স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ভৈরব ও ময়মনসিংহে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। নোয়াখালীতে দুটি কেন্দ্রে গণ্ডগোল করে নির্বাচনী সামগ্রী লুটের ঘটনা ঘটেছে। সেগুলো পুলিশ উদ্ধারের চেষ্টা করছে। রবিবার সকালে রাজধানীর বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেয়ার পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি এসব কথা বলেন।
সারাদেশের ভোটগ্রহণ কেমন হচ্ছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, এটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি, ভোটের পূর্বে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছিলাম। আমাদের সঙ্গে যেসব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সহায়তা করেছে। তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা গ্রহণ করেছিলাম। তাতে করে এ পর্যন্ত যে খবর পেয়েছি, দুই-এক জায়গায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সমগ্র বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, শুধুমাত্র চট্টগ্রামে একটি কেন্দ্রে গণ্ডগোল হয়েছে। একটি কেন্দ্রে আমাদের পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। দুটি অস্ত্র লুট হয়েছে। ময়মনসিংহের একটি কেন্দ্রে আমাদের অস্ত্র লুট হয়েছে। আমাদের এক সদস্য আহত হয়েছেন। নোয়াখালীতে দুটি কেন্দ্রে গণ্ডগোলের চেষ্টা করে একটি কেন্দ্রের ব্যালট ও নির্বাচনী সামগ্রী লুট করে নিয়েছে। আমরা সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছি। এই কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া আর কোনও ঘটনা ঘটেনি। জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে সবাই ভোট দিচ্ছেন এই কেন্দ্রে (ভিকারুননিসা নূন স্কুল কেন্দ্রে)। ভারত, কানাডা ও নেপালের পর্যবেক্ষকরা এসেছিলেন। তাদের সঙ্গেও আমি কথা বলেছি, তারাও স্বীকার করেছেন, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ চলছে। আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরা হয়েছে বলে ড. কামাল হোসেনের এমন অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, এমন কোন অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। কারণ নির্বাচন শুরুর আগে বেশ কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। যেগুলো পূরণ করেই ভোটগ্রহণ শুরু হয়। কোথাও কোন পোলিং এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগও নেই। পোলিং এজেন্ট যারা কেন্দ্রে এসেছেন তাদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আমাদের। কিন্তু কেউ কেন্দ্রে না এলে, তাদের খুঁজে আনার দায়িত্ব আমাদের না। নির্বাচন পরবর্তী নিরাপত্তার বিষয়ে জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, নিরাপত্তা পরিকল্পনা নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচনপরবর্তী জোরদার করা হয়েছে। খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে। সবাই তারা নিজ নিজ প্রার্থীদের জয়ী করার চেষ্টা করছেন। কয়েকটি জায়গায় সংঘর্ষ হতে পারে। সেখানে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, আমরা সবকিছু শক্তভাবে পর্যেবেক্ষণ করছি। ইতোমধ্যে গুজব রটানো অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। গুজব রটানো সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়েছে। মিডিয়ার মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাতে চাই, আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু আপলোড হলে, যাচাই-বাছাই করে বিশ্বাস করবেন। কেননা, এ ধরনের গুজব সমাজে অতীতেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। ভবিষ্যতেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। পোলিং এজেন্টদের নির্বাচনের আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে বলে বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, মামলার এফআইআরে সব আসামির নাম থাকে না। তবে তদন্তে অনেক আসামির নাম আসে, তখন সেই আসামিদের গ্রেফতার করা হয়। তাই আমরা বলব কোন পোলিং এজেন্টকে গ্রেফতার করা হয়নি বা বের করে দেয়া হয়নি। এই কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টায় পরিবার সঙ্গে নিয়ে এসে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ভোট দেন। এ সময় তার সঙ্গে তার স্ত্রী আমিনা খালেক, দুই মেয়ে সৈয়দা আদিবা হোসেন ও সৈয়দা নাজিবা হোসেন। এরপর র্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ এই ভোটকেন্দ্রে এসে ভোটার ও পোলিং এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ ঘুরে দেখেন। পরে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-১৭ আসনে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল এ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিস্থিতি খুব ভাল। দেশবাসী শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছে। তিনি বলেন, শনিবার রাতে দু’টি ও রবিবার সকালে পাঁচটি ভোটকেন্দ্র দখলের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়, আমরা কেন্দ্রগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি। এখন সেখানে ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিচ্ছেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ বলেন, ভোট এলেই একটি গোষ্ঠী গাড়িতে আগুন ও পেট্রোল দেয়ার কাজ করে থাকে। এসব বিষয়ে ভোটের আগে ও পরে আমরা সজাগ আছি। যাতে কোন রকম সংঘাত না হয়।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোন ঘটনা নেই। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভোটারদের বাধাদান বা হুমকির অভিযোগ পাইনি। সকাল থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট চলছে। এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর তেজগাঁও কলেজ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, কাউন্টার টেররিজম প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম, কৃষ্ণপদ রায়, আব্দুল বাতেন প্রমুখ। ডিএমপি কমিশনার বলেন, রাজধানীর এক শ’র বেশি কেন্দ্র ঘুরে দেখেছি। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে, উৎসবমুখর পরিবেশে, বাধা ছাড়াই যার যার ভোট পছন্দের প্রার্থীকে দিচ্ছেন। আমরা পোলিং এজেন্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। স্বাধীনভাবে সবাই ভোট প্রদান করছে। শুধু ঢাকায় নয়, সারাদেশে ভোট উৎসব চলছে। আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, আমরা সমন্বিতভাবে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা নেই। এ ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স। প্রত্যেক ভোটার যেন নির্বিঘ্নে নিজের ভোটটা পছন্দের প্রার্থীকে দিতে পারেন। আতঙ্কিত হবেন না। এটা আমি সুনিশ্চিত করেছি। ডিএমপি কমিশনার জানান, ভোটগ্রহণের শেষ সময় পর্যন্ত এই নির্বাচনী অবস্থা বজায় রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। এ জন্য পুরো রাজধানীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে। কারও নিরাপত্তাহানি ঘটতে দেয়া হবে না। ঢাকা-৪ আসনের (ডেমরা-শ্যামপুর) বিএনপি প্রার্থী সালাউদ্দিন আহমেদের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে আইনী ব্যবস্থা গৃহীত হবে। এ জন্য ওয়ারি ডিভিশনের ডিসিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে অভিযোগ পুরোপুরি সত্য না হলেও ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।