ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কোমর বেঁধে মাঠে

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮

কোমর বেঁধে মাঠে

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ একাদশ সংসদ নির্বাচনে যশোরে বড় জয়ের আশায় কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ। আর অস্তিত্ব রক্ষা জন্য ভোটে লড়ছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট। নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীদের মধ্যেই হবে। এখানে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। আর ঘুরে দাঁড়াতে চাচ্ছে বিএনপি। ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচন থেকে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত (ছয়টি সংসদ নির্বাচন) পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভোটে অধিকাংশ যশোরের ছয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বড় জয় পেয়েছে। শুধুমাত্র ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জোটের বড় জয় ছিল। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার আভাস মিলছে। উত্তাপও ছড়াচ্ছে ভোটের মাঠে। সর্বশেষ ছয় সংসদীয় নির্বাচনে যশোর-১ (শার্শা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৪ বার বিজয়ী হয়েছেন। আর দুইবার বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের তবিবর রহমান সরদার, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির মফিকুল হাসান তৃপ্তি, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন আওয়ামী লীগের তবিবর রহমান সরদার, ২০০১ সালে বিএনপির আলী কদর, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দিন নির্বাচিত হন। এই আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দিন (নৌকা) ও বিএনপির মফিকুল হাসান তৃপ্তির (ধানের শীষ) মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে চারবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী, দুইবার স্বতন্ত্র (জামায়াত) ও জামায়াতের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এরমধ্যে ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি স্বতন্ত্র (জামায়াত) মকবুল হোসেন, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, ২০০১ সালে জামায়াতের আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদাৎ হুসাইন, ২০০৮ সালের আওয়ামী লীগের মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মনিরুল ইসলাম নির্বাচিত হন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনে সাত প্রার্থী রয়েছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মেজর জেনারেল (অব) মোঃ নাসির উদ্দিন (নৌকা) ও বিএনপির আবু সাঈদ মোহাম্মদ শাহাদাৎ হুসাইন (ধানের শীষ) লড়াই হবে। যশোর-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ চারবার ও বিএনপির প্রার্থী দুইবার বিজয়ী হয়েছে। এরমধ্যে ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের রওশন আলী, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির তরিকুল ইসলাম, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন আওয়ামী লীগের আলী রেজা রাজু, ২০০১ সালের বিএনপির তরিকুল ইসলাম, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের খালেদুর রহমান টিটো ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের কাজী নাবিল আহমেদ বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ছয় প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কাজী নাবিল আহমেদ (নৌকা) ও বিএনপি অনিন্দ্য ইসলাম অমিত (ধানের শীষ)-এর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। যশোর-৪ (বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলা ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চারবার ও বিএনপি ও জোটের শরিক দুইবার নির্বাচিত হয়েছে। এরমধ্যে ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের শাহ্ হাদিউজ্জামান, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির নজরুল ইসলাম, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন আওয়ামী লীগের শাহ হাদিউজ্জামান, ২০০১ সালে বিএনপি জোটের এমএম আমিন উদ্দিন (জাপা-নাফি), ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের রণজিৎ কুমার রায় নির্বাচিত হন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের রণজিৎ কুমার রায় (নৌকা) ও বিএনপির টিএস আইয়ুব (ধানের শীষ)-এর মূল লড়াই হবে। যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে আওয়ামী লীগ তিনটি, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী একটি ও বিএনপি এবং জোটের শরিক দুটি নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। এরমধ্যে ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের খান টিপু সুলতান, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে বিএনপি আফসার আহমেদ সিদ্দিকী, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খান টিপু সুলতান, ২০০১ সালের নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি ওয়াক্কাস, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খান টিপু সুলতান ও ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) স্বপন ভট্টাচার্য নির্বাচিত হন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ৮ প্রার্থী মাঠে রয়েছে। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের স্বপন ভট্টাচার্য্য (নৌকা) ও বিএনপি জোটের মুহাম্মদ ওয়াককাস (ধানের শীষ)-এর লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে চারবার আওয়ামী লীগ ও দুইবার জামায়াতের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে জামায়াতের মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ আওয়ামী লীগের এএসএইচকে সাদেক, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের শেখ আবদুল ওহাব ও ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইসামত আরা সাদেক নির্বাচিত হন। এই আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে পাঁচ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ইসমাত আরা সাদেক (নৌকা) ও বিএনপির আবুল হোসেন আজাদ (ধানের শীষ)-এর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এ প্রসঙ্গে যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেরুল হক সাবু বলেন, নির্বাচন রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রভাবিত না করলে জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটলে ছয় আসনেই ধানের শীষের প্রার্থী জয়ী হবে। চ্যালেঞ্জ হিসেবেই আমরা ভোটে অংশ নিয়েছি। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে আমরা ভোট করছি। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ ছয় আসনেই নৌকার বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। জনগণের ভোটেই নৌকার জয় হবে। হুমকি-ধমকি কিংবা প্রশাসনের কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হবে না। অতীতেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার রেকর্ড রয়েছে আওয়ামী লীগের।
×