ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্য জানুয়ারিতে শীতের দাপট গিয়ে পড়বে ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে

উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহের থাবা, জানুয়ারি জুড়েই থাকবে ধকল

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ৬ জানুয়ারি ২০১৯

উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহের থাবা, জানুয়ারি জুড়েই থাকবে ধকল

সমুদ্র হক ॥ উত্তরবঙ্গের শীতকাবু মানুষকে নানা ধরনের ধকল পোহাতে হচ্ছে। সইতে হচ্ছে শৈত্যপ্রবাহের থাবা। জানুয়ারি মাস জুড়েই থাকবে এই অবস্থা। এই আভাস আবহাওয়া বিভাগের। মধ্য জানুয়ারিতে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়া শীতের বায়ুর দাপট গিয়ে পড়বে রাজধানী ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে। এই সময়টায় থাইল্যান্ডের উপকূলে পাবুক ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এলাকার দেশগুলোতে আকাশে মেঘ কমেছে। সূর্যের আলো বেশি পড়ছে বলে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ছে। আবার রাতের তাপমাত্রা কমে শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে এই অবস্থা দুই-তিন দিন থাকার পর ফের তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়ে ঠকঠক করে কাঁপতে হবে। শীত যুদ্ধ মোকাবেলায় নামতে হবে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বাড়তি অংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে সংলগ্ন বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপের অবস্থান দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে। উত্তরাঞ্চলে জেট বায়ু সক্রিয়। এর প্রভাবে জানুয়ারি মাস জুড়েই শীত থাকবে। যা ফেব্রুয়ারি মাসের দিন কয়েক পর্যন্ত গড়াবে। পৌষের শেষভাগে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা অঞ্চল ভেদে ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ১৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৪ থেকে ২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এ বছর এখন পর্যন্ত দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড কর হয় ২ জানুয়ারি বুধবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৪ দশমিক ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে ব্যবধান বেশি থাকায় অস্বাভাবিক শীত এখনও অনুভূত হচ্ছে না। যা হচ্ছে তা শীত মৌসুমের। জানুয়ারি মাসে দেশে আরও দু-তিনটি শৈত্যপ্রবাহের থাবা পড়লে এবং সর্বোচ্চ ও সবনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে ব্যবধান কমলে অস্বাভাবিক শীত অনুভূত হতে পারে। জনজীবন আরও বিপর্যস্ত হয়ে উঠতে পারে। আবহাওয়া বিভাগের হিসাবে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নামলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নামলে তা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। এই সময়ে উত্তরাঞ্চলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বইছে। গত বছর ৮ জানুয়ারি পঞ্চগড়ে সর্বনিম্ন তাপমত্রা রেকর্ড করা হয় ২ দশমকি ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা ছিল এ দেশে গত ৭০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এই তথ্য আবহাওয়া বিভাগের। এবারের শীত মৌসুমে তাপমাত্রা কত থাকতে পারে সেই আভাস মেলা কঠিন। কারণ বিশ^ দিনে দিনে উষ্ণায়নের দিকে ধাবিত। তারপরও বিশ^জুড়ে জানুয়ারি শীতলতম মাস। আর হিমালয় পাদদেশীয় অঞ্চলের মানুষকে শীত মৌসুমে শীতের থাবা সইতে হবে। পৌষ শেষের এই শীত আরও বেড়ে টেনে নিয়ে যাবে মাঘ পর্যন্ত। এই সময়ে নদী তীরবর্তী এলাকায় ঘনকুয়াশার আস্তরণ দৃষ্টিসীমা কমিয়ে দিয়েছে। ঘন কুয়াশাপাতের কারণে সড়ক ও নৌপথে যানবাহন চলতে হচ্ছে ধীরগতিতে। গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগছে বেশি। আকাশপথে বিমানের উড্ডয়ন ও অবতরণে সিডিউল ঠিক থাকছে না। গ্রাম ও শহরে জনজীবন অনেকটাই বিপর্যন্ত। সকাল ন’টার আগে ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। সকালে ঘর থেকে বের হলেই মনে হয় বিকেল। শীতের থাবায় লোকজন সন্ধ্যার পরই ঘরে ফিরছে। নগর জীবনে ঘরের বাইরের আড্ডা অনেক কমেছে। চাকরিজীবী পরিবারের সন্তানরা বাবা-মাকে বেশি সময় কাছে পাচ্ছে। শীত পারিবারিক বন্ধনকে (ফ্যামিলি বন্ডিং) বাড়িয়ে দিয়েছে। গ্রামে গৃহস্থ ও কিষান বাড়ির উঠানে সকাল-সন্ধ্যায় খড় ও লতাপাতা জ্বালিয়ে আগুনের তাপ পোহানোর সনাতন ধারা আজও রয়েছে। তাপ পোহাতে গিয়ে কাপড়ে আগুন ধরে রংপুর অঞ্চলে দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। শীতের অসুখ-বিসুখ প্রায় প্রতিটি ঘরেই লেগেছে। বিশেষ করে সর্দি জ্বর। চিকিৎসকগণ বলছেন, ভাইরাস ফিভার। থার্মোমিটারে জ্বর ১০১ ডিগ্রী ফারেনহাইটের ওপরে উঠলেই প্যারাসিটামল ওষুধ সেবন করতে বলা হচ্ছে। এক সপ্তাহেও না সারলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলা হচ্ছে। এই সর্দির সঙ্গে কাশি হচ্ছে অনেকের। যাদের হাঁপানি ও শ^াসকষ্ট আছে তারা কষ্টে ভুগছেন বেশি। সার্বক্ষণিক গরম কাপড়ে থাকতে হচ্ছে। শীতজনিত শ^াসকষ্টে কুড়িগ্রামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এই শীতে অনেকটা অসুবিধায় পড়েছে কৃষক। বোরো আবাদের এই সময়ে তীব্র শীতে জমিতে চারা রোপণ করা যাচ্ছে না। তারপরও অনেক কৃষক বোরো চারা রোপণ করছে। কৃষি বিভাগ অবশ্য বলছে জানুয়ারি মাস থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বোরো চার রোপণের সময়। তীব্র শীতের মধ্যে চারা রোপণ করলে ধানের শিকড়ের বাড়ন্ত অনেক কমে যায়। ঘন কুয়াশায় জমিতে যে আস্তরণ পড়ে তা কোল্ড ইনজুরি। বোরোর বীজতলা ও আলু রক্ষায় বীজতলা ঢেকে রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এতসবের পরও কৃষি বিভাগ কিছুটা স্বস্তির খবর দিয়েছে। শীতের আচরণ স্বাভাবিক থাকলে শীতকালীন ফসল গম, ভুট্টা, সরিষা, আলু ও চায়ের উৎপাদন ভাল হবে। শহরাঞ্চলে শীতের কাপড়ের বেচাকেনা বেড়েছে। বগুড়ার হকার্স মার্কেটে বেচাকেনা বেশি। এই মার্কেটে পুরাতন গরম কাপড়ের মধ্যে এমন সব কাপড় মেলে যা দেখে কেউ বলবে না এগুলো পুরনো। দামেও কম। শহরের অনেক লোক এখন হকার্স মার্কেটে যাচ্ছে। শীতের পোশাকে ছেলেরা স্যুট (কোট প্যান্ট), বাহারি জ্যাকেট পরছে। মেয়েরাও জ্যাকেট কার্ডিগান শাল পরছে।
×