ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লাখখানেক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯

 লাখখানেক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রায়ণ প্রকল্পের আওতায় ২৩শ’ কোটি টাকার হাতিয়ার ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী বাসস্থান প্রকল্প। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের পথে। তবে ইতোমধ্যেই ১ লাখ রোহিঙ্গাকে সেখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে পুনর্বাসন সম্ভব বলে ইঙ্গিত মিলেছে প্রশাসন সূত্রে। গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াং হি লি’র নেতৃত্বে অপর তিন প্রতিনিধি দল এ প্রকল্প পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলে গেছেন, প্রকল্প পরিদর্শন না করলে বাস্তব পরিস্থিতি অনুধাবন করা যেত না। প্রকল্প পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক নৌবাহিনীর কমোডর আবদুল্লাহ আল মামুন নিশ্চিত করেছেন, প্রকল্পের অগ্রগতি ব্যাপক। অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অল্প সামান্য যা বাকি রয়েছে তা চলমান অবস্থায় রেখে এক লাখ রোহিঙ্গাকে সেখানে স্থানান্তর করা যেতে পারে। এদিকে, শুক্রবার ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একেএম আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শীঘ্রই লাখখানেক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পুনর্বাসন করা হবে। এছাড়া প্রকল্প পরিদর্শন শেষে জাতিসংঘ প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে বলে আভাস পাওয়া গেছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, নির্দিষ্ট ২৩শ’ কোটি টাকা বরাদ্দের এ প্রকল্পে ইতোমধ্যে প্রায় ১৮শ’ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ভাসানচরে নির্মিত হয়েছে আধুনিক সুযোগ সুবিধার বাসস্থান। আপাতত রোহিঙ্গাদের সেখানে থাকার সুযোগ দেয়া হবে। পরবর্তীতে বাস্তুভিটাহীন এদেশের মানুষের মধ্যে এসব হাউস বা বাসস্থান বরাদ্দ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। প্রায় ৩০ বছর আগে জেগে ওঠা এ চরটি গোচারণ ভূমিতে ছিল। এখন সেখানে মানুষের জীবন ধারণের আধুনিক সুযোগ সুবিধার উপকরণে বাসস্থান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ১৩ হাজার একর বিশিষ্ট এ চরের মাত্র ১৭শ’ ২ একর এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে এর অভ্যন্তরভাগে নির্মিত হয়েছে বসতবাড়ি, যা জাতিসংঘ প্রদত্ত নিয়মনীতির চেয়েও আরও বাড়তি। এমন দাবি রয়েছে প্রশাসনের। জাতিসংঘ প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে এ চর পরিদর্শন করে সেটাই প্রত্যক্ষ করলেন, যা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না বলে তাদের অনুভূতি প্রকাশের ঘটনা রয়েছে। আকাশ পথে যাওয়ার সময় অনেকের কাছেএ প্রকল্পকে ভিন্নভাবে দেখার কিছু তথ্য কয়েকটি গণমাধ্যমে, প্রকাশের ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। কেননা, পুরো দ্বীপটি যেখানে ১৩ হাজার একরের, সেখানে মাত্র ১৭০২ একর জমি এ পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছে। যেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সোলার সিস্টেম। প্রতিটি হাউসে এ সিস্টেমে বিদ্যুতায়িত করা হয়েছে। চরের একটি অংশে গবাদি পশুরও চাষ হচ্ছে। প্রতিষ্ঠিত হাউসের প্রতি কক্ষ স্ট্যান্ডার্ড সাইজের। যেখানে রয়েছে আধুনিত বাথরুম ও টয়লেট ফ্যাসিলিটিজ। এরমধ্যে নির্মিত হয়েছে প্রায় ১৫শ’ ক্লাস্টার হাউস। হাউসের প্রতিটি কক্ষের সাইজ ১৪ বাই ১২ ফুট, জাতিসংঘ ঘোষিত স্টান্ডার্ড সাইজেরও বেশি। একটি হাউসে ৫টি করে কক্ষ রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে স্যুয়ারেজ সেফটি ইত্যাদিসহ আন্যান্য সকল সুবিধা। নৌবাহিনীর পক্ষে ৩৮টি বেরসকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এ প্রকল্পে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি হাউস লাল টিনে আচ্ছাদিত হয়ে আছে। রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি সাময়িকভাবে সকল নাগরিক সুবিধা নিয়ে বসবাসের জন্য এত বিশাল কর্মযজ্ঞের পরও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মাধ্যমে এ সকল হাউসকে কারাগার বলেও আখ্যা দেয়ার ঘটনা রয়েছে। অথচ, সবই মিথ্যাচার। গত ডিসেম্বরে নির্বাচনের আগেই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার সরকারী পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তা বিভিন্ন কারণে স্থগিত রাখা হয়। এখন আবার এ বিষয়টি আলোচনায় এসেছে এবং রোহিঙ্গাদের সেখানে স্থানান্তরের আগে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে গেছেন। প্রতিনিধি দলের পক্ষে প্রতিটি হাউসে গ্রিল থাকার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রকল্প প্রধানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতিটি বাড়িঘরে গ্রিল লাগানোর বিষয়টি একটি স্বাভাবিক বিষয়। এটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার কোন সুযোগ নেই। প্রশাসন সূত্রে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে সেনা বর্বরতায় টিকতে না পারায় ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে কক্সবাজারে উখিয়া টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে। গত ১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাতের পর থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ঘটনা শুরু হয়। পরবর্তীতে এ সংখ্যা লাখে লাখে উন্নীত হয়। জাতিসংঘের মতে এ সংখ্যা ৭ লক্ষাধিক। কিন্তু এর আগে যারা এসেছে তাদের সংখ্যা ৫ লক্ষাধিক। সবমিলে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার ভারে উখিয়া টেকনাফ অঞ্চলে স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বিপর্যয় নেমে এসেছে। অপরদিকে, মিয়ানমার পক্ষ দফায় দফায় কথা দিয়েও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে এগিয়ে আসছে না। মূলত এ কারণে সরকার উখিয়া টেকনাফের বিপর্যয় এড়াতে ভাসানচরকে বেছে নিয়েছে। সেখানে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গার অস্থায়ী ভিত্তিতে বসবাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৩শ’ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা সেখানে স্থানান্তর হতে পারে বলে প্রশাসন সূত্রে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। এতে করে উখিয়া টেকনাফ অঞ্চলের মানুষ কিছুটা হলেও ভারসাম্যহীনতার পরিবেশ থেকে রক্ষা পাবে বলে প্রশাসন মনে করছে। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ প্রতিনিধিদল ভাসানচরে পৌঁছলে প্রকল্প প্রধান সার্বিক কর্মযজ্ঞ নিয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন।
×