমে আসা পলিতে নদীর গভীরতা ক্রমাগতভাবে হ্রাস পেয়ে এর নাব্য হারিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থাপনা থেকে বর্জ্য অপসারণ অব্যাহত থাকায় নদী দূষণও বেড়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে বার বার বলা হয়েছে, উচ্ছেদ প্রক্রিয়ায় অর্থ বরাদ্দ না মেলার কারণে আদেশ কার্যকর করা যাচ্ছিল না। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে যথাযথ বরাদ্দ দেয়ার আশ্বাস দেয়ার পর এ নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়। এদিকে, গত বুধবার নদী রক্ষা নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের দ্বৈত বেঞ্চ নদী রক্ষায় একটি তাৎপর্যবহ রায় ঘোষণা করেছে। যাতে বাংলাদেশের সকল নদীর তীর অবৈধ দখলমুক্ত, দূষণ ও অন্য অবৈধ কার্যক্রম থেকে রক্ষায় আরেকটি রায় দেয়া শুরু হয়েছে। যাতে নদীকে মানুষের জীবন জীবিকার অন্যতম একটি অনুষঙ্গ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী চট্টগ্রাম বন্দরসহ ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের জীবন জীবিকার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ নদীর উভয় পাড় দীর্ঘদিন ধরে যেমন দখল হয়েছে, তেমনি পানি দূষিত হয়ে আসছে। এছাড়া নাব্যও দিন দিন হ্রাস পেয়েছে। নদীর মধ্যবর্তী এলাকায় ইতোমধ্যে অসংখ্য চর পড়েছে। ২০১৬ সালে হাইকোর্টের আদেশের পর জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের কমিটি উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করতে গিয়ে বার বার হোঁচট খেয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাও কম হয়নি। অবশেষে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম বন্দর, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ অন্য সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে সমন্বয় বৈঠক শেষে আগামী সোমবার থেকে কর্ণফুলী নদীর দু’পাড়ে অবৈভাবে গড়ে ওঠা ২১৮১ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আগে শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত তিন দিন জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে মাইকিং চালানো হবে। আর.এস জরিপ অনুযায়ী নদীর অবস্থান যেখানে ছিল সেই অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০১৬ সালের হাইকোর্ট প্রদত্ত ওই রায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আদেশপ্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে গড়ে উঠা এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনাসমূহকে স্থানীয় দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নব্বই দিনের মধ্যে সরিয়ে নিতে বলা হয়। এ সময়ের মধ্যে তা প্রতিপালন না হলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক), চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং বিআইডব্লিউটিএকে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের যাবতীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। তবে রায়ে নদীর তীর দখল করে প্রতিষ্ঠিত নৌবাহিনী ও বন্দর কর্তৃপক্ষের জেটিসহ ৬ স্থাপনা সরকারী সংস্থার মালিকানা হওয়ায় সেগুলো অপসারণের আওতামুক্ত থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে এসব সরকারী সংস্থাকে ওইসব স্থাপনার জন্য পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি নেয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে, এ রায় প্রদানের আগে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই এ সংক্রান্তে করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দাখিল করে ২০১৫ সালের ৯ জুন। প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্ণফুলী নদীর দু’পাশে ১৫৮ দশমিক ৪৫ একর জায়গা বেদখলে রয়েছে। এ ভূমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে কাঁচাঘর, দোকানপাট, ভবন, বালুর স্তূপ, দাতব্য চিকিৎসালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মুরগির খামার, মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে সাইনবোর্ড লাগিয়ে নদী দখলের প্রক্রিয়াও দৃশ্যমান। নদীর তীরে কর্ণফুলী দখল করে প্রায় বাইশ একর জমিতে একটি পোশাক কারখানাও রয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। মেরিনার্স সড়ক ঘেঁষে গড়ে উঠছে একের পর এক ছোট বড় স্থাপনা। স্থাপনাগুলোর শতকরা নব্বই ভাগই নদী দখল করে গড়ে উঠা। এতে করে হুমকির মুখে চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেল। কর্ণফুলী সেতু হতে ফিরিঙ্গীবাজার, সদরঘাট ও বাংলাবাজার হয়ে পতেঙ্গা সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে চলেছে দখলের মহোৎসব। কোনভাবেই দখলদারিত্ব ঠেকিয়ে রাখা যায়নি। এ ভূমি অত্যন্ত মূল্যবান, যা বন্দর কর্তৃপক্ষের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে। আদালতের রায় বাস্তবায়নে বিচারিক বেঞ্চের কঠোর নির্দেশনা প্রদান করা হয়। সে অনুযায়ী প্রথম সাত দিনের মধ্যে স্থানীয় পত্রিকায় নব্বই দিনের সময় দিয়ে স্থাপনাগুলো সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হলেও নানা কারণে তা প্রতিপালিত হয়নি। ফলে পরবর্তী নব্বই দিনে এগুলো উচ্ছেদও হয়নি। এখন আড়াই বছরের মাথায় আদালতের রায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন সংস্থা নিয়ে গঠিত কমিটি।
×