ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্রোতের বিপরীতে জাহিদুর

প্রকাশিত: ০৭:১৯, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮

স্রোতের বিপরীতে জাহিদুর

সময়টা ২০১১ সাল। সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনা পেরিয়ে একজন তরুণ স্রোতের বিপরীতে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। বেছে নিলেন এমন এক প্রতিকূল পথ, যেখানে সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার সম্ভাবনাই বেশি। নিজের পরিশ্রম এবং এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে পরের বছরগুলোতে হয়ে উঠলেন সফল উদ্যোক্তা। একটা অনলাইন শপ পরিণত হলো একটা ব্র্যান্ডে, একটা রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানে। সম্প্রতি ‘ইমিরপুর.কম’ এর প্রতিষ্ঠাতা জাহিদুর রহমান খান তার সাফল্য এবং সাফল্যের পেছনের গল্পগুলো নিয়ে মুখোমুখি হয়েছিলেন ডি-প্রজন্মের। সাক্ষাতকারে তার এই পথচলার গল্প তুলে ধরেছেনÑ সারতাজ আলীম ডি-প্রজন্ম : ‘ইমিরপুর.কম’ এর যাত্রা শুরু কীভাবে? জাহিদুর : বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশনের পর প্রথমে একটা কমার্স ফার্মে চাকরি শুরু করি। কিছুদিন পর জুনিয়র কয়েকজন কর্মী নিয়োগের দায়িত্ব পাই। একটা পদের জন্য শত শত আবেদন দেখে আমার মনে হয় আমি যদি কিছু করতে পারতাম। চাকরি ছেড়ে প্রবাসী এক বন্ধুর কাছ থেকে কিছু টাকা ঋণ নিয়ে শুরু হয় ‘ইমিরপুর’ এর যাত্রা। কিন্তু কিছুদিন পরই আবার অর্থ সঙ্কট। আবার চাকরিতে ফিরে যাই। বেতনের পুরো টাকাটাই বিনিয়োগ করতে থাকি। সকালে চাকরি করে রাতে নিজের প্রতিষ্ঠানের কাজ নিয়ে পড়ে থাকতাম। ২০১৬ তে এসে ‘ইমিরপুর’ বর্তমান রূপ পায়। ঢাকা শহরের গ-ি পেরিয়ে সারা দেশেই আমাদের পণ্য ছড়িয়ে যায়। ২০১৮ সালে এসে প্রথম আমরা ৩য় পক্ষের মাধ্যমে রফতানি করি। ডি-প্রজন্ম : উদ্যোক্তা হতে চাইলেন কেন? জাহিদুর : বাংলাদেশের শ্রমবাজারে শ্রমের ব্যাপক যোগান থাকলেও কাজের সুযোগ ছিল খুবই কম। অর্থনীতির ছাত্র হিসেবে বিষয়টি খুব ভালভাবেই অনুধাবন করতাম। এই বাস্তবতা থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রা শুরু। ডি-প্রজন্ম : এখন পর্যন্ত কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে? জাহিদুর : উদ্যোক্তা হওয়ার বড় প্রতিবন্ধকতা সামাজিক এবং পারিবারিক। দ্বিতীয়ত; উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ পাবার সুবিধা কম। প্রায় সব উদ্যোক্তারই মূলধন সঙ্কট থাকে। সহজ শর্তে ঋণ পাওয়াটা খুবই দরকার। ডি-প্রজন্ম : আপনার ব্যবসায়িক পরিধি কীভাবে বেড়েছে? জাহিদুর : প্রথমে আমরা অনলাইনে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাক বিক্রি করতাম, সেটাও ঢাকার মধ্যে। কিন্তু গুণগতমান বৃদ্ধির জন্য আমরা নিজেরাই কারখানা স্থাপন করি। খুচরা, পাইকারি ছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের টিশার্ট তৈরি করে থাকি। দেশের বাইরে রফতানিও শুরু হয়েছে কিছুদিন ধরে। সবমিলে বলতে পারি গ্রাহকের সন্তুষ্টিই আমাদের পরিধি বাড়িয়েছে। ডি-প্রজন্ম : আপনার মতে একজন সফল উদ্যোক্তার সংজ্ঞা কী? জাহিদুর : ঝুঁকি নেয়ার মানসিকতা থাকা, দূরদৃষ্টি এবং প্রতিবন্ধকতায় ধৈর্যধারণ করা। এছাড়াও আমি কেন উদ্যোক্তা হব এ ব্যাপারে নিজের দৃঢ় ধারণা থাকা উচিত। ডি-প্রজন্ম : ‘ইমিরপুর-এ বর্তমানে কত মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে? জাহিদুর : খণ্ডকালীন কর্মীসহ ইমিরপুর পরিবারে সদস্য ৩১ জন। ডি-প্রজন্ম : নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী? জাহিদুর : নিজের ভাললাগার জায়গা থেকে কাজ করা খুবই জরুরী। যা নিয়ে আমি উদ্যোক্তা হতে চাই সেটা নিয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরী। আর দুর্দিনে টিকে থাকার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবেই। ডি-প্রজন্ম : উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশে কেমন সম্ভাবনা দেখছেন? জাহিদুর : সম্ভাবনা ব্যাপক। বর্তমানে আমাদের অর্থনৈতিক বিনিয়োগ দরকার। যারা মান রক্ষা করে ভাল সেবা দেবে তাদের সাফল্য নিশ্চিত। ডি-প্রজন্ম : তারুণ্যের কাছে কী প্রত্যাশা করেন? জাহিদুর : শুধু চাকরির পেছনে না ঘুরে উদ্যোক্তা হয়ে উঠুক। নিজের যোগ্যতায় মাথা তুলে দাঁড়াক। দেশের কর্মশক্তিকে ব্যবহার করার দরজা উন্মুক্ত করতে ভূমিকা রাখুক- প্রত্যাশা এটাই। ডি-প্রজন্ম : কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান? জাহিদুর : সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। মাটির নিচে খুব বেশি সম্পদ না থাকলেও কর্মশক্তিকে সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করে বিশ্বে নিজের জায়গা সুসংহত করুক। নিজের দেশকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে দেখতে কে না চায়।
×