ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতা কাপের সেরা ফুটবলার

জিকোর চোখ এবার প্রিমিয়ার লীগে

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

জিকোর চোখ এবার প্রিমিয়ার লীগে

রুমেল খান ॥ স্বাধীনতা কাপ ফুটবল শেষ হয়েছে। দশম এই আসরে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রকে হারিয়ে নতুন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘরোয়া ফুটবলের নতুন শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বসুন্ধরা কিংস। দলকে শিরোপা জেতাতে সবচেয়ে বড় অবদান কোন ডিফেন্ডার-মিডফিল্ডার-ফরোয়ার্ডের নয়, বরং এক গোলরক্ষকের। এমন এক গোলরক্ষক, যিনি কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে মোট চারটি শট ঠেকান এবং পেনাল্টিতেও একটি গোল করেন এবং টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় বিবেচিত হন। হ্যাঁ, পাঠক নিশ্চয়ই চিনে ফেলেছেন আনিসুর রহমান জিকোকে। চকরিয়া উপজেলার দুলহাজরা ইউনিয়নের সুদর্শন এই গোলরক্ষক। যদিও শৈশবে খেলতেন স্ট্রাইকার পজিশনে এবং এলাকায় ভাগাভাগি করে। বাবা কখনই চাননি ছেলে ফুটবল খেলুক। কিন্তু ছেলে ঠিকই ফাঁকি দিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ফুটবল খেলে বেড়াতো। একদিন একটা টুর্নামেন্টে নিজ দলে গোলরক্ষক না থাকায় সবাই তাকে ঠেলেঠুলে দাঁড় করিয়ে দিল গোলপোস্টের নিচে। সেই থেকে গোলরক্ষকের ক্যারিয়ার আরম্ভ। ২০০৯ সালে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু। কক্সবাজার অনুর্ধ-১৬ ট্রায়াল দিয়ে উত্থান। ২০১৩ সালে কক্স সিটির হয়ে চ্যাম্পিয়নশিপ লীগ খেলেন। প্রথমে দ্বিতীয় ‘বি’ লীগে ফরাশগঞ্জের হয়ে খেলেন। এরপর ২০১৫ সালে মুক্তিযোদ্ধার জার্সি গায়ে জড়ান। তারপর চট্টগ্রাম আবাহনী, সাইফ স্পোর্টিং হয়ে বসুন্ধরা কিংসে নাম লেখান। স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সতীর্থদের সঙ্গে খুব বেশি আনন্দ উদযাপন করতে পারেননি জিকো। কেননা ওই রাতেই তিনি গ্রামের বাড়িতে চলে যান। টুর্নামেন্টসেরা খেলোয়াড় হিসেবে অনুভূতি কেমন? জিকোর উত্তর, ‘অনেক কষ্ট করছি। তাই কষ্টের ফল পেয়েছি। দেশের বাইরে ছিলাম। কাতারে অনেক গরমের মধ্যে ট্রেনিং করেছি, জিম করেছি। গত মার্চে লাওস ম্যাচের আগে ক্যাম্প চলার সময় ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালের গোলরক্ষক কোচ আমাকে অনেক কঠিন অনুশীলন করিয়েছিলেন। কোরিয়াতেও অনেকদিন ছিলাম। গোলরক্ষক হয়েও সেরা খেলোয়াড় হতে পেরে অবশ্যই ভাল লাগছে। বিদেশী এবং দেশের ভাল ভাল তারকা খেলোয়াড় থাকার পরও তাদের মধ্যে আমি সেরা খেলোয়াড় হয়েছি। এটা অনেক বড় পাওয়া।’ কোয়ার্টারে ও সেমির ম্যাচে টাইব্রেকারে দুটি ম্যাচেই জয়ের নায়ক ছিলেন জিকো। ফাইনালে ম্যাচটা গড়িয়েছিল অতিরিক্ত সময়ে। তখন কী আবারও টাইব্রেকারে যাবার মানসিক প্রস্তুতি বা কোন ভয় ছিল জিকোর? ‘না, ভয় ছিল না। বরং আত্মবিশ্বাস ছিল টাইব্রেকারে গেলে আবারও ভাল করব এবং এটাও ভেবেছি সেভ করার সঙ্গে প্রয়োজনে নিজেও টাইব্রেকারে শট নেব’ জিকোর জবাব। অনেকেই মনে করেন রাসেলের আশরাফুল ইসলাম রানা গোলরক্ষক হিসেবে জিকোর চেয়ে এগিয়ে। ফলে একবারও কি মনে হয়নি টাইব্রেকারে গেলে রানার কাছে হারতে হতে পারে? এবার হয়তো হেরে যাব? জিকোর ভাষ্য, ‘না, এমনটা মনে আসেনি। সেমির ম্যাচেও তো আবাহনীর সোহেল ভাই ছিল। তিনিও তো জাতীয় দলের এক নম্বর গোলরক্ষক। আসলে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল নিজের সেরাটা মেলে ধরব এবং কিছু শট আটকে দেব।। সেই সঙ্গে সতীর্থদের আস্থাও ছিল। বিপক্ষ টিমের গোলরক্ষককে এ রকম কিছু মনে হয়নি। আমি আমার জায়গায় সেরা।’ এখনও জাতীয় দলের জার্সিতে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়নি জিকো। তবে কোরিয়া ও কাতারে প্রস্তুতি ম্যাচের সময় গোলরক্ষক হিসেবে খেলেছিলেন। জাতীয় দলে সোহেল এবং রানার পরে জিকোকেই বিবেচনা করা হয়। স্বাধীনতা কাপে ভাল খেলার পর জিকো কি জাতীয় দলের প্রথম গোলরক্ষক হিসেবে ম্যাচে খেলতে পারবেন? সেই সম্ভাবনা-আশা কতটা? ‘আসলে এই টুর্নামেন্ট এবং ফেডারেশন কাপ আমার ভবিষ্যতের জন্য ওপরে ওঠার সিঁড়ি হিসেবে কাজ করবে। কারণ এই দুই আসরেই অনেক ভালমানের বিদেশী খেলেছে। অনেক ম্যাচই ছিল হাইভোল্টেজের। যদিও আগে এত আত্মবিশ্বাস পেতাম না। তবে এখন অনেক আত্মবিশ্বাসী যে তাদের সঙ্গে লড়াই করতে পারব। যদিও আমি এখনও অনেক জুনিয়র। তারপরও আশা করি ভবিষ্যতে আমাকেও বিবেচনা করা হবে। আর যদি কখনও শুরুর একাদশে খেলার সুযোগ পাই তাহলে অবশ্যই ভাল করার চেষ্টা করব।’ ফেডারেশন কাপ জিততে পারলে বসুন্ধরা এএফসি কাপে খেলতে পারতো। সেটা না হওয়ার আক্ষেপ এখনও পোড়াচ্ছে জিকোকে। এখন তার লক্ষ্য আসন্ন প্রিমিয়ার লীগে চ্যাম্পিয়ন করানো বসুন্ধরাকে।
×