ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৭১ টিভির ‘অপরাজেয় বাংলাদেশ’ আলোচনায় বক্তারা

তরুণরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেই ভোট দেবে ॥ আশা বিশিষ্টজনদের

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮

তরুণরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেই ভোট দেবে ॥ আশা বিশিষ্টজনদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কেমন হবে আগামী বাংলাদেশ সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এখন তরুণদেরও। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তি যারা উন্নত বাংলাদেশ গড়ার কাজ করছে। যারা একটি দরিদ্র দেশকে টেনে মধ্যম আয়ে পরিণত করে উন্নত দেশ গড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা দেশ চালাবে, নাকি একাত্তরে পরাজিত শক্তি এসে আবার দেশকে পিছিয়ে দিয়ে আফগান-পাকিস্তান বানাবে সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে। ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার তথা শেখ হাসিনার সরকার চায় দেশের বিশিষ্টজনরা। আজ রবিবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের একদিন আগে শনিবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে বাংলাদেশ সমাবেশ আয়োজিত ‘অপরাজেয় বাংলাদেশ’- শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে দেশের শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, বিচারপতি, আইনজীবী, নিরাপত্তা বিশ্লেষক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী, চিকিৎসক, কূটনীতিক, রাজনীতিক, উন্নয়নকর্মী, শহীদ সন্তানসহ আরও অনেকে অংশ নেন। যেখানে হানাহানির বাংলাদেশ নয় বরং একটি সুখী-সমৃদ্ধ ও সমতার রাষ্ট্র গড়তে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির প্রয়োজন বলেও জানানো হয়। এ নির্বাচনে নৌকার বিজয়ের আশা ব্যক্ত করেন তারা। এসময় গত কয়েক বছরে পাল্টে যাওয়া বাংলাদেশের নানা বিষয় নিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের নানা উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেন বক্তারা। জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ সমৃদ্ধিলাভ করেছে। দুর্নীতি দূর করতে পারলে আরও অনেক দূর যাওয়া যাবে। আমাদের সম্পদের সুষম বণ্টনের কথা এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশের কথা ভাবতে হবে, বলতে হবে। সম্প্রীতির পথে প্রধান অন্তরায় সাম্প্রদায়িক শক্তি। আমরা সাম্প্রদায়িকতা উচ্ছেদ করতে পারিনি। তাই দেখি যখনই সুযোগ পেয়েছে তখনই এই সাম্প্রদায়িক শক্তি ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন করেছে। তবে এ সরকার যেভাবে জঙ্গীবাদ দমন করেছে তার প্রশংসা করতেই হয়। সাম্প্রদায়িকতা নির্মূলের দায়িত্ব প্রশাসনের ওপর ছেড়ে দিলে হবে না, নাগরিক সমাজকেও দায়িত্ব নিতে হবে। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আরও বলেন, আমি বিশ^াস করি দেশের মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। যারা নারীর ক্ষমতা চায় না, সমতা চায় না দেশকে হানাহানির মধ্যে রাখে জনগণ তাদের রুখে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে অবস্থান নেবে। শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে বলেন, অনেক সময় নতুন প্রজন্ম আফসোস করে তারা যুদ্ধে অংশ নিতে পারে নিই। সেই যুদ্ধ আর হবে না, তবে আমি এই প্রজন্মকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধ হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে থেকে ভাল কাজ করার মাধ্যমে তোমাদের সেই স্বপ্নেরই বাস্তবায়ন হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল। আগামীকালের (রবিবার) নির্বাচনে আমরা সবাই ভোট দিয়ে আবর্জনামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. আতিউর রহমান সমাবেশে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তার বক্তব্যে উন্নয়নের রোডম্যাপ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারাকাত বলেন, আমরা যুদ্ধের মাধ্যমে যে দেশ পেয়েছি সেখানে বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক দেশ চেয়েছিলাম। আমি আশাবাদী যে কোন মানদ-ে দেশ এখন অনেক এগিয়ে। ভোট দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যে বাংলাদেশ গড়বে ভোট সেখানেই দিতে হবে। ’২১ সালের মধ্যে যে মধ্য আয়ের দেশ এনে দেবে, যারা ’৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ উপহার তাদের সঙ্গে থাকার আহ্বান করেন তিনি। অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ রবিবারের নির্বাচন অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, দেশকে ভালবাসতে হবে। আপনারা দেখবেন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দেশ নিয়ে একটি পরিকল্পনার কথা আছে যা অন্য দলের ইশতেহারে দেখা যায় না। আমি বলব বঙ্গবন্ধু দেশ ও দেশের মানুষকে যেভাবে ভালবেসেছেন তার কন্যা শেখ হাসিনাও সেভাবেই দেশ ও জাতিকে ভালবেসে কাজ করে যাচ্ছেন। তাই এই সরকারকে দেশের প্রয়োজনেই দরকার। সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, মানুষ সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। দেশের মানুষ এখন বেশ ভাল আছে। তারা শান্তিতে থাকতে চায়। একাত্তরের ঘাতক-দালাল-নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, দেশভাগের সময় সংখ্যালঘু ছিল ৩৫ ভাগ। সেসময় পাকিস্তান মৌলবাদের কারণে সংখ্যালঘুদের ওপর নানা নির্যাতন করত। নির্যাতনের কারণে দেশের সংখ্যালঘু কমেছে। এরপর ধাপে ধাপে কমতে কমতে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় সংখ্যালঘু ছিল ৮.