ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

খেজুর গুড়ে চাঙ্গা গ্রামীণ অর্থনীতি

রফতানি হচ্ছে রাজশাহীর গুড়

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

রফতানি হচ্ছে রাজশাহীর গুড়

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ শীত মৌসুমের শুরু থেকেই এবারও খেজুর রস থেকে গুড় তৈরির ধুম পড়েছে রাজশাহীর তিনটি উপজেলায়। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষের। আর গুড়ের কারবারে জীবিকা চলছে তিন উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের। জেলার পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় উৎপাদিত খেজুর গুড় দেশের সীমানা ছাড়িয়ে যাচ্ছে বিদেশেও। এতে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে এই তিন উপজেলার গ্রামীণ অর্থনীতি। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, রাজশাহী তিন উপজেলায় খেজুর গাছের সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ। এই গাছ থেকে প্রতি শীত মৌসুমে প্রায় ৬০ কোটি টাকার ৮ হাজার টন গুড় উৎপাদন হয়। এর মধ্যে জেলায় সবচেয়ে বেশি গাছ আছে চারঘাট উপজেলায়। এখানে গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৯৬ হাজার। বাঘা উপজেলায় খেজুর গাছ রয়েছে দুই লাখ ৯৯ হাজার। আর পুঠিয়া উপজেলায় খেজুর গাছের সংখ্যা ৮৫ হাজার। শীত এলেই এসব গাছ হয়ে ওঠে কর্মসংস্থানের উৎস। গুড় তৈরিতে এ অঞ্চলের পুরুষদের সঙ্গে কাজ করেন নারীরাও। গুড় তৈরির পর পুঠিয়ার বানেশ্বর, ঝলমলিয়া আর বাঘা সদরে নিয়ে পাইকারিতে বিক্রি করেন তারা। এই গুড় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, বরিশাল, নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। ঢাকা থেকে গুড় বিদেশেও পাঠানো হয়। আসে বৈদেশিক মুদ্রা। ব্যবসায়ীরা জানান, রাজশাহী অঞ্চলে এখন সবচেয়ে বেশি খেজুরের গুড় উৎপাদন হয়। এরপরই যশোর, মাদারীপুর ও ফরিদপুর এলাকায় গুড় উৎপাদন হয়। তবে রাজশাহীর গুড়ের স্বাদ অত্যন্ত সুমিষ্ট। গন্ধও ভাল। গুড় উৎপাদনে কেমিক্যালের ব্যবহারও কম। তাই চাহিদাও বেশি। এ জন্য তারা রাজশাহী থেকেই বেশি গুড় কেনার চেষ্টা করেন। আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী হাটে গুড় কিনতে আসেন বরিশাল থেকে। তিনি বলেন, প্রতিকেজি ৬০ টাকা দরে তিনি ৪০ মণ গুড় কিনেছেন। বরিশালে এই গুড় ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়। গুড় বিক্রেতা মহসিন আলী বলেন, সপ্তাহখানেক আগেও তিনি ৬৫ টাকা দরে গুড় বিক্রি করেছেন। এখন উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় দাম একটু কমেছে। বাঘা, চারঘাট আর পুঠিয়ার গাছিরা ভোরের কুয়াশা ঠেলে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। আর নারীরা বাড়িতে রস জ্বাল দিয়ে তৈরি করেন লোভনীয় মিষ্টি গুড়। পুরুষরা আবার দুপুর থেকে শুরু করেন গাছের নির্দিষ্ট অংশ চেঁচে রস বের করার কাজ। সন্ধ্যায় গাছে হাঁড়ি পাতেন তারাই। বাড়িতে গুড়ের চাকি তৈরি হলে তা বাজারে নেন গাছিরাই। হাটের দিন গুড় বিক্রি করে মাছ-মাংস কিনে হাসিমুখে বাড়ি ফেরেন। সব গাছির বাড়িতেই হাটবার ভাল রান্না হয়।
×