ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলা উৎসব শুরু ৪ জানুয়ারি

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮

  বাংলা উৎসব শুরু  ৪ জানুয়ারি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাতচল্লিশের দেশ বিভাগের রাজনৈতিক রোষানলে বিভক্ত হয় জাতিসত্তা। সেই বিভাজনে বিভক্ত হতে হয় একই ভাষাভাষী নাগরিকদের। সেই সুবাদে কাঁটাতারের পৃথক সীমানায় বসবাস বাংলা ভাষী জনগোষ্ঠীর। তবে ভাষার সেতুবন্ধে একই বৃত্তে মিলে যায় দুই দেশের সমভাষার মানুষেরা। দেশ পৃথক হলেও প্রাণের বাংলা ভাষায় প্রকাশ ঘটে জাতিসত্তার। বাংলা ভাষার সেই শেকড়কে উপজীব্য করে অনুষ্ঠিত হবে বাংলা উৎসব ২০১৯। সে উৎসবে এক মঞ্চে বাংলা গান গাইবেন বাংলাদেশ ও ভারতের কলকাতার কণ্ঠশিল্পীরা। সঙ্গে থাকবে দুই দেশের শ্রোতাপ্রিয় সঙ্গীতদল। আগামী ৪ জানুয়ারি থেকে কলকাতার নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে তিনদিনের এ উৎসব। বিকেল চারটায় উৎসব উদ্বোধন করবেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। উদ্বোধনী আয়োজনে জীবনকৃতি সম্মাননা প্রদান করা হবে দুই দেশের দুই বরেণ্য শিল্পীকে। তারা হলেন- ভারতের আরতি মুখোপাধ্যায় ও বাংলাদেশের সাবিনা ইয়াসমিন। যৌথভাবে এ উৎসবের আয়োজক বাংলাদেশের বেঙ্গল গ্রুপ ও কলকাতার বন্ধন ব্যাংক। দর্শনীর বিনিময়ে অনুষ্ঠিত এ সঙ্গীতাসরে সহযোগিতায় রয়েছে কলকাতার বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজ এবং নাথিং বিয়ন্ড সিনেমা। বাংলা উৎসব প্রসঙ্গে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, এ উৎসবের মাধ্যমে দুই বাংলার মাঝে সেতুবন্ধটা আরও দৃঢ় হবে। এছাড়া বাংলা গানের সামগ্রিকতায় এদেশের বাংলা সঙ্গীত ও শিল্পীদের প্রকৃত অবস্থানটি আমরা জানাতে চাই ভারতের শ্রোতাদের কাছে। রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের বাইরেও এদেশে বাংলা গানের বিকাশের ধারাটি আমরা তুলে ধরতে চাই এই মঞ্চে। বাংলা গানের খন্ডিত রূপের পরিবর্তে সামগ্রিকতাকে মেলা ধরা এ উৎসবে আমাদের অংশগ্রহণের অন্যতম উদ্দেশ। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে আমরাও যে বাংলা গানের উত্তরাধিকারকে ধারণ করি সেটার প্রকাশ ঘটবে এ উৎসবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। আমরা জানাতে চাই এই ভূখন্ডে রচিত হয়েছে দেশ-চেতনার শক্তিশালী সঙ্গীত। পাশাপাশি এ উৎসবের মাধ্যমে এদেশের শিল্পী ও তাদের সঙ্গীত সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পাবে ভারতের সঙ্গীতপ্রেমীরা। এ আয়োজন সফল হলে ভবিষ্যতে ভারতের শিল্পীদের এদেশে এনে দুই বাংলার শিল্পীদের সম্মিলনে বাংলাদেশে এ ধরনের সঙ্গীত উৎসবের আয়োজনের উদ্যোগ নেব আমরা। মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে তিনদিনের বাংলা উৎসবের সূচনা হবে ৪ জানুয়ারি। কলকাতার নজরুল মঞ্চে বিকেল চারটায় উৎসব উদ্বোধন করবেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। উদ্বোধনী আয়োজনে জীবনকৃতি সম্মাননা প্রদান করা হবে সাবিনা ইয়াসমিন ও আরতি মুখোপাধ্যায়কে। পরিবেশনা পর্বে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের গান শোনাবেন ভারতের লোপামুদ্রা মিত্র ও বাংলাদেশের রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। এদেশের বাপ্পা মজুমদার ও ফাহমিদা নবীর সঙ্গে আধুনিক বাংলা গানে শ্রোতার হৃদয় রাঙাবেন ওপার বাংলার শুভমিতা ও নচিকেতা চক্রবর্তী। বাংলা চলচ্চিত্রের গান শোনাবেন পশ্চিমবঙ্গের শিল্পী অনুপম রায়। উৎসবের দ্বিতীয় দিন ৫ জানুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত চলবে সঙ্গীতাসর। এদিন নবীন প্রতিভা হিসেবে পরিবেশনা উপস্থাপন করবেন কলকাতার শিল্পী আকাশ ভট্টাচার্য ও অঙ্কিতা এবং ঢাকার শিল্পী মোস্তাফিজুর রহমান তূর্য ও ডলি মন্ডল। লোকসঙ্গীত পরিবেশন করবেন করবেন গৌতম দাস বাউল। রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করবেন দুই দেশের দুই শিল্পী জয়তী চক্রবর্তী ও লাইসা আহমদ লিসা। পুরনো দিনের বাংলা গান গাইবেন ইফ্্ফাত আরা দেওয়ান। নজরুলসঙ্গীত পরিবেশন করবেন খায়রুল আনাম শাকিল ও ইন্দ্রানী সেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনাবেন অদিতি মহসিন ও বুলবুল ইসলাম। চন্দনা মজুমদারের লোকসঙ্গীতের সঙ্গে শ্রোতার অন্তরে ভাললাগার অনুভব ছড়াবে বাংলা ব্যান্ড চিরকুট। উৎসবের সমাপনী দিন ৬ জানুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টায় পরিবেশনা শুরু হয়ে চলবে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত। এদিনের পরিবেশনায় অংশ নেবে বাংলা ব্যান্ড চন্দ্রবিন্দু। বাংলা আধুনিক ও চলচ্চিত্রের গান শোনাবেন রূপঙ্কর। রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করবেন দুর্নিবার সাহা। আধুনিক গানের সঙ্গে চলচ্চিত্রের গানে সুররসিকদের হৃদয় উদ্দীপ্ত করবেন এন্ড্রু কিশোর, সামিনা চৌধুরী ও ইমন চক্রবর্তী। গোপাল বর্মণকে সঙ্গী করে তালবাদ্য পরিবেশন করবেন পন্ডিত বিক্রম ঘোষ। সম্মিলিতভাবে ঐতিহ্যবাহী তালবাদ্য উপস্থাপন করবেন মোঃ মনিরুজ্জামান, অভিষেক মল্লিক, সত্যজিৎ মুখার্জি ও দশরথ দাশ। সবশেষে রাগাশ্রয়ী সঙ্গীত পরিবেশন করবেন পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী। দর্শনীর বিনিময়ে অনুষ্ঠিত সঙ্গীতাসরটি ২০০, ৩০০ ও ৫০০ টাকার টিকেট সংগ্রহের মাধ্যমে উপভোগ করতেন পারবেন শ্রোতারা।
×