ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্য জানুয়ারিতে বসছে পদ্মা সেতুর আরেক স্প্যান

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ৫ জানুয়ারি ২০১৯

 মধ্য জানুয়ারিতে বসছে পদ্মা সেতুর আরেক  স্প্যান

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর আরেকটি স্প্যান বসছে মধ্য জানুয়ারিতে। সেই লক্ষ্যে এখন চলছে সব প্রস্তুতি। ৩৬ ও ৩৭ নম্বর খুঁটিতে বসেছে এই ‘৬এফ’ নম্বর স্প্যানটি। ৩৬ নম্বর খুঁটিও এখন প্রস্তুত। প্রস্তুত ‘৬এফ’ নম্বর স্প্যান। স্প্যানটিও ফাইনাল রং করে ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজটিতে উঠানোর অপেক্ষায় রয়েছে। এখন বাকি শুধু নাব্য সঙ্কট। দিনরাত ড্রেজিং করে পদ্মা সেতুর চ্যানেলেও নাব্য ফিরিয়ে আনার চূড়ান্ত কাজ চলছে। আর তাই শুক্রবার সন্ধ্যায় সেতুর দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, সব ঠিকঠাক থাকলে মধ্য জানুয়ারিতে সেতুর আরেকটি স্প্যান খুঁটিতে উঠবে। এরপরই অল্প সময়ের মধ্যে পরপর উঠে যাবে আরও ৭টি স্প্যান। ইতোমধ্যেই সেতুর পাঁচটি স্প্যান স্থায়ীভাবে বসেছে তার সঙ্গেই এই স্প্যানটি বসছে। এছাড়াও মাওয়া প্রান্তে আরও একটি স্প্যান বসানো হয়েছে। তবে এটি আবার পাশের খুঁটিতে সরিয়ে নেয়া হবে। এদিকে সেতুর বড় চ্যালেঞ্জ খাঁজকাটা (ট্যাম) পাইল স্থাপনও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। গত ৮ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এই খাঁজকাটা তিনটি পাইল পুরোপুরি স্থাপন হয়ে গেছে। এছাড়াও আরও ৫টি পাইলের বটম সেকশন হয়েছে। সেতুর ৩১, ৩২ ও ৮ নম্বর খুঁটিতে এই পাইল বসছে। মূল পদ্মার ৮ নম্বর খুঁটিতে দুটি পাইলের বটম সেকশন বসেছে। আর ৩১ ও ৩২ নম্বর খুঁটিতে বসেছে ৩টি করে পাইল। এর মধ্যে আবার ৩টি পাইলের বটম সেকশনও সম্পন্ন হয়েছে। মূল পদ্মা সেতুর নদীতে ৪০টি খুঁটি হচ্ছে এর মধ্যে মোট পাইল বসেছে বা বসানো হচ্ছে ২৬২টি। তার মধ্যে ১১টি খুঁটিতে ৭৭টি ট্যাম পাইল। বাকি ১৮৫টি পাইল পুরোপুরি বসে গেছে। আর এই ৭৭টি পাইলও শীঘ্রই সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে দায়িত্বশীলরা জানিয়েছে। তাই সেতুর এখন আর কোন চ্যালেঞ্জ নেই। সেতুটি বাস্তাবায়ন এখন সময়ের বিষয় মাত্র। সেতুতে কর্মরত দায়িত্বশীল ও সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা হয়। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর সকলেই খুশি। কারণ সরকার বদল হলে এই সেতুর ভবিষ্যত কী হয়, তা নিয়ে অনেকের মধ্যে শঙ্কা ছিল। শেখ হাসিনা অনেক বড় সাফল্য এই পদ্মা সেতু, যা দেশের জন্য অনেক বড় একটি প্রাপ্তি। কিন্তু সরকার বদল হলে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নিয়ে কি হয় তা নিয়ে শঙ্কা কেটে গেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আবার নতুন সরকার আসছে এই আনন্দ পদ্মা সেতুতে বিশেষ আনন্দ লক্ষ্য করা গেছে। দায়িত্বশীল প্রকৌশলীদের কেউ কেউ জানান, পদ্মা সেতু এমন একটি প্রকল্প যার সঙ্গে পুরো দেশ ও জাতির সম্মান জড়িয়ে আছে। সাধারণ মানুষ তথা দেশপ্রেমিকরা তা সহজেই বুঝতে পারছেন। আর অন্য সরকার ক্ষমতায় আসলে এই সেতুর অগ্রযাত্রায় পথের কাটা হতে পারে, এমন কারণেও বিগত নির্বাচনে অনেকে নৌকায় ভোট দিয়েছে। মহাজোটের এই নিরঙ্কুশ বিজয়ের পেছনে পদ্মা সেতু বড় একটি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে বলে মনে করেন এই প্রকৌশলী। পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল কয়েক প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা হয়। সকলেই এক বাক্যে জানান, সেতুর কাজ এখন এম ধাপে রয়েছে, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটি বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে। পাইল স্থাপন ও খুঁটি নির্মাণ হচ্ছে বড় কাজ। সেই কাজগুলো অনেকাংশেই হয়ে গেছে। পদ্মায় তাকালেই এখন সেতু দৃশ্যমান হচ্ছে। পুরো সেতুটির একটি অবয়ব এখন একে একে স্প্যান বসবে। এছাড়া বসে যাওয়া স্প্যানের নিচের তলায় এখন রেলওয়ে স্লাব বসেছে। এরপরই বসবে ওপর তলায় বসবে রোডওয়ে স্লাব। মূল সেতুর কাজে যেমন অগ্রগতি। অগ্রগতি রয়েছে দু’পারের সংযোগ সেতুর (ভায়াডাক্ট) কাজেও । প্রায় তিন কিলোমিটার এই সংযোগ সেতুর খুঁটি উঠছে সমানে। যা সাদা চোখেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সেতুর অবয়ব। মূল সেতু নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীলগণ ঘুরে গেছেন প্রকল্প এলাকা। চীন থেকে আসা উচ্চ পর্যায়ের দলটি সরেজমিন পরিদর্শন এবং এই বিষয়ে বৈঠক করে গেছেন। দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করার ব্যাপারে তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা চলছে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সেতুটির কাজ এখন দ্রুত এগোবে যা বাস্তবেই দেখ মিলবে। কারণ যে সকল সমস্যা ছিল তা কেটে গেছে। এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আরও নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বৃদ্ধি করে মানসম্মতভাবে কাজ দ্রুত শেষ করার ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হয়েছে। চীন থেকে আসা কোম্পানিটির শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে এ নিয়ে সরকারের বৈঠকও হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে সেতুর কাজে গতি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানা গেছে। নদী শাসনের কাজ করছে চীনেরই আরেক প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন। তারাও নির্ধারিত কাজের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে আছে। নদী শাসনের কাজে আরও অগ্রগতির ব্যাপারেও তাগিদ দেয়া হয়েছে। এছাড়া, প্রকল্পের কাজ তদারকিতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশন সেতুটির মান ঠিক রেখে কাজ সম্পন্ন করার ব্যাপারে যথাযথ দায়িত্ব পালন করছেন। অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত পদ্মা সেতু নির্মাণের বিলম্বের কারণ হিসেবে সেতু বিভাগ চারটি কারণের কথা বলেছে। যেমন নদীর তলদেশের গভীরে নরম মাটির স্তর থাকায় সেতুর পিলার স্থাপনে সমস্যা, ২২টি পিলারের নতুন নক্সা প্রণয়ন। এগুলোর সবই এখন সমাধান হয়েছে। তাই সেতুর বাস্তবায়ন এখন সময়ের বিষয় মাত্র।
×