ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নেত্রকোনা

পাঁচ আসনেই নৌকার পালে হাওয়া

প্রকাশিত: ০৮:০৩, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮

পাঁচ আসনেই নৌকার পালে হাওয়া

সঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা ॥ জেলার পাঁচটি আসনে নৌকার পালে জোর হাওয়া লাগতে শুরু করেছে। নৌকার প্রার্থীদের পক্ষে একাট্টা হয়ে কাজ করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এদিকে প্রচার-গণসংযোগে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন ধানের শীষের প্রার্থীরা। কোন কোন এলাকায় তাদের দেখাই মিলছে না। জানা গেছে, নেত্রকোনার পাঁচটি আসনে মোট ২৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তবে মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতা হচ্ছে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যেই। অন্য দলগুলোর মধ্যে সিপিবির প্রার্থীদের কিছুটা প্রচার আছে। বাকিদের খুব একটা সাড়া-শব্দ নেই। কিছু কিছু দলের প্রার্থী ভোটারদের কাছে এখনও পরিচিতই হতে পারেননি। জানা গেছে, নেত্রকোনা-১ আসনে (কলমাকান্দা- দুর্গাপুর) প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন পাঁচজন প্রার্থী। এদের মধ্যে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মাঠ চাঙ্গা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ‘পারসোনাল এইড’ হিসেবে কর্মরত জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মানু মজুমদার। তিনি বর্তমান এমপি ছবি বিশ্বাসের ভগ্নিপতি এবং প্রতিরোধ যোদ্ধা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক। প্রথমবারের মতো নির্বাচনী মাঠে নামলেও দুই উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ের সব নেতাকর্মীই একাট্টা হয়ে কাজ করছেন তার জন্য। প্রচারে তিনি বেশ এগিয়ে রয়েছেন। এ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন এ তরুণ আইনজীবী। তার জয় নিশ্চিত করতে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরাও অনেকটা মরিয়া। এ আসনের অন্য তিন প্রার্থী হলেন: স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) সাবেক এমপি মোশতাক আহমেদ রুহী (আপেল), সিপিবির আলকাছ উদ্দিন মীর (কাস্তে) ও ইসলামী আন্দোলনের মামুনুর রশিদ (হাতপাখা)। নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক এমপি আশরাফ আলী খান খসরু। তার মনোনয়ন প্রাপ্তিতে খুশি দলটির শতভাগ নেতাকর্মী। জেলা সদরের এই আসনটি কোন অবস্থায়ই হাতছাড়া করতে চায় না আওয়ামী লীগ। তাই দলীয় নেতাকর্মীরা কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গণসংযোগ করছেন। খসরু নিজেও বিরামহীন ছুটে যাচ্ছেন ভোটারদের দোরগোড়ায়। এখানে তার পক্ষে রীতিমতো গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দলের পাশাপাশি স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও একাট্টা হয়েছেন তার পক্ষে। ওদিকে নৌকার গণজোয়ারের মধ্যে পড়ে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন ধানের শীষের প্রার্থী ডাঃ আনোয়ারুল হক। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক এবারই প্রথম মনোনয়ন পান। বেশিরভাগ এলাকায় তিনি এখনও পোস্টারই লাগাতে পারেননি। মাইকিং-গণসংযোগেও পিছিয়ে। এ আসনের অপর চার প্রার্থী হলেন: সিপিবির মোশতাক আহমেদ (কাস্তে), ইসলামী আন্দোলনের খোরশেদ আলী (হাতপাখা), জাকের পার্টির বরকত উল্লাহ (গোলাপ ফুল) ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সজীব সরকার রতন (কোদাল)। নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনেও নৌকার পক্ষে রীতিমতো গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এখানে এবারই প্রথম নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও ’৯০-এর গণ-আন্দোলনের নেতা অসীম কুমার উকিল। হেভিওয়েট এ প্রার্থীকে নিয়ে পুরো চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তারা অসীম কুমার উকিল ও তার স্ত্রী অধ্যাপিকা অপু উকিলকে নিয়ে দিনরাত গণসংযোগ ও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে ধানের শীষের প্রার্থী ড. রফিকুল ইসলাম খান হিলালীর গণসংযোগ ও প্রচার একেবারেই কম। কোন কোন এলাকায় তিনি এখনও যাননি। কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি হিলালী নবম সংসদ নির্বাচনেও প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছিলেন। কিন্তু জয়ী হতে পারেননি। অপর চার প্রার্থী হলেন: জাতীয় পার্টির জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া (লাঙ্গল), সিপিবির আনোয়ার হাসান (কাস্তে), ইসলামী ঐক্যজোটের এহতেশামুল সারোয়ার (মিনার), ইসলামী আন্দোলনের জাকির হোসেন (হাতপাখা)। নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরি) আসনে এবার তিন নারী প্রার্থীর লড়াই হচ্ছে। তাদের মধ্যে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান এমপি রেবেকা মমিন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল মমিনের স্ত্রী। পরপর দু’বার এমপি হয়েছেন তিনি। পরিচ্ছন্ন ইমেজের প্রার্থী হিসেবে তার বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এবারও তাকে নিয়ে একাট্টা। আসনটি ধরে রাখতে তারা মরিয়া। তবে অন্য আসনগুলোর তুলনায় ধানের শীষের প্রার্থী সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন এখানে। এ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের স্ত্রী তাহমিনা জামান শ্রাবণী। এ নির্বাচনী এলাকার অন্তর্গত মদন উপজেলাটি বাবরের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। মোহনগঞ্জেও বিএনপির ভাল ভোট রয়েছে। তাই বাবরের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে তার স্ত্রী শ্রাবণী শেষ পর্যন্ত কঠিন লড়াইয়ে অবতীর্ণ হচ্ছেন- এমনটাই ধারণা করছেন স্থানীয়রা। আরেক নারী প্রার্থী হলেন সিপিবির কেন্দ্রীয় সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য ও গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়নের নেত্রী জলি তালুকদার (কাস্তে)। তিনিও বেশ প্রচার চালাচ্ছেন। এ আসনের আরেক প্রার্থী হলেন ইসলামী আন্দোলনের মোফাজ্জল হোসেন (হাতপাখা)। নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনেও নৌকার পালে জোর হাওয়া বইছে। এখানে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা ও বর্তমান এমপি ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীরপ্রতীক। কর্নেল তাহেরের ভাই বেলাল এ পর্যন্ত দুইবার এমপি হয়েছেন। এবারও তার জয়ের বিষয়ে মরিয়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে দিনরাত গণসংযোগ ও প্রচার চালাচ্ছেন তিনি। অপরদিকে ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নেত্রকোনা সরকারী কলেজের সাবেক ভিপি আবু তাহের তালুকদার। এবারই প্রথম মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। বেলালের তুলনায় তারও প্রচার-গণসংযোগ কম। এ আসনের অপর তিন প্রার্থী হলেন: ইসলামী আন্দোলনের শামীম হোসেন (হাতপাখা), মুসলিম লীগের এমআর মাসুদ (হারিকেন) ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ওয়াহাব হামিদী (খেজুর গাছ)।
×