ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লক্ষ্য নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গীকার পূরণ

নৌপরিবহন খাতে এ্যাকশন প্ল্যান পূরণে কমিটি

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৩ জানুয়ারি ২০১৯

নৌপরিবহন খাতে এ্যাকশন প্ল্যান পূরণে কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচনী ইশতেহারে নৌপরিবহনখাতে জাতির জন্য করা অঙ্গীকার পূরণে এ্যাকশন প্লান করতে যাচ্ছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। বুধবার মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্মসচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিকে সরকারের নেয়া উদ্যোগ বাস্তবায়নে করণীয় নির্ধারণ করে আগামী ১৩ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সরকার আগামী মেয়াদে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খনন এবং মাতারবাড়িতে একটি সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনার কথা বলেছে ঘোষিত ইশতেহারে। এর আগেও সরকার ৫৪ নৌরুট খননের অঙ্গীকার করে। এছাড়া পায়রাতে একটি সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল। শতভাগ এখন বাস্তবায়ন না হলেও পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করা হয়েছে। পায়রা বন্দর নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আর্থিক সংস্থানে পিছিয়ে রয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আমলাতান্ত্রিক এসব জটিলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হলে দ্রুত এই বন্দর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এতে করে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (টিএ, টাস্কফোর্স) মনোজ কান্তি বড়ালকে আহ্বায়ক করে ওয়ার্কিং গ্রুপটি গঠন করা হয়েছে। ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্যরা হলেন যুগ্মসচিব (প্রশাসন) মোঃ রফিকুল ইসলাম খান, যুগ্মসচিব (চবক ও উন্নয়ন) আবদুছ ছাত্তার শেখ, যুগ্মসচিব (জাহাজ) মোঃ মুহিদুল ইসলাম এবং উপ-প্রধান মোঃ উবায়দুল হক। মনোজ কান্তি বড়াল এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের আগামী ১৩ জানুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন বিভাগ এই কাজগুলো করে থাকে। আমরা তাদের কাছ থেকে তথ্য এনে একটি কার্যকর কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে চাই। এজন্য কিছুই সময় প্রয়োজন হতে পারে। তিনি বলেন, গত দুই মেয়াদে নৌপরিবহনখাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কাজ হয়েছে। আশা করছি ভবিষ্যতেও একইভাবে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। এ্যাকশন প্ল্যান প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০, এসডিজি বাস্তবায়ন কৌশল ২০৩০, সরকারের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ), অবকাঠামো উন্নয়নে বৃহৎ প্রকল্পসহ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পর্যালোচনা ও বিবেচনায় নেয়া হবে। এতে করে সরকারের সামগ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে বিষয়টি সাংঘর্ষিক হবে না। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মাতারবাড়িকে ঘিরে সরকার একটি বিশদ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই পরিকল্পনায় সেখানে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের একটি কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া মাতারবাড়িতে দেশের প্রথম ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। আরও একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ কাজ চলছে। এছাড়া মাতারবাড়ি মহেশখালীতে একটি স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এখানে বিদ্যুত কেন্দ্রর জ্বালানি আমদানির জন্য বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল বিদ্যুত বিভাগের। যে বন্দরটি শুধু মাত্র কয়লা খালাস করার জন্য নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এখানে একটি সমুদ্র বন্দর নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করে। সরকার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবে সায় দেয়। এতে করে বহুমাত্রিক ব্যবহারের জন্য বন্দরটি নির্মাণ করার বিষয়ে একমত হয় সকলে। ইশতেহারে বলা হচ্ছে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশের চতুর্থ এই বন্দরের নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে। এছাড়া ইশতেহারে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে আভ্যন্তরীণ নৌপথগুলোর সংযোগ স্থাপন করার মাধ্যম আমদানি-রফতানি সুগম করা হবে। এজন্য আগামী মেয়াদে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খনন করা হবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাণিজ্যকে সহজতর করার লক্ষ্যে সামুদ্রিক বন্দরের সুবিধা আরও বাড়িয়ে ভারত পথে একে নেপাল-ভুটান পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হবে । অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বে-টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে বন্দরের সক্ষমতা ৪ গুণ বৃদ্ধি পাবে। ঢাকার চারপাশের ৪টি নদী-খালগুলোকে দূষণ ও দখলমুক্ত করে খননের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে এনে নদী তীরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির মাধ্যমে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কথাও বলা হয়েছে ইশতেহারে।
×