ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় ইয়াবা কারবারির সংখ্যা বাড়ছে

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ৩০ জানুয়ারি ২০১৯

আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় ইয়াবা কারবারির সংখ্যা বাড়ছে

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ , স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ মাদক চোরাচালানী, এ ব্যবসায় পুঁজি বিনিয়োগকারী এবং এর সঙ্গে জড়িত গডফাদারদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের দেশব্যাপী যুদ্ধ ঘোষণার পর টেকনাফে এ পর্যন্ত ৩৭ জন প্রাণ হারিয়েছে। এদের সকলেই পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার দাবি রয়েছে। এছাড়া উখিয়া-টেকনাফে যারা ইতোপূর্বে ইয়াবাসহ মাদকের সঙ্গে জড়িত থেকে বর্তমানে সরকারের কঠোর মনোভাব প্রত্যক্ষ করে আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়ায় রয়েছে এমন ১৬ ইয়াবা কারবারি সোমবার পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে। এদিকে, আত্মসমর্পণে ইচ্ছুক এমন ৮০ ইয়াবা কারবারি বর্তমানে পুলিশী তত্ত্বাবধানে রয়েছে। মধ্য ফেব্রুয়ারির মধ্যে কক্সবাজার ও এর অধীন উখিয়া টেকনাফের কিছু শীর্ষস্থানীয়সহ ইয়াবা কারবারির আত্মসমর্পণের কথা রয়েছে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। তবে দিন যত গড়াচ্ছে আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়ায় ইয়াবা কারবারির সংখ্যা বাড়ছে। অপরদিকে, মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর গা ঢাকা দেয়া কিছুসংখ্যক ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণের লক্ষে পুলিশ হেফাজতে চলে গেলেও আবার আত্মগোপনে থাকা অনেককে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে উখিয়া টেকনাফ এলাকায় ব্যাপক কানাঘুষা চলছে। অভিযোগ উঠেছে, এরা কারও না কারও ইঙ্গিতে প্রকাশ্যে আসার সাহস পেয়েছে। আবার এও আলোচিত হচ্ছে এরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আত্মসমর্পণের লক্ষেই প্রকাশ্যে চলে এসেছে। উল্লেখ্য, গত বছরের ৪ মে থেকে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হলে টেকনাফ, উখিয়া ও কক্সবাজার সদরের বহু ইয়াবা ডন আত্মগোপনে চলে যায়। ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের খবর প্রচার হলে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ওই ইয়াবা ডনদের কেউ কেউ এলাকায় ফিরে আসে। পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, আগে টেকনাফ উপজেলার তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের জন্য হেফাজতে নিয়ে আসা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় তালিকাভুক্ত সকলকে আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসার চেষ্টা চালানো হবে। গত ১০ জানুয়ারি টেকনাফে এক সভায় ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণে এগিয়ে আসতে অনুরোধ জানান এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি। ৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে ওই সময় তিনি বলেন, ‘হয়ত আত্মসমর্পণ করতে হবে, নতুবা টেকনাফ ছাড়তে হবে। কেননা ইয়াবা কারবারিদের কারণে টেকনাফের ব্যাপক দুর্নাম রয়েছে। সেই দুর্নাম ঘুচাতেই হবে।’ সাবেক এই সংসদ সদস্যের এ ধরনের হুঁশিয়ারিতে তার তিন সহোদরসহ ৭৩ ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করতে পুলিশের হেফাজতে চলে এসেছে। অভিযোগ উঠেছে, উখিয়ার চিহ্নিত ইয়াবা গডফাদার মাহমুদুল হক, রহমতের বিলের কলিমূল্লাহ লাদেন, কক্সবাজারের শাহজাহান আনছারিসহ অনেকে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর গত কিছুদিন ধরে এলাকায় দেখা যাচ্ছে। তালিকাভুক্ত ইয়াবা ডন মাহমুদুল হক কুতুপালং ক্যাম্পভিত্তিক ইয়াবা বাণিজ্য তদারকি করে। জানা গেছে, উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের দুছড়ি গ্রামের হতদরিদ্র মাহমুদুল হকের উত্থানটা এক কথায় বিস্ময়কর। ২০১৩ সালের দিকে দরিদ্র পিতার অভাবের সংসারের দায়িত্ব এসে যায় তার ওপর। অল্প বেতনে চাকরি পায় বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে। বছর খানেক চাকরি করার পর ২০১৪ সালের দিকে আরেকটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয় মাহমুদুল হক। তখন থেকে সে জড়িয়ে পড়ে ইয়াবা কারবারে। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সিন্ডিকেট ভিত্তিক ইয়াবা ব্যবসা করে অল্প সময়ের ব্যবধানে হয়ে যায় বিপুল অর্থ বিত্তের মালিক। সাম্প্রতিক সময়ে ইয়াবাবিরোধী অভিযানের সময় মাহমুদুল হক আত্ত্বগোপনে চলে যায়। কিন্তু এবারও সে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে চলে আসার অভিযোগ উঠেছে। এদিকে, উখিয়া থানার ওসি মোঃ আবুল খায়ের জানিয়েছেন, ‘পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা দেশের শক্র সমাজের শত্রু। তাদের কোন ছাড় নেই।’ অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়ায় প্রায় ৭৩ মাদককারবারি বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। ওই ইয়াবা কারবারিরা আত্মসমর্পণ করলেও ইয়াবা কারবারে জড়িত মূল গডফাদারদের কি হবে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে স্থানীয়দের মনে।
×