ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন, অভিযোগ স্থানীয় রাজনীতিকদের

ইরাকে হঠাৎ ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

ইরাকে হঠাৎ ট্রাম্প

মার্কিন সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হতে অনির্ধারিত এক সফরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প বুধবার আকস্মিক ইরাক সফর করেন। বড়দিন উপলক্ষে সেনাবাহিনীকে তাদের সাফল্য, ত্যাগ ও সেবার প্রতি স্বীকৃতি জানাতে আকস্মিক সফরে তারা ইরাকে পৌঁছান। বাগদাদের বিমানঘাঁটিতে নেমেই সেনাদের কাজের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানান ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হিসেবে সংঘাত পীড়িত কোন এলাকায় এটাই তার প্রথম সফর। তবে ট্রাম্পের এ সফর ইরাকের রাজনীতিকদের ক্ষুব্ধ করেছে। বিবিসি, আল জাজিরা ও ভয়েস অব আমেরিকা। আনবার প্রদেশের আইন আল আসাদ বিমান ঘাঁটিতে সেনাদের বড়দিনের শুভেচ্ছা জানাতে ইরাক যান ট্রাম্প ও মেলানিয়া। সেখানে তারা ঘণ্টা তিনেক অবস্থান করেন। হোয়াইট হাউস জানায়, গভীর রাতে বিমানযোগে বাগদাদ যান প্রেসিডেন্ট। সেনাবাহিনীর প্রতি ভাষণে ট্রাম্প সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের সমর্থন করে বলেন, আইএস এখন পরাস্ত হওয়ার পথে এবং তাদের খিলাফত বিলুপ্ত হয়েছে, তাই এখন সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার হবে একটি সঠিক পদক্ষেপ। তবে আপাতত ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহারের কোন পরিকল্পনা নেই বলে জানান তিনি। ইরাকে বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে। আইএস জঙ্গীদের বিপক্ষে যুদ্ধে ইরাক সরকারকে কৌশলগত সহায়তা দেন এসব সৈন্য। ইরাক সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী আদেল আব্দুল মাহদির সঙ্গে একটি বৈঠকের কথা থাকলেও তা বাতিল করে বাগদাদ। টেলিফোনে মাহদির সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি ওয়াশিংটন সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিসের পদত্যাগের কয়েক দিন পর এই সফর করলেন ট্রাম্প। সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে ট্রাম্পের ঘোষণার এক দিন পরই ম্যাটিসের পক্ষ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত আসে। ম্যাটিসের পদত্যাগের মূলে রয়েছে ট্রাম্পের সঙ্গে তার মতভেদ। গত মঙ্গলবার সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশপত্রে স্বাক্ষর করেছেন বিদায়ী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ম্যাটিস। এদিকে ট্রাম্পের অঘোষিত সফরকে ইরাকের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন দেশটির রাজনীতিক ও মিলিশিয়া নেতারা। এ ঘটনায় পার্লামেন্টের জরুরী অধিবেশন দাবি করেছেন শিয়াপন্থী ইসলাহ পার্লামেন্টারি ব্লকের নেতা সাবাহ আল সাদি। এ ঘটনাকে দেশের সার্বভৌমত্বের ভয়ানক লঙ্ঘন এবং আগ্রাসী কর্মকা- হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি। ভবিষ্যতে এ ধরনের আগ্রাসন বন্ধ করতে পার্লামেন্টকে আলোচনার আহ্বান জানান এ রাজনীতিক। ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনবিরোধী শিয়া নেতা মুক্তাদা আল সদরের নেতৃত্বাধীন ইসলাহ পার্টির হয়ে পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করা সাদি ট্রাম্পের অঘোষিত সফরের সমালোচনা করে বলেন, ট্রাম্পকে তার নিজের সীমারেখা সম্পর্কে জানা উচিত। আল সদর ২০১১ সাল পর্যন্ত মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সহিংস আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরে তিনি ইরাকী জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতিতে ফেরেন। তার জোটে কমিউনিস্ট ও অসাম্প্রদায়িক ইরাকীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তারা ইরাকে যেকোন ধরনের বিদেশী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্র বা ইরান যেই হোক। পার্লামেন্টে ইসলাহ পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বী এবং ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া নেতা হাদি আল-আমিরির নেতৃত্বাধীন বিনা ব্লকের পক্ষ থেকেও ট্রাম্পের এ সফর নিয়ে তাদের আপত্তির কথা জানানো হয়েছে। বিনা ব্লকের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের এ সফর কূটনৈতিক রীতিনীতির সুস্পষ্ট ও ভয়াবহ লঙ্ঘন। এর মধ্য দিয়ে তিনি ইরাক সরকারের প্রতি তাচ্ছিল্য দেখিয়েছেন।
×