ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আফসান চৌধুরীসহ চার লেখক পেলেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার

প্রকাশিত: ১১:০১, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

আফসান চৌধুরীসহ চার লেখক পেলেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঘোষণা করা হলো ২০১৮ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। সোমবার বিকেলে বাংলা একাডেমির শহীদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবল্লাহ সিরাজী সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পুরস্কার বিজয়ী চার লেখকের নাম ঘোষণা করেন। এ বছর চার বিভাগে চার জন বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন। কবিতায় ২০১৮ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন কবি কাজী রোজী। কথাসাহিত্যে পুরস্কার পাচ্ছেন কথাশিল্পী মোহিত কামাল। প্রবন্ধ ও গবেষণায় এই পুরস্কার পাবেন সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় পুরস্কার পাচ্ছেন আফসান চৌধুরী। এই পুরস্কারের জন্য মোট দশটি শাখা থাকলেও এ বছরে বাকি ছয় শাখায় কোন লেখক মনোনীত হননি। অনুবাদ, আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণ, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ, নাটক এবং শিশুসাহিত্যে কাউকে পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করা হয়নি। হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, সোমবার সকালে বাংলা একাডেমির কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠকে পুরস্কারপ্রাপ্ত চার লেখকের নাম চূড়ান্ত করা হয়। আগামী পয়লা ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরস্কারজয়ী লেখকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন। পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেক লেখককে দুই লাখ টাকা, সনদপত্র ও স্মারক প্রদান করা হবে। পুরস্কার ঘোষণার পর হাবীবুল্লাহ সিরাজী পুরস্কারজয়ী লেখকদের ফোন করে অভিনন্দন জানান। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। সেই স্বাধীন দেশে এই পুরস্কার প্রদান অমর একুশে গ্রন্থমেলা আয়োজনের মাধ্যমে ভাষা শহীদদের প্রতি নিবেদন করা হয় শ্রদ্ধাঞ্জলি। গবেষণার পাশাপাশি গল্প কিংবা উপন্যাস রচনায় সাবলীল লেখনীর পাঠকের কাছে অতিপরিচিত এক নাম আফসান চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্রের অন্যতম সম্পাদক তিনি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে ঘুরে মুক্তিযুদ্ধের নানা অজানা ইতিহাসকে লেখনীর মাধ্যমে মেলে ধরেছেন এই লেখক ও গবেষক। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণায় এক শ্রমিকের মতোই জড়িয়ে আছে তার নিরন্তর শ্রম। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যখন মুক্তিযুদ্ধবিরোধী নানা অপপ্রচার চালিয়েছে সেই ক্রান্তিলগ্নে এই গবেষক শহরকেন্দ্রিক গবেষণাকে ছাপিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গ্রাম বাংলার মানুষের অংশগ্রহণের ইতিহাসকে তুলে ধরেছেন বস্তুনিষ্ঠভাবে। বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে একটু পথে পরিভ্রমণ করেছেন কথাশিল্পী মোহিত কামাল। পেশায় মনোচিকিৎসক হওয়ায় এই লেখকের গদ্য সাহিত্যে পড়েছে তার প্রভাব। তার রচিত গল্প-উপন্যাসে জোরালোভাবে যুক্ত হয়েছে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক ইতিবৃত্ত। প্রেম-ভালবাসার বাইরে ভিন্নভাবে উঠে এসেছে মানসিক টানাপোড়েনের বিষয়টি। সেই সুবাদে এদেশের সাহিত্যের মোহিত কামালের রচনা যুক্ত করেছে ভিন্ন মাত্রা। ছন্দের ব্যবহার, উপমার প্রযোগ, অন্ত্যমিলের সম্মিলনে ¯্রােতস্বিনী নদীর মতোই পাঠকের প্রবহমান কবি কাজী রোজীর কবিতা। কবি পরিচয়ের বাইরে এদেশের মুক্তিযুদ্ধ পক্ষের শক্তি হিসেবে বরাবর সাহসী ভূমিকা রেখেছেন এই নারী। মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের প্রতিরোধে সব সময়ই সোচ্চার থেকেছে তার সাহসী কণ্ঠটি। আর শুধু কথায় নয়, মুক্তিযুদ্ধ ইস্যুতে কাজেও রেখেছেন সাহসিকতার পরিচয়। জীবনের ভয় কিংবা হুমকিকে উপেক্ষা করে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি হওয়া যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ১৯৬০ সালে প্রবর্তিত বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনের সবচেয়ে বড় এ পুরস্কার দশটি বিষয়ে প্রদান করা হয়ে থাকে। বাংলা একাডেমি পরিষদ নীতিমালা অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে ২৫ ফেলো এই পুরস্কারের লেখকদের মনোনীত করেন। সেই মনোনয়নের ভিত্তিতে সাত বিচারক চূড়ান্তভাবে পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের নির্বাচন করেন।
×