ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রলার মালিক রিমান্ডে, উদ্ধার কাজ সমাপ্ত

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২২ জানুয়ারি ২০১৯

ট্রলার মালিক রিমান্ডে, উদ্ধার কাজ সমাপ্ত

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীতে সম্প্রতি ট্রলারডুবির ঘটনায় ট্রলারের মালিক জাকির দেওয়ানের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় উদ্ধার অভিযান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা জানান, টানা ছয় দিন উদ্ধার অভিযানেও ট্রলারটির সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাই সার্বিক বিবেচনায় উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আবার কোন ক্লু পাওয়া গেলে শুরু করা হবে। বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর মোঃ মোজাম্মেল হক জানান, মেঘনায় ট্রলারডুবির উদ্ধার অভিযান সোমবার সন্ধ্যায় সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার সারাদিন মেঘনায় তল্লাশি চালিয়েও ট্রলারটি শনাক্ত করা যায়নি। টানা ছয় দিন চেষ্টার পর বন্ধ ঘোষণা করতে হয়েছে। উদ্ধার ব্যর্থ হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, বেঁচে যাওয়া শ্রমিকরাও সঠিকভাবে স্থানটি দেখাতে পারছে না। তাছাড়া মেঘনায় বালু উত্তোলনের কারণে নদীর তলদেশে বিশাল বিশাল গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। আর নৌকা ডুবে যাওয়ার পর তলদেশে চিহ্নিত করা কঠিন। ট্রলারডুবির ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আরশেদ আলী জানান, ট্রলার মালিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পুলিশ সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। শুনানি শেষে আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। দুই শ্রমিকের লাশের পরিচয় মিলেছে ॥ মেঘনায় নদীতে ভেসে ওঠা দুই শ্রমিকের লাশের পরিচয় পাওয়া গেছে। একজন রহমত আলী (৩৯) ও অপরজন রফিকুল ইসলাম (৩৭)। এখনও নিখোঁজ ১৮ জন। রহমত আলী সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার গজাইল গ্রামের মৃত মইজউদ্দিনের ছেলে। রবিবার রাতে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে ভাই সোহেল রানা নিখোঁজ ওই শ্রমিকের মরদেহ শনাক্ত করেন। রবিবার সকালে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া লঞ্চঘাটের কাছে মেঘনায় লাশটি ভেসে ওঠে। ষাটনলে উদ্ধার হওয়া অপর লাশটি রফিকুল ইসলামের। রবিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে চাঁদপুর মর্গে চাচাত ভাই সাইদুর রহমান লাশ শনাক্ত করেছেন। রফিকুল পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের মু-ুমালা গ্রামের লয়ান ফকিরের ছেলে। এদিকে রহমত আলীর লাশের শরীরে জখম ও মুখবাঁধা থাকা প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার আশফাকুজ্জামান বলেন, ধারণা করা হচ্ছে জাহাজের পাখার সঙ্গে আঘাতে এমনটি হয়েছে। মাফলার ছিল, মুখ বাঁধা থাকার ঘটনা সঠিক নয়। তিনি জানান, ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার বিকেল ৩টার দিকে রফিকুলের লাশ স্বজনরা নিয়ে যায়। আর মুন্সীগঞ্জ মর্গ থেকে রবিবার রাতেই স্বজনরা রহমত আলীর লাশ নিয়ে যায়। সোমবার সকালে নিজ গ্রামে দাফন হয়। এখনও নিখোঁজ ১৮ জন ॥ নিখোঁজ ১৮ জনের মধ্যে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের মু-ুমালা গ্রামের গোলাই প্রামাণিকের ছেলে সোলেমান হোসেন, জব্বার ফকিরের ছেলে আলিফ হোসেন ও মোস্তফা ফকির, গোলবার হোসেনের ছেলে নাজমুল হোসেন-১, আল মজিদের ছেলে জাহিদ হোসেন, নূর ইসলামের ছেলে মানিক হোসেন, ছায়দার আলীর ছেলে তুহিন হোসেন, আলতাব হোসেনের ছেলে নাজমুল হোসেন-২, দাসমরিচ গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে ওমর আলী ও মান্নাফ আলী, তোজিম মোল্লার ছেলে মোশারফ হোসেন, আয়ান প্রামাণিকের ছেলে ইসমাইল হোসেন, সমাজ আলীর ছেলে রুহুল আমিন, মাদারবাড়িয়া গ্রামের আজগর আলীর ছেলে আজাদ হোসেন, চ-িপুর গ্রামের আমির খান ও আব্দুল লতিফের ছেলে হাচেন আলী, রজব আলীর ছেলে শফিকুল এবং জনৈক সিরাজ মিস্ত্রি। প্রত্যয় ফিরে যাচ্ছে ॥ দুর্ঘটনার সাত দিন এবং উদ্ধার অভিযানের ছয় দিন পর সোমবার মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীতে মাটি বোঝাই ট্রলারডুবির উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা হয়েছে। সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছেন। বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর মোঃ মোজাম্মেল হক এই তথ্য দিয়ে জানান, মেঘনায় ট্রলারডুবির উদ্ধার অভিযান সোমবার সন্ধ্যায় সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার সারাদিন মেঘনায় তল্লাশি চালিয়েও ট্রলারটি শনাক্ত করা যায়নি। টানা ছয় দিন চেষ্টার পর বন্ধ ঘোষণা করতে হয়েছে। তাই মঙ্গলবার সকালে উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’ নারায়ণগঞ্জে ফিরে আসবে। উদ্ধার কাজে অংশ নেয়ারাও ফিরে যাচ্ছেন। কেন ট্রলারটি শনাক্ত করা গেল না? এ প্রশ্নের জবাবে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান বলেন, ডুবে যাওয়া ট্রলারটি ছিল মাটিভর্তি, তাই ডুবে যাওয়ার পর মাটির তলদেশের সঙ্গে ট্রলারও মাটিতে ঢাকা পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে হয়ত। উল্লেখ্য, গত সোমবার রাত পৌনে ৪টার দিকে মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীতে তেলের ট্যাঙ্কারের ধাক্কায় ট্রলারটি ডুবে যায়। এ সময় এতে ৩৪ শ্রমিক ছিল। ১৪ জন সাঁতার কেটে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও নিখোঁজ হয় ২০ শ্রমিক। এ পর্যন্ত দুই জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে।
×