২ ভাগ, যা গত ১০ বছরে বেড়ে হয়েছে ১০ ভাগ। এই যে সংখ্যালঘু বাড়ল এতেও প্রমাণিত হয় দেশের মানুষ ভাল আছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় সারাবিশে^ প্রশংসা তো আছেই। শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, নির্বাচনে পরাজিত হলে জামায়াত-বিএনপি ছেড়ে দেবে না। তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছোট করে দেখা যাবে না। জামায়াত-বিএনপি যদি কখনও ক্ষমতায় আসে তবে দেশ পিছিয়ে যাবে এবং আফগানিস্তানে পরিণত হবে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যেমন গার্মেন্টস শ্রমিকদের কথা ভাবেন তেমনি সাংবাদিকদের কথাও ভাবেন। তিনি সকল শ্রেণীপেশার মানুষের জন্য চিন্তা করেন। সম্প্রতি সাংবাদিকদের জন্য গঠন করা ওয়েজ বোর্ড এবং সাংবাদিক কল্যাণ তহবিলে ২০ কোটি টাকা দেয়ার কথাও উল্লেখ করে সরকারের প্রশংসা করেন তিনি। বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মান্নান বলেন, উচ্চ শিক্ষার এমন একটি দায়িত্বে আছি যেখান থেকে খুব কাছ থেকে শিক্ষার অবস্থা দেখেছি। শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এই মুহূর্তে বিশ^বিদ্যালয় লেভেলে দেশে ৩৮ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায় বলেন, অপূর্ব এক বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করছি। যেখানে নৌকা এক বড় জয় লাভ করবে। নারী নেত্রী এ্যারোমা দত্ত বলেন, ৩০ লাখ শহীদের রক্তে গড়া এ দেশ যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তার ভিত যেন শক্ত হয়। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও উন্নত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা যে উন্নয়নে আছি তা যেন অব্যাহত থাকে। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পিযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, রবিবার যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে আমি বলব সংখ্যালঘুরা যেন ভয়ে না থাকেন। তারা যেন ভোট দিতে পারেন। আমি বিশ^াস করি অতীতের মতো এবারও তারা নৌকাতেই ভোট দেবেন। দেশের মানুষ শান্তিতে থাকতে চাইলে নৌকা তথা শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, বর্তমান সরকার বিভিন্নভাবে সামাজিক সাপোর্ট দিচ্ছে। বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতাসহ নানাভাবে পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য কাজ করছে। সারাদেশ থেকে সন্ত্রাস দূর হয়ে শান্তির দেশ হচ্ছে। এ সরকার উন্নয়নে সবাইকে যুক্ত করেছে। দূরদর্শী চিন্তা থেকে বর্তমান সরকার কওমি মাদ্রাসাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সরকারের উন্নয়ন চলমান থাকতে এ সরকার দরকার আবারও। ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, দেশ চলমান অগ্রযাত্রা যেন থেমে না যায়, আপামর জনগণ সে চিন্তাই করবে। শহীদ বুদ্ধিজীবীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, আমরা এখনও দেখি বিএনপির নানা প্রোপাগা-া ছড়াচ্ছে। আমাদের তরুণদের চিন্তা করতে হবে কেমন বাংলাদেশ আমরা চাইÑ কার হাতে কোন আল বদর বাহিনীর হাতে দেশ তুলে দেব নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শক্তির সঙ্গে থাকব সে চিন্তা করে ভোট দিতে হবে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, যেসব তরুণ যুদ্ধে অংশ নিতে পারেনি বলে আক্ষেপ করে তাদের জন্য আক্ষেপ ঘোচানোর সময় এখন। কেননা, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি মাথাচাড়া দিয়েছে তা রুখে দিতে তরুণরাই পারবে ভূমিকা রাখতে। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা দেখেছি রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা দেয়ার সময় প্রত্যেক পরিবারের খোঁজ নিয়ে যাকে অর্থ দিলে পরিবারটি প্রকৃত উপকার পাবে তার হাতেই অর্থ তুলে দেয়া হয়েছে। একজন প্রধানমন্ত্রী এত সময় বের করে কিভাবে এসব কাজ করেন তা সত্যি অবিশ^াস্য। দেশের প্রতি ভালবাসা মানুষের প্রতি ভালবাসা না থাকলে বোধহয় সম্ভব নয়। সেই ভালবাসা বঙ্গবন্ধুর কন্যার মধ্যে আছে। একাত্তর টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সম্পাদক সামিয়া জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম, ইতিহাসবিদ সেয়দ আনোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম, সিনিয়র সাংবাদিক হারুন হাবিব, অধ্যাপক ডা. জিনাত হুদা অহিদ, অধ্যাপক মাহফুজা খানম,নাট্যকার মামুনুর রশীদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, ব্যারিস্টার স্বপ্নীল আল মাহাতাব প্রমুখ। উপস্থিত ব্যক্তিরা শেখ হাসিনা সরকারের নানা কর্মকা-ের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ সরকার আগামীর জন্য একটি উন্নত রাষ্ট্র গড়বে সে প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দিন এমন আয়োজনের জন্য বক্তারা সাধুবাদ জানান। বক্তারা বলেন, এই আয়োজন থেকে একটা পরিষ্কার বার্তা সবার কাছে পৌঁছে যাবে ‘কেমন বাংলাদেশ আমরা চাই’।
